ঈদ ছুটিতে খোলা হাসপাতালের জরুরি ও ইনডোর সেবা
৫ জুন ২০১৯ ১৫:০২
ঢাকা: বছর ঘুরে আসা ঈদে সবাই যখন পরিবার নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে তখন বরাবরের মতোই সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা। অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ঈদের ছুটিতেও তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
ঈদের ছুটিতে বরাবরের মতই সার্বক্ষণিক জরুরি সেবা চালু রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ঈদে সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যান্য ছুটির দিনে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহায়ক স্টাফরা দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের চিকিৎসকরা জানান, ঈদের সময়ে রোগীর সংখ্যা হাসপাতালগুলোতে কম থাকে। সেসব বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই এবারে হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ছুটিকালীন সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের জরুরি বিভাগ ও আন্তঃবিভাগ সার্বক্ষণিক চালু থাকবে বলে নির্দেশ দিয়েছে। অধিদফতর জানিয়েছে, সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য সহায়ক স্টাফ (যেমন, ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার) দায়িত্ব পালন করবেন। একইসঙ্গে জরুরি চিকিৎসা সেবার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য বিভাগের (প্যাথলজি, কার্ডিওগ্রাফি, রেডিওলজি ইত্যাদি) কার্যক্রম চলবে। কেবল বিভাগীয় শহরগুলোতেই নয়, বিশেষ নির্দেশ রয়েছে জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিও।
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আউটডোরে (ঈদের দিন ছাড়া) সার্ভিস সীমিত আকারে (সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত) খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে অধিদফতর। সেখানে জরুরি বিভাগ, আন্তঃবিভাগ এবং অস্ত্রোপচার কক্ষে পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা রাখতেও বলা হয়েছে।
মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছুটিকালীন সব স্তরের প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান স্টেশনে থাকবেন। তিনি ছুটিতে থাকলে উপযুক্ত ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে হবে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্টেশনে থাকবেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার সারাদেশের উৎসব ছুটিকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সমন্বয় করবে বলেও জানান তিনি। একইসঙ্গে,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় হাসপাতালে আসা রোগী, কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, হাসপাতাল ও যন্ত্রপাতির নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ঈদের ছুটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যাল হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের জরুরি ও ইনডোর সেবা চালু আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানিয়েছেন, ঈদের তিনদিনের ছুটিতে জরুরি বিভাগ চালু থাকবে। শুধু ঈদের দিনে আউটডোর বন্ধ থাকবে।
চট্রগ্রাম বিভাগের সব সরকারি হাসপাতালে কেবল ঈদের দিন আউটডোর বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির । সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ঈদের দিন কেবল আউটডোর বন্ধ থাকবে। তবে তার আগে পরে দুইদিনই আউটডোর খোলা থাকবে যদিও সেটা সীমিত আকারে। শুধু এর পর থেকে রুটিন অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা চলবে। যদিও সবাই একটু দ্বিধাতে রয়েছে কারন ঈদের ছুটিটা বেশ কয়েকদিন বেড়েছে অন্যান্য ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে। তবে চিকিৎসকদের জন্য সেটা প্রযোজ্য হবে না, সব ইমার্জেন্সি খোলা থাকবে।
