Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঋণের সুদ পরিশোধে বাজেটে বরাদ্দ ৬০ হাজার কোটি টাকা


৯ জুন ২০১৯ ২২:৫৭

ঢাকা: আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখছে সরকার। এই বরাদ্দ চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ছিল ৫১ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। তবে, সংশোধিত বাজেটে ৮০০ কোটি টাকা বেড়ে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তা আরো বাড়ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞাপন

বাজেটে সুদ পরিশোধে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে সঞ্চয়পত্র এবং মেয়াদী ঋণের সুদ পরিশোধে। বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখার কারণে সরকারের অনেক অগ্রাধিকার খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিতে হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-১৮-মার্চ-১৯) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত এবং সুদের হার বেশি হওয়ায় এখানে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে, যেভাবে বাড়ছে এটা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। কারণ এটা বন্ধ করা কিংবা সুদের হার কমিয়ে আনা কোনোটাই সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে সরকারের করনীয় হলো বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তা পূরন হওয়ার সাথে সাথে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ করে দেয়া উচিত। এতে করে সরকারকে অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রির সুদের বোঝা টানতে হবে না।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজেটে বড় অঙ্কের অর্থ সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখার কারণে সরকারের অনেক অগ্রাধিকার খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিতে হচ্ছে। তাই লক্ষ্যমাত্রার বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে।  তিনি বলেন, গত ২ বছর ধরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে তার দ্বিগুনেরও বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে।

গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ২৬ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ৩১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাখা হয় ৩৫ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৪১ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৯ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা বেশি অর্থ্যাৎ ৫১ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ বেড়ে হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, আগামী বাজেটে সুদ বাবদ বরাদ্দ ৬০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৫৭ হাজার কোটি ব্যয় হবে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে। বাকি তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে। বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দের অর্থের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয় হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হয় মেয়াদী ঋণের সুদ পরিশোধে। এছাড়াও, সরকারি কর্মচারিদের ভবিষ্যত তহবিল বা জিপিএফ, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ, চলতি ঋণ এবং জীবন বীমা ও অন্যান্য ঋণের সুদ পরিশোধে এই অর্থ ব্যয় করা হয়।

আগামী ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করা হবে। এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা মতো। এটি বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। একই সঙ্গে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসাবে আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম

২০১৮-২০১৯ অর্থবছর ঋণের সুদ জাতীয় বাজেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর