ঘরে বসেই কাটছে ‘পানসে’ ঈদের ছুটি
৬ জুন ২০১৯ ১৮:০১
ঢাকা: ঈদ মানেই আনন্দ— কে না জানে! জীবন বাজি রেখে তাই সেই আনন্দ উদযাপন করতে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমায় রাজধানীর কর্মজীবী মানুষ। এরপরও ঢাকার স্থানীয়রাসহ রাজধানীবাসীর বড় একটি অংশই ঈদ করার জন্য থেকে যায় রাজধানীতে। এ সময় রাস্তাঘাট থাকে অনেকটাই ফাঁকা। তাই ঈদের ছুটি মানেই রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল। তবে এবার ঢাকায় ঈদ যেন ‘পানসে’। এমনিতেই কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির বাগড়া, তার ওপর রয়েছে বিনোদন কেন্দ্রের অভাব। ফলে ঢাকাবাসী এবার ঘরে বসেই ঈদের ছুটিতে অলস সময় পার করছে।
ঈদের ছুটি না নিয়ে যারা রাজধানীতে আছেন, তারা বলছেন, ঈদের ছুটির কয়েকটি দিনই তারা একটু আয়েশ করে ঢাকা শহরটি ঘুরে ফিরে দেখার সুযোগ পান। বৃষ্টির বাধায় এবারে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া, ঢাকায় এমনিতেই বিনোদন কেন্দ্রের স্বল্পতা রয়েছে। এর মধ্যে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের জন্য শিশু পার্কও বন্ধ। ফলে বের হওয়ার সুযোগ পেলেও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে মুখ গোমড়া করে থাকতে হচ্ছে তাদের।
বুধবার (৫ জুন) ঈদের দিন ভোর থেকেই রাজধানীতে বৃষ্টি শুরু হয়। সকালে ঈদ জামাতে যেতেও দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। কেউ বৃষ্টিতে ভিজে, কেউ আধা ভেজা অবস্থায় পৌঁছান ঈদগাহে। তবে বেশিরভাগ মানুষই মসজিদগুলোতে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
ঈদের দিন বৃষ্টির কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বজনদের বাসায় বা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর কথা থাকলেও অনেকেই বের হতে পারেননি। ফলে ঘরে শুয়ে-বসে, আড্ডা দিয়েই অলস সময় পার করতে হয়েছে তাদের। বৃষ্টি উপেক্ষা করেও কেউ কেউ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছুটে গেছেন। কিন্তু রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে গিয়েও স্বস্তিতে ছিলেন না তারা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরে কথা হয় সূত্রাপুরের বাসিন্দা রমজান আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতি ঈদেই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হন। বৃষ্টির কারণে গতকাল তিনি বের হতে পারেননি।
রমজান আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুরান ঢাকার কোথাও বিনোদন কেন্দ্র নেই। একমাত্র ভিক্টোরিয়া পার্কও বন্ধ হয়ে আছে উন্নয়ন কাজের জন্য। বুড়িগঙ্গার ধারে তো পরিবেশসম্মত তেমন কিছু গড়ে ওঠেনি। গতকাল (বুধবার) বৃষ্টি না থাকলে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দূরে কোথাও যাওয়া যেত। প্রতিবার ঈদে পুরান ঢাকার কিছু কিছু জায়গায় মেলা বসত। এবার তাও বসেনি। সব মিলিয়ে ঘরে বসেই অলস সময় পার করতে হয়েছে।’
আজ সকাল থেকেই আকাশ পরিষ্কার থাকলেও বের হওয়ার ইচ্ছা নেই রমজান আলীর। বলেন, আজ আর কোথাও বের হওয়ার ইচ্ছা নেই। রিকশা ভাড়া বেশি, বাসে উঠলেও ভাড়া বেশি নিচ্ছে। তাছাড়া যাওয়ার মতো কোনো জায়গাও নেই। শাহবাগের শিশু পার্কও বন্ধ। তাই ছেলে-মেয়ে এবারের ঈদ একেবারই ফ্যাকাশে হচ্ছে।
সেগুনবাগিচার চাকরিজীবী আফরোজ খান মুকুল। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে বের হতে পারিনি। বের হয়ে যাবই বা কোথায়! শিশু পার্কে যাওয়া যেত, শুনলাম, সেটাও বন্ধ। বাচ্চাদের নিয়ে যাবটা কোথায় আর ওরা খেলবেই বা কোথায়?’ শিশুদের জন্য ঢাকা দিন দিন অনুপযোগী হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মিরপুরের বাসিন্দা জলি আক্তার ও তার স্বামী তাহমীদ হোসেন শান্ত বলেন, ‘বৃষ্টিতে বের হওয়া হয়নি। প্রতিবার ঈদে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাওয়া হয়। এবারে যাইনি। চিড়িয়াখানায় তেমন কিছু নেই। কেবলমাত্র মন ভরে হাঁটা যায়। সেই রাস্তাও বৃষ্টির কারণে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে।’
তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায়। ঈদের দিন বৃষ্টি থাকলেও কাকভেজা হয়েই এসেছিলেন অনেকে। আর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টি না থাকায় নারী-পুরুষ ও শিশুদের ঢল নেমেছে যেন এখানে। বিশাল খোলা মাঠে সারি সারি কাঁশবন আর পরিকল্পিত লেকের পাশে মানুষ প্রাণ ভরে হেঁটে বেড়াচ্ছে। দর্শনার্থীদের আনাগোনায় চটপটি, ফুচকাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের পসরাও বসেছে রাস্তার ধারের দোকানে দোকানে। সেগুলোতে ভিড়ও কম নয়।
এদিকে, গতকাল হাতিরঝিলে বেড়াতে এসে অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরেছেন। তবে বৃহস্পতিবার হাতিরঝিলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা অনেকটা বাড়তে দেখা গেছে। কেউ হাঁটছে, কেউ বসে গল্প করছে, আবার কাউকে কাউকে সেলফি তোলায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। অন্যদিকে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত তিনশ ফিট সড়কের আশেপাশেও দর্শনার্থীরা ভিড় জমিয়েছেন।
রাজধানীতে বিনোদন কেন্দ্রের অভাব; উৎসবেও মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না— এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থপতি ড. মোবাশ্বের হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। বিশেষ করে এখন ছেলে-মেয়েদের বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। উৎসবগুলোতে একটু বের হবে, তারও কোনো উপায় নেই। সিটি করপোরেশনের উচিত বেশি বেশি বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করা। সরকারেরও উচিত রাজধানীবাসীর বিনোদনের জন্য বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে নজর দেওয়া।’
সারাবাংলা/ইউজে/প্রমা/টিআর