Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিস্তা নিয়ে সুখবর বিধানসভা নির্বাচনের আগে নয়


৯ জুন ২০১৯ ১৩:১২

ঢাকা: গত দুই মেয়াদে তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশকে আশা দিলেও শেষ পর্যন্ত কথা রাখতে পারেনি নয়াদিল্লি। সদ্য সমাপ্ত ভারতের লোকসভা নির্বাচন শেষে বিজেপির নেতৃত্বে নতুন আরো একটি সরকার গঠন হয়েছে। ঢাকা আশা করছে, এই মেয়াদে তিস্তাসহ ঢাকার সঙ্গে অমীমাংসিত সবগুলো বিষয়ের সুরাহা হবে। তবে ঢাকা-নয়াদিল্লি কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী ২০২১ সালে অনুষ্ঠেয় ভারতের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিস্তা বিষয়ে কোনো সুখবর আশা না করাই ভালো।

বিজ্ঞাপন

নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তিস্তা বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধিতার কারণে ভারতের গত দুই সরকার এই ইস্যুটি ঢাকার সঙ্গে মিটিয়ে ফেলতে পারেনি। নতুন মেয়াদেও মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে জিইয়ে থাকা তিস্তা ইস্যুতে সুখবর দিতে পারবেন বলে মনে হয় না।

আরও পড়ুন: এই মেয়াদে তিস্তার মীমাংসা হচ্ছে না

এবারও তিস্তা ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গ বাধা হয়ে থাকবে উল্লেখ করে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরও বলছে, তিস্তা ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্পর্শকাতরতা রয়েছে। তাই ভোটব্যাংক শক্তিশালী করতে বিজেপির তিস্তা ইস্যুতে অন্তত ২০২১ সালের আগে কথা বলার কথা নয়। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসনে জয়ী হয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের বিপরীত চিত্র।

লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির জয় পাওয়ায় দলটি এবার ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের দুর্গ আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা চালাবে— সেটিই স্বাভাবিক। এ কারণে ঢাকা-নয়াদিল্লি সুসম্পর্কের কারণে বিজেপি যদিও তিস্তার সুরাহা করতে চায়, তবে সেটা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতে এবারের ভোটে পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দোপ্যাধ্যায়কে কোনঠাসা করে বিজেপি অনেকটাই শক্তিশালী হয়েছে। আগামী ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হবে। বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি চাইবে পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের দুর্গ আরো শক্ত করতে।’

বিজ্ঞাপন

২০২১ সালের আগে নরেন্দ্র মোদি তিস্তা নিয়ে নাড়াচাড়া করবেন না, এই এনালাইসিসটা কিছুটা কারেক্ট উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কিছুটা কারেক্ট কারণ পশ্চিমবঙ্গের যে উত্তরাঞ্চল, সেই অংশে পানির কমতি রয়েছে। ওই অংশের জনগণ তিস্তার ওপর নির্ভরশীল। আবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় তিস্তা একটি ইস্যু। তাই নরেন্দ্র মোদী এই ইস্যুতে সহজেই হাত দেবেন বলে মনে হয় না।’

অধ্যাপক তারেক আরো বলেন, ‘কিন্তু আবার একই সময়ে এটাও সত্য যে নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশকে খুশি রাখতে চাইবে। কেননা বাংলাদেশে তার যথেষ্ট স্বার্থ আছে। সুতরাং যেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কলকাতা গিয়ে বলেছেন যে আমরা অনেক দিয়েছি, তারা তো আমাদের সেভাবে দেয়নি। ফলে মোদী চাইবেন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত করতে। সম্পর্ক আরও উন্নত করার ক্ষেত্রে তিস্তাই একমাত্র সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। আমার ধারণা, হয়তো তিস্তা চুক্তি আগামী এক বছরের মধ্যে হবে না। তবে মোদীকে এটা প্রেসারে রাখবে। আবার ২০২১ সালের নির্বাচনের আগেও এই চুক্তি হলেও আমি অবাক হবো না।’

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তিস্তা ছাড়াও বাণিজ্য খাতের শুল্ক ও অশুল্ক বাধাসহ নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার একাধিক অমীমাংসিত ইস্যু রয়েছে। তিস্তা ইস্যু কেন সুরাহা হচ্ছে না, তা ঢাকার কর্মকর্তারাও বোঝেন। তবে নয়াদিল্লিকে চাপে রাখতে ঢাকা সবসময়ই অন্য বিষয়ের সঙ্গে তিস্তার প্রসঙ্গ রাখবে।

তিস্তা চুক্তির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, যেকোনো সময়ের চেয়ে ঢাকা-নয়াদিল্লি ভালো সময় পার করছে। ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গেও এই সুসম্পর্ক বজায় থাকবে এবং তা আরও শক্তিশালী হবে।’ বিজেপি সরকারের এই মেয়াদে দুই দেশের মধ্যে জিইয়ে থাকা সমস্যাগুলোরও সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমও

তিস্তা নয়াদিল্লি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সরকার ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর