শাকিবের সিনেমাও হলে টানতে পারছে না চট্টগ্রামের দর্শকদের
৭ জুন ২০১৯ ১৪:১৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রতিবছর ঈদুল ফিতরের সময় হালের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানের সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে টানে দর্শকদের। বছরজুড়ে চট্টগ্রামের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে খরা থাকলেও ঈদের সময় চিত্র কিছুটা পাল্টে যায়। শাকিবের টানে হলে দর্শকের উপস্থিতি বাড়ে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। এবার চট্টগ্রামের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে শাকিবের সিনেমাও তেমনভাবে সাড়া জাগাতে পারছে না।
দর্শক টানতে না পারায় হতাশ চট্টগ্রামের একটি মাল্টিমিডিয়া সিনেপ্লেক্সসহ চারটি সিনেমা হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। চারটি প্রেক্ষাগৃহ হচ্ছে— নগরীর কে সি দে রোডে ‘সিনেমা প্যালেস’, কাজীর দেউড়ি এলাকায় ‘আলমাস’ ও ‘দিনার’ এবং ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় ফিনলে স্কয়ারে ‘সিলভার স্ক্রিন’।
শাকিব খান ও বুবলী অভিনীত ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমাটি চলছে আলমাস সিনেমা হলে। সিনেমা প্যালেসে চলছে শাকিব-ববি অভিনীত ‘নোলক’। সিনেপ্লেক্সের প্লাটিনাম স্ক্রিনে ‘নোলক’ ছবিটির পাশাপাশি অনন্য মামুনের গল্পনির্ভর চলচ্চিত্র ‘আবার বসন্ত’ প্রদর্শিত হচ্ছে। দিনার সিনেমা হলে চলছে ‘নয়া মাস্তান’ নামে একটি পুরনো চলচ্চিত্র।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত আলমাস সিনেমা হলে গিয়ে দেখা যায়, দর্শক সমাগম একেবারেই নগণ্য। মাঝে মাঝে দু’তিন জন আসছেন, আর টিকেট কিনে প্রবেশ করছেন প্রেক্ষাগৃহে। দর্শকদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ।
চান্দগাঁও এলাকা থেকে যাওয়া পোশাককর্মী তাসফিয়া আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শাকিব খানের ছবি ছাড়া দেখি না। শাকিবের ছবি আসছে দেখে ছোট বোন আর খালাত ভাইকে নিয়ে ছবি দেখতে এসেছি।’
সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. সোহাগও আলমাসে গেছেন পাসওয়ার্ড ছবিটি দেখতে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তিন বন্ধু মিলে ছবি দেখতে এসেছি। ঈদের সময় গাড়ি চালাচ্ছি না। তাই সিনেমা দেখতে এলাম।’
‘নোলক’ ছবিটি দেখে বের হওয়া চাক্তাই এলাকার পান দোকানি ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছবি ভালো হয়েছে। কিন্তু পর্দা খুবই ঝাপসা। অন্ধকার পর্দায় ছবি দেখতে চোখে সমস্যা হচ্ছিল। সিটগুলোও ভালো না।’
আলমাস সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক সাবের আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সিট আছে ৯৬৭টি। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) প্রথমবার শাকিব খানের নোলক ছবিটি দেখিয়েছি। শাকিব খানের ছবি ঈদে মুক্তি পেলে সাধারণত হাউজফুল দর্শক হয়। আজও ভেবেছিলাম হাউজফুলই হবে। কিন্তু এবার আমাদের কপাল খারাপ। সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি শো মিলে হাজারখানেক দর্শক পেয়েছি।’
সাবের আহমেদ জানান, সরকারি নির্দেশে ঈদের দিন ইমপ্রেস টেলিফিল্মের গল্পনির্ভর ছবি ‘আলোয় ভুবন ভরা’ প্রদর্শিত হয়েছে। সেখানে দর্শক সমাগম একেবারেই হয়নি। শাকিব খানের ছবি দেখার জন্যও আশানুরূপ দর্শক না আসায় সিনেমা হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে।
আলমাস সিনেমা হল ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ৪৭ বছর ধরে সিনেমা হলের সঙ্গে আছি। বাংলা সিনেমার এমন দুরবস্থা আগে দেখিনি। ঈদের সময়ও যদি দর্শক না আসে, তাহলে আর কী বলতে পারি! তিন বছর আগে আয়নাবাজি সিনেমা দেখার জন্য সবচেয়ে বেশি দর্শক হয়েছিল। এবার শাকিব খানের ছবি নিয়ে যে প্রচার হয়েছে, তাতে আমাদের আশাও ছিল বেশি। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পড়ব ভাবিনি।’
আলমাসের সঙ্গেই লাগোয়া মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আরেকটি সিনেমা হল দিনার। সেখানে পুরনো চলচ্চিত্র ‘নয়া মাস্তান’ চলছে। সেখানে দর্শক সমাগম আলমাসের চেয়েও কম।
দিনারের কাউন্টার ব্যবস্থাপক এস এম মুজিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘দিনে তিনটি শো করি। দর্শক ১০০ জনও হয় না। নতুন ছবি এনে পোষাতে পারব না। তাই পুরনো ছবিই লাগিয়েছি।’
বোয়ালখালীর গোমদণ্ডী থেকে রেস্টুরেন্টের মেসিয়ার কিশোর বয়সী মো. সাইফুদ্দিন গেছেন বান্ধবী নিয়ে দিনার সিনেমা হলে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাঝে মাঝে দিনারে এসে সিনেমা দেখি। বন্ধুবান্ধব নিয়ে দেখি। ঈদের ছুটিতেও ভাবলাম একটা সিনেমা দেখে আসি।’
চট্টগ্রামের প্রথম মাল্টিমিডিয়া প্রেক্ষাগৃহ ‘সিলভার স্ক্রিন’। এখানে দু’টি স্ক্রিন, প্লাটিনাম ও টাইটেনিয়ামে ছবি প্রদর্শিত হয়। প্লাটিনামে আসন আছে ৭২টি। সেখানে বাংলা সিনেমা চলে। টাইটেনিয়ামে চলে ইংরেজি সিনেমা।
সিলভার স্ক্রিনের ম্যানেজার (অপারেশন) সাঈদা ফাতিমা জাহান দীবা সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্লাটিনাম স্ক্রিনে চারটি শো থাকে। ঈদের দিন থেকে আমরা দুই শো-তে ‘নোলক’ এবং বাকি দুই শো-তে ‘আবার বসন্ত’ দেখাচ্ছি। ঈদের দিন তো দর্শক একেবারে ছিল না বললেই চলে। বৃহস্পতিবার দর্শক কিছুটা বেড়েছে। গড়ে ৩০-৩২ জন দর্শক থাকছে। তবে শাকিব খানের নোলকের চেয়ে আবার বসন্ত চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য দর্শক সমাগম বেশি হচ্ছে।’
‘ভেবেছিলাম, ঈদের দিন থেকেই অনেক বেশি দর্শক পাব। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় সম্ভবত দর্শক তেমন আসেনি। ধীরে ধীরে হয়তো দর্শক বাড়বে,’— বলেন দীবা।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর/পিএ