কেরানীগঞ্জে আদালত স্থানান্তর: বৈধতা নিয়ে রিটের শুনানি মঙ্গলবার
১০ জুন ২০১৯ ১২:১৭
ঢাকা: নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থানান্তরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা রিটের শুনানি আগামীকাল মঙ্গলবার (১১ জুন) অনুষ্ঠিত হবে।
আজ সোমবার (১০ জুন) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এদিন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী রিটে কিছু সম্পূরক নথি হলফনামা আকারে দাখিল করার জন্য শুনানি ‘নট টুডে’ রাখার মৌখিক আবেদন করেন। আবেদন গ্রহণ করে আদালত শুনানি একদিন পিছিয়ে মঙ্গলবার তারিখ নির্ধারণ করেন।
এসময় খালেদা জিয়ার অন্য আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক।
পরে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নাইকো এবং আরও অন্যান্য মামলার বিশেষ আদালতকে স্থানান্তর করা হয়েছে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে। আমরা মনে করি, যে আইনের অধীনে তারা এটা করেছে, সেটা আইনসিদ্ধ হয়নি। এটা বেআইনি এবং সংবিধান পরিপন্থি। সে জন্য আমরা রিট আবেদনটি করেছিলাম।
মওদুদ আহমদ আরও বলেন, আগেও রিটের শুনানি হয়েছে, আজও শুনানির জন্য ছিল। এর মধ্যে কিছু কাগজপত্র দাখিল করতে চেয়েছিলাম। সে কাগজপত্রগুলো দাখিল করতে হলে আগে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। আদালত সে অনুমতি দিয়েছেন। এখন সেগুলো অ্যাফিডেভিট করে দাখিল করতে হবে। যেহেতু অ্যাফিডেভিট করতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যাবে, সেহেতু আমরা বলেছি শুনানিটা আজ না করে আগামীকাল করলে ভালো হয়। আদালতও সম্মত হয়েছেন। ফলে আগামীকাল শুনানি হচ্ছে।
ঈদের ছুটির আগে গত ২৮ মে এই রিটের আংশিক শুনানির পর পরবর্তী শুনানির জন্য ১০ জুন পর্যন্ত মুলতবি করেছিলেন আদালত। ওই দিন আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, নওশাদ জমির, কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পরে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এই নাইকো মামলা ২০০৭ সালে শুরু হয়, তখনকার তথাকথিত অবৈধ একটি সরকারের অধীনে। দু’টি মামলা হয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তার সময়েই কিন্তু নাইকো চুক্তি সম্পাদিত হয়, তখনই সবকিছু শুরু হয়। ওই সরকার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তটি আমরা বলবৎ রেখেছিলাম— এটাই আমাদের অপরাধ।
মওদুদ বলেন, সরকারের ২৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দু’টি মামলা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, বাকি ১৩ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
ব্যারিস্টার মওদুদ আরও বলেন, আজ সেই মামলা স্থানান্তর নিয়ে রিটের শুনানি হয়েছে। আমাদের তরফ থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানি করেছেন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেলও দাঁড়িয়েছেন। উনি বিরোধিতাও করেছেন কিছু বিষয়ের। কিন্তু এই পিটিশনের মধ্যে আদালত আরও কিছু জানতে চেয়েছেন। সেগুলো এই আবেদনের সঙ্গে সম্পূরক হিসেবে হলফনামা আকারে দেওয়া হবে। সেজন্য আজকের মতো শুনানি মুলতবি হয়েছে। বন্ধের পর ১০ জুন এই মামলার শুনানি আবার হবে।
গত ১২ মে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিরুদ্ধে চলা নাইকো দুর্নীতি মামলাসহ বিভিন্ন মামলা বিচারে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আদলত স্থাপনে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এই প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবীরা গত ২৬ মে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করেন।
খালেদা জিয়ার রিটে দাবি করা হয়েছে, সরকারের জারি করা প্রজ্ঞা সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ বহির্ভূত। একইসঙ্গে প্রজ্ঞাপনে প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধির (সিআরপিসি) ধারা ৯ এর (১) ও (২) উপধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এজেডকে/টিআর