Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঈদের ছুটিতে চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে ভিড়


৮ জুন ২০১৯ ০৬:৫২

অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে আজ ঢাকা চিড়িয়াখানায়

ঢাকা: ঈদের তৃতীয় দিন (শুক্রবার) রাজধানীবাসী ভিড় জমায় ঢাকার বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় ও বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকেই এদিন মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরতে আসেন।

চিড়িয়াখানায় ঢোকার মুখেই প্রচন্ড ভিড় দেখা যায়। গেটের সামনেই নানা বয়সী মানুষ ও গাড়ির দীর্ঘ সারি। এর ফলে চিড়িয়াখানায় ঢুকতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে অনেককেই।

চিড়িয়াখানার ভেতরেও দেখা যায় দর্শনার্থীদের ভিড়। তবে ভিড় থাকলেও লোকজন বেশ আনন্দ নিয়েই ঘুরে দেখেছেন এক প্রাণীর খাঁচা থেকে আরেক প্রাণীর খাঁচা।

সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় বানরের খাঁচার সামনে। মূলত শিশু-কিশোররাই ভিড় জমায় এখানে। তারা নানাভাবে বানরদের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা চালায়। কেউ কেউ খাঁচার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বানরদের খাবার দিতেও চেষ্টা করে। এত মানুষকে একসঙ্গে দেখে খাঁচার ভেতরে গোটা দশেক বানর প্রথমে ভড়কে গেলেও পরে লাফালাফি করে আনন্দ দিয়েছে দর্শনার্থীদের।

পাশেই বক ও সমগোত্রীয় পাখিদের খাঁচার সামনেও দেখা যায় একই চিত্র।

মানুষের উৎসাহ বানর ও বকদের নাড়া দিয়ে গেলেও খুব একটা সাড়া মেলেনি বাঘ ও সিংহের তরফ থেকে। দর্শনার্থীরা নানাভাবে চেষ্টা করেও খাঁচার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা বাঘ ও সিংহকে জাগাতে পারেননি।

এতে মন ভেঙে যায় চিড়িয়াখানায় আসা অনেক শিশু ও কিশোরের। কিছুতেই বাঘমামার ঘুম না ভাঙায় কেঁদে ফেলে মায়ের সঙ্গে ঘুরতে আসা নয় বছরের জারিন আফরোজ। তার অভিযোগ সিসিমপুরের বাঘ ‘হালুম’ তার সাথে কথা বললেও সত্যিকারের বাঘ কেন কথা বলল না। জারিনের মা জানালো, মেয়েকে বাঘ দেখানোর জন্যই চিড়িয়াখানায় নিয়ে এসেছেন। এখন বাঘ ঘুমিয়ে থাকায় মেয়ে তাকে বলেছে, সে আর কখনও ‘হালুমে’র সঙ্গেও কথা বলবে না।

বিজ্ঞাপন

বাঘের আচরণে অভিমান জমলেও চিড়িয়াখানার অন্যান্য অংশের পরিবেশ ও সৌন্দর্য নিয়ে সন্তুষ্ট জারিন।

অন্যদিকে, ময়ূরের খাঁচার সামনে চোখে পড়ে মুগ্ধ দৃষ্টির শিশুদের। আকাশ কিছুটা মেঘলা থাকায় অনেক ময়ূরকেই পেখম মেলতে দেখা যায়। পাশেই ময়না, নীল ঘুঘু ও কালো ভালুক দেখেও মুগ্ধ হয়েছে নানা বয়সী মানুষ।

ভিড় ছিল হরিণের খাঁচার সামনেও। তবে গাধার জন্য রাখা তিনটি খাঁচার সামনে মানুষের ভিড় ছিল কম। অনেক দর্শনার্থী অভিযোগ করেন, অন্যান্য প্রাণী কম থাকার কারণেই তিনটি খাঁচায় গাধা রাখা হয়েছে। এমনকি একটি খাঁচায় দেখা যায় ঝুটিওয়ালা কবুতর।

