ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে নেতাদের বাসায় নওফেল
৭ জুন ২০১৯ ১৬:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের প্রবীণ ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাসায় গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বৃহস্পতিবার ( ৬ জুন) গভীর রাত পর্যন্ত অন্তঃত চারজন নেতার বাসায় নওফেল নিজেই যান।
সাংগঠনিক পদ-পদবিতে সিনিয়র-জুনিয়রের ভেদাভেদ ঘুচিয়ে নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের রীতি চালু করেছিলেন নওফেলের বাবা প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। বাবার পথ অনুসরণ করে নওফেলের সৌজন্যতারও প্রশংসা করেছেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা।
বুধবার (০৫ জুন) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন নওফেল। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তিনি বাসায় নেতাকর্মীদের সময় দেন। রাতে নওফেল বের হন নেতাদের বাসার উদ্দেশে। সাথে ছিলেন ছোট ভাই বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ এবং অর্থ সম্পাদক সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের বাসায় গিয়ে তিনি শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নওফেল যান নগরীর নন্দনকাননে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাসায়। স্বাধীনতা পদক পাওয়া এই মুক্তিযোদ্ধা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিককে সালাম করে দোয়া নেন উপমন্ত্রী নওফেল। এসময় শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সাংগঠনিক ও মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে মোশাররফের সঙ্গে পরামর্শও করেন তিনি।
নওফেলের সঙ্গে যাওয়া নেতারা জানান, মোশাররফের বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি যান নগরীর আন্দরকিল্লায় আ জ ম নাছির উদ্দিনের বাসায়। জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গনে ঈদের নামাজে এক কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন তারা। সেসময় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হলেও নিজ থেকেই আবার মেয়রের বাসায় যান নওফেল। বাসায় নওফেলকে পেয়ে মেয়র খুশি হন বলেও জানিয়েছেন নেতারা।
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নওফেলের বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিপরীত মেরুতে ছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। তবে বাবার সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব থাকলেও ছেলে নওফেল সেটা ধরে রাখেননি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হওয়া নওফেলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন নাছিরও।
মেয়রের বাসা থেকে বেরিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নওফেল যান নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে জহিরুল আলম দোভাষের বাসায়। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন দোভাষ। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে মহিউদ্দিনের দূরত্ব তৈরি হলেও চারবারের কাউন্সিলর দোভাষ মহিউদ্দিনকে আঁকড়ে ছিলেন। বাসায় পেয়ে নওফেলকে বুকে জড়িয়ে ধরে দোভাষ আবেগাপ্লুত হন বলে জানিয়েছেন তার সঙ্গে যাওয়া নেতারা।
এরপর রাত পৌনে ১২টায় নওফেল যান নগরীর মোহরায় আবদুচ ছালামের বাসায়। ছালামের মাকে সালাম করে দোয়া নেন। ছালামের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেন নওফেল।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদদের অবস্থা এমন যে, কেউ সাংগঠনিক পদ-পদবিতে একটু উপরে উঠে গেলে কিংবা নির্বাহী কোনো দায়িত্ব পেলে, পদ-পদবিহীন নেতাদের কাছে টেনে নেওয়াকে অযোগ্যতা ভাবেন। স্বাভাবিক সৌজন্যতাও তখন তাদের কাছে আশা করা যায় না। সেক্ষেত্রে নওফেল তার বাবার মতোই ব্যতিক্রমী কিছু করেছেন। এটা প্রশংসার যোগ্য।’
জানতে চাইলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আমি যাঁদের বাসায় গিয়েছি, তাদের রাজনীতি এবং বয়সের তুলনায় আমি অনেক কনিষ্ঠ। তাঁরা সবাই বয়োজ্যেষ্ঠ বর্ষীয়ান পলিটিশিয়ান। বাসায় গিয়ে তাঁদের ঈদের শুভেচ্ছা জানানোটা স্বাভাবিক শিষ্টাচারের মধ্যেই পড়ে। নিজেকে বড়ো ভাবা, বড়দের অসম্মান করা- এই রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আমাদের সৌজন্যতাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’
চট্টগ্রাম নগরীর টানা ১৭ বছরের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে নওফেল ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান। একাদশ সংসদ নির্বাচনে কোতোয়ালী আসন থেকে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তরুণ এই সংসদ সদস্য উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদে।
সারাবাংলা/আরডি/ এনএইচ