পর্যটকে মুখরিত পাহাড়কন্য বান্দরবান
৭ জুন ২০১৯ ১০:৪৭
বান্দরবান: পাহাড়কন্যা বান্দরবানে সারা বছর প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় লেগেই থাকে। ঈদ বা যেকোনো ছুটি উপলক্ষে সেই ভিড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এবারের ঈদেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবারও পর্যটন স্পটগুলো মুখরিত হয়ে উঠছে পর্যটকদের আগমনে। ঈদের টানা ছুটিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা ছুটে আসছেন পাহাড়, ঝরনা আর সবুজ প্রকৃতির টানে।
বান্দরবানের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঈদ পর্যটকদের ভিড়ে যেন পা ফেলাই দায়। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারের ঈদে টানা ছুটি থাকার কারণে ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছেন পর্যটকরা।
প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির মাঝে একটু হারিয়ে যেতে বান্দরবানে আগমন ঘটে ভ্রমণ পিপাসু দেশি-বিদেশি হাজারও পর্যটকের। পাহাড়ের চূড়ায় গড়ে তোলা নীলাচল এবং নীলগিরি পর্যটন স্পটে অতিথিপরায়ণ মেঘ ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে পর্যটকদের শরীর। নীলাচল ও নীলগিরি পর্যটন স্পটে গেলে দেখা যায়, মেঘ দল বেঁধে উড়ে চলে যাচ্ছে অজানার উদ্দেশে। আর শৈলপ্রপাত, রিঝুক ঝরনা ও বগা লেকের স্বচ্ছ শীতল পানিতে গা ভাসাচ্ছেন হাজারও পর্যটক। এছাড়াও পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের মিতালী ও লুকোচুরি মুগ্ধ করছে তাদের।
পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় বান্দরবানে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন স্পট। এ জেলায় রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বিজয়, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেউকারাডংসহ অসংখ্য পাহাড়। রয়েছে বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক, নীলগিরি; যেখানে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এছাড়াও রিঝুক ঝরনা নিজস্ব গতিতে সব মৌসুমেই থাকে সচল।
এছাড়া জেলা সদরেই রয়েছে মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিক লেক, স্বর্ণ জাদি। পাহাড় থেকে শহরের সৌন্দর্য বিমোহিত করে পর্যটকদের। বৌদ্ধ জাদি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থান হলেও পাহাড়ের ওপর সুন্দর কারুকাজ ও স্বর্ণাভরণে তৈরি হওয়ায় এটিও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্পট হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে।
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বিজয়, স্থানীয়ভাবে যেটি তাজিন ডং নামেই পরিচিত। একই সড়কে ১৭ কিলোমিটার গেলেই দেখা মিলবে বগা লেকের। থানচি উপজেলায় রয়েছে তিন্দু বড় পাথর, রিমাক্রী জলপ্রপাত, নাফাকুম, আমিয়াকুমসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান; যেগুলোতে সারাবছরই লেগে থাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়।
এছাড়াও এই জেলায় মারমা, ত্রিপুরা, মুরুং, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমি, খেয়াং, পাংখোয়া, চাকমা, চাক, লুসাই, বাঙ্গালীসহ ১২টি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। দেশের অন্য কোনো জেলায় এত ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বসতিই নেই। তাদের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্রও ঘুরতে আসা পর্যটকদের মন উৎফুল্ল করে তোলে।
এদিকে, বিপুলসংখ্যক পর্যটকরা যেন স্থানীয়ভাবে কোনো সমস্যার মুখে না পড়েন, সে বিষয়েও সজাগ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন। বান্দরবানের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার জানান, পর্যটকরা যেন নিরাপদে ও সাচ্ছন্দে আনন্দ ভ্রমণ করতে পারেন, সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রুমা-থানচি এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তার কোনো সমস্যা হবে না। পর্যটক হয়রানির কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সারাবাংলা/টিআর/প্রমা