পুরান ঢাকা থেকে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা রহমত আলী চৌধুরী বলেন, ‘কবুতর আর গাধা দেখার জন্য তো চিড়িয়াখানায় আসিনি।’ তিনি বলেন, অনেক আগে যখন একবার এসেছিলেন, তখনকার তুলনায় এখন অর্ধেক প্রাণী আছে। তবে, চিড়িয়াখানায় প্রাণী কম থাকলেও ঈদের ছুটিতে এখানে বেশ ভালো লাগছে তার, বলে জানান তিনি।

শুধুমাত্র পশু-পাখি দেখার জন্যই চিড়িয়াখানায় আসেননি অনেক দর্শনার্থী। পরিবারের সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশে দারুণ কিছু সময় কাটাতেও এসেছেন অনেকে।

অনেককেই দেখা যায় চিড়িয়াখানার ভেতরে লেকের পাড়ে তাবু টাঙিয়ে বরশি দিয়ে মাছ ধরছেন। সেই মাছ দিয়েই হচ্ছে বনভোজন। কথা হল এমনই এক পরিবারের সাথে। বনশ্রী থেকে এসেছেন আমজাদ আহমেদ ও তার পরিবার। তার বনভোজনের উদ্দেশ্যেই এখানে এসেছেন। সকাল থেকে বড়শি পেতে মাছ ধরেছেন। তারপর এখান থেকেই জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে সেই মাছ পুড়িয়ে খেয়েছেন। সঙ্গে ছিল বাড়ি থেকে আনা বিভিন্ন রকম শুকনো খাবার।

চিড়িয়াখানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের প্রথম দুই দিনের তুলনায় শুক্রবার (৭ জুন) ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। এদিন দেড় লাখেরও বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে জানান তারা।

বিজ্ঞাপন

চিড়িয়াখানার কিউরেটর এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, চিড়িয়াখানায় ১৩০টিরও বেশি প্রজাতির দুই হাজার ৭৯৪টি প্রাণী রয়েছে। দর্শনার্থীদের নির্মল বিনোদন দিতে তারা বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, বলে জানান। আবহাওয়া ভালো থাকলে শনিবারও (৯জুন) প্রচুর দর্শনার্থী আশা করছেন তারা।

এদিকে মাইকে নিখোঁজ মানুষদের নাম ধরে খোঁজা হচ্ছে। মাইক অপারেটর শমেস আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, চিড়িয়াখানার ভেতরে ভিড় ও মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে কেউ একজন চোখের আড়াল হলেই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মাইকিং করা লাগছে। এতে করে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আত্মীয়দের সাথে মিলিত হন।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) প্রায় ৪০ জন দর্শনার্থী নিখোঁজ ছিলেন। আর ভিড় বেশি হওয়ায় শুক্রবার দুপুর হতে না হতেই ছাড়িয়ে যায় আগের দিনের নিখোঁজ থাকার সংখ্যা।

চিড়িয়াখানার পাশাপাশি ভিড় দেখা যায় ঠিক পাশে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেনেও। বিশাল এলাকাজুড়ে নানান প্রজাতির গাছ-গাছালী আর টলটলে জলের দীঘি দেখে চোখ জুড়িয়েছেন নগরবাসী। বিশাল এই এলাকা ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হতেও দেখা যায় অনেককে। তবে ঘোরাঘুরিতে ক্লান্তি আসলেও গাছাপালার মধ্যে ঘুরে মানসিক শান্তি পেয়েছেন অনেকেই।

বসুন্ধরা থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এসেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জয় ও রাকা। তারা বলেন, এলাকাটি এত স্নিগ্ধ ও সুন্দর যে এখানে এলে নিজের হৃদস্পন্দন পর্যন্ত অনুভব করা যায়। এমনকি পুরো এলাকাটি হেঁটে হেঁটে দেখে ক্লান্তি আসলেও  ভালো লাগে। ঈদের পুরো ছুটি এই উদ্যানের মতো নির্জনতায় কাটাতে পারলে ভালো লাগতো বলে জানান তারা।

সারাবাংলা/টিএস/আরএফ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর