কনটেইনার জটের মুখে চট্টগ্রাম বন্দর
৮ জুন ২০১৯ ১৭:২৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল ফিতরের টানা ছুটির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার খালাস হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি। বিপরীতে গত পাঁচদিন ধরে বন্দরের ইয়ার্ড থেকে কনটেইনার বের করা হয়েছে প্রতিদিন মাত্র সাড়ে তিনশ’র মতো। তাই প্রায় ৪০ হাজার কনটেইনারের স্তূপ জমে জট তৈরির পরিস্থিতির মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। যদিও স্বাভাবিক সময়ে ইয়ার্ড থেকে দিনে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কনটেইনার খালাস করা বন্দরের সক্ষমতায় রয়েছে।
ঈদুল ফিতর ও সরকারি ছুটি শেষে রোববার (০৯ জুন) থেকে খুলছে সরকারি অফিস। বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোববার থেকে পুরোদমে খালাস শুরু হলে কনটেইনার জটের পরিস্থিতি থাকবে না। তবে বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলোর মতে, মঙ্গলবারের আগে বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস পুরোদমে শুরুর সম্ভাবনা নেই। এই অবস্থায় সোমবার কনটেইনার জট তৈরি হতেও পারে।
ঈদুল ফিতরের বন্ধের মধ্যে ধীরগতিতে হলেও রফতানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার জাহাজীকরণ স্বাভাবিক ছিল। তবে আমদানি পণ্য খালাসে স্থবিরতা নেমে আসে। শিপিং এজেন্ট ও সিএন্ডএফ এজেন্ট কাজে যোগ না দেওয়ায় এবং মহাসড়কে ভারি যানবাহন চলাচল ও বেসরকারি ডিপোগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমদানি পণ্য খালাসে এই স্থবিরতা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের কর্মকর্তারা।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের দিন বুধবার (০৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আট ঘণ্টা বন্ধ ছিল জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামাসহ বন্দরের সব কার্যক্রম। সন্ধ্যার পর বন্দর চালু হলেও কার্যত রাতে কাজ তেমন হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বন্দরের কাজ পুরোদমে শুরু হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের ছুটির মধ্যেও আমরা জাহাজ থেকে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার কনটেইনার খালাস করেছি। স্বাভাবিক সময়ে সেটা আরও বেশি হয়। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে তিন হাজার কনটেইনার আমরা বন্দর থেকে বের করতে পারলেও ঈদের ছুটির কারণে সেটা মাত্র ৩০০-৩৫০ তে নেমে আসে। এটা আমরা স্বাভাবিক রাখতে পারিনি। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখনও বন্দরে জট তৈরি হয়নি।’
সচিব জানান, শনিবার (০৮ জুন) দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ১১টি জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার খালাস চলছে। রোববার ভোরের মধ্যে জোয়ারের সময় আরও ৮টি জাহাজ বিভিন্ন জেটিতে নোঙর করার কথা রয়েছে।
বন্দরে কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৯ হাজার টিইইউস। শনিবার বন্দরে কনটেইনার আছে প্রায় ৪০ হাজার টিইইউস। বন্দরের অভ্যন্তরীণ কাজের জন্য ৩০ শতাংশ জায়গা খালি রেখে আরও ৯ হাজার টিইইউস কনটেইনার রাখা সম্ভব।
তবে রোববার ভোরের মধ্যে নোঙ্গর করা ৮টি জাহাজ থেকে রাতের মধ্যেই ৮ হাজার টিইইউস কনটেইনার খালাস হবে বলে মনে করছেন বন্দরের কর্মকর্তারা। এই অবস্থায় রোববার থেকে যদি পুরোদমে কনটেইনার খালাস শুরু না হয়, তাহলে জট তৈরি হবে বলে মনে করছেন তারা।
‘রোববার থেকে যদি স্বাভাবিক নিয়মের মতো তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার করে কনটেইনার আমরা বন্দর থেকে বের করতে পারি, তাহলে আর জট হবে না। কারণ কাল (রোববার) থেকে শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ কাজে যোগ দেবে। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পাওয়া যাবে। প্রাইভেট আইসিডিগুলোতেও কাজ শুরু হবে। আশা করি সমস্যা হবে না।’ বলেন সচিব।
তবে সিএন্ডএফএজেন্ট ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি দিয়েছে ভিন্ন তথ্য। তাদের মতে, পণ্যের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ করে বন্দরে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ঢোকাতেই মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় লাগবে।
আন্তঃজেলা ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সুফিউল আলম টিপু সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে ঈদের আগে-পরে তিনদিন করে ছয়দিন মহাসড়কে আমরা গাড়ি চালাতে পারিনি। আজ (শনিবার) পর্যন্ত আমাদের কোনো গাড়ি বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে বের হয়নি। কাল (রোববার) থেকে ট্রান্সপোর্ট অফিসগুলো খুলবে। তবে কালও আমরা পণ্য ডেলিভারি দিতে পারব না। কারণ কাল একদিন শুধু অ্যাসাসমেন্টেই সময় নেবে সিএন্ডএফরা। সোমবার থেকে যদি শিডিউল পড়ে, তাহলে পুরোদমে কাজ শুরু হতে মঙ্গলবার লাগবে।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস-সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক, শ্রম ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শিহাব চৌধুরী বিপ্লব সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো আজ (শনিবার) থেকেই কাজে যোগ দিয়েছি। কিন্তু রোববার থেকে যেহেতু অফিস খুলবে, শুল্কায়ন পুরোদমে শুরু হবে কাল থেকেই। কাল খুব চাপ থাকবে শুল্কায়নের। সোমবার রাত থেকে অথবা মঙ্গলবার সকাল থেকে পুরোদমে কনটেইনার খালাস শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি।’
সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