এদিকে, প্রথম বারের মতো ঈদের ছুটিতে চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা জানিয়ে তিনি বলেন,ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক চিকিৎসকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। কারণ এ সময়টায় সব দোকান বন্ধ থাকে, খাবার পাওয়া যায় না। যারা জরুরি দায়িত্ব পালন করছেন তাদের খাবারের সমস্যা থাকলে এটা মানবিকতার পর্যায়ে আসলে থাকে না। সেজন্যই তিনদিনের এই আয়োজন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রি জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ১২ টি বেড নিয়ে ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টার চালু করা হয়েছে কয়েকদিন আগে। সেখানে আইসিইউ, এইচডিইউসহ অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। সব ধরণের চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে এখানে-আমাদের খুব শক্তিশালী একটি ইউনিট এটি। খুব সহায়ক ভুমিকা পালন করছে। এছাড়াও, ক্যাজুয়েলিটি অবজারভেশন রয়েছে, যেখানে একটি ‘মাইনর ওটি’ ও রয়েছে। যারা হাত পা ভেঙ্গে বা কেটে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনায় আহত হয়ে আসবে তাদেরকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দীন বলেন, এর বাইরে মেডিকেল ইমার্জেন্সি অবজারভেশন রয়েছে, সেখানে চিকিৎসক, নার্সরা কাজ করেছে। গাইনি বিভাগ, পেডিয়াট্রিক কনসালটেন্সি বিভাগসহ বেশ কিছু বিভাগে জরুরি বিভাগ রয়েছে। এছাড়াও, এক্সরে, সিটিস্ক্যান, আল্ট্রাসাউন্ডসহ, ইসিজি-আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছি। রয়েছে ৬টা ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটার, সঙ্গে রয়েছে প্রি এবং পোস্ট অপারেটিভ কক্ষ রয়েছে যেখানে দশজন করে রোগী রাখা যাবে, বলেন । এছাড়া নিউরোসার্জারি এবং জেনারেল সার্জারি চালু থাকবে।
সবমিলিয়ে ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট কেয়ার চালু রয়েছে এবং ঈদের ছুটিতে যেখানে চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করবেন। কেবলমাত্র ঈদের দিন আউটডোর সীমিত আকারে খোলা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ২৪ ঘন্টা জরুরি সেবাদানের জন্য প্রস্তুত আছি ।
তবে হাসপাতালে এই ছুটির সময়ের আগ পর্যন্ত চার হাজারের বেশি রোগী ছিল তার মধ্যে অনেকেই চলে গিয়েছেন। যারা রয়েছেন তারা যেন সঠিক চিকিৎসাটা পান, সে বিষয়ে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার নাহিদুজ্জামান রিমন সারাবাংলাকে বলেন, ঈদের এ সময়টাতে রোগী সাধারণ সময়ের চেয়ে একটু কম।আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি। জরুরি প্রয়োজনে ছুটিতে থাকা যে কোনও চিকিৎসক হাসপাতালে যাবেন , বলেন ডা. নাহিদুজ্জামান রিমন।
অপরদিকে, জাতীয় অর্থোপেটিক হাসপাতাল ও পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল) এর মেডিকেল অফিসার ডা. শুভ প্রসাদ দাস সারাবাংলাকে বলেন, রোগীর সংখ্যা কমে গেলেও ঈদের সময়ে সাধারণত আউটডোরে ১৬০ থেকে ২০০ এবং রাতে ৫০ থেকে ৭০ জনের মতো রোগী আসেন। এছাড়া ভর্তি হওয়া রোগীও থাকে। আর চিকিৎসকের সংখ্যা দিন রাতে মিলিয়ে ১০ জনের মতো থাকেন। যদিও অন্যান্য সুপারভাইজার চিকিৎসকরা (অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক) জরুরি প্রয়োজন হলে হাসপাতালে এসে উপস্থিত হন। তাদের তদারকিতেই আমরা কাজ করি।
অন্য সময়ের চেয়ে খুব বেশি রোগী আসে না মন্তব্য করে ডা. শুভ প্রসাদ দাস বলেন, তবে যারা আসেন সেসব রোগীরা খুব খারাপ অবস্থা নিয়েই আসেন, নয়তো এই সময়ে কেউ হাসপাতালে আসতে চান না।
ঈদ উপলক্ষে চারদিনের ডিউটি রোস্টার করা হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে এ রোস্টার চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। এছাড়াও ঈদের সময়টাতে যার যার বিভাগের চিকিৎসকরা নিজ দায়িত্বেই হাসপাতালে এসে রোগীদের দেখে যান। তাই ছুটির সময়ে রোগীর কোনও ভোগান্তি হবে না,বলেন ডা. শুভ ।
সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