Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যাংক খাত নিয়ে সরকারের সব পদক্ষেপই ক্ষতিকর হয়েছে: সিপিডি


১১ জুন ২০১৯ ১৫:২২

ঢাকা: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্যাংকিং খাত নিয়ে যে কয়টা পদক্ষেপ নিয়েছে তার সবগুলোই আরো বেশি ক্ষতিকর হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)‘র সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ’ অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। এতে মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির সিনিয়র গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

বিজ্ঞাপন

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত জানুয়ারি মাসে অর্থমন্ত্রী বলেছেন খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। অথচ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এক টাকা বাড়বে না বলার পর ১৭ হাজার কোটি টাকার বেড়েছে।

তিনি বলেন, ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে নাড়াচাড়া করে ব্যাংকিং খাতের সমস্যার সমাধান হবে না। এটা কাঠামোগতভাবে সুশাসন যদি আনা না যায় এবং যারা ব্যাংকের টাকা তসরুপ করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা না গেলে ব্যাংকিং খাতের মানুষের প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে। এটা কোনো দেশ ও জাতির জন্য ভালো হবে না। সুদের হারকে নাড়াচাড়া করে যে কিছু করা যাবে না তার প্রমাণ হলো সুদের হার কমে গেলেও ব্যক্তি খাতের ঋণ প্রবাহ বাড়ছে না। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তারল্য চলে গেছে, ব্যাংকে কেউ টাকা রাখছে না, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে তারাও টাকা দিচ্ছে না। এই তারল্য সংকটের সমাধান সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করে হুকুমের অর্থনীতির মধ্যে ফেলে দিলে কোনোভাবেই সুখকর হবে না।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে কৃষকদের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করেছে ইতিপূর্বে এই রকম আচরণ করা হয়নি। গ্রামীণ অর্থনীতি ভিত্তি এখন শহরে চলে আসছে। আর সেটা শহর থেকে বিদেশে চলে গেছে। এটা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের কৃষকের পক্ষে আগামী দিনে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। সরকার সময়মত ধান, চাল সংগ্রহ করেনি। আমদানি শুল্ক অনেক দেরি করে আরোপ করেছে। ফলে, অর্থনীতির এই ধরনের অব্যবস্থাপনার চিত্র অন্য কোনো খাতে করা হয়নি।

সিপিডির সম্মানীয় এই ফেলো বলেন, আগামী বাজেটে ১ কোটি ৮০ লাখ কার্ডধারী প্রত্যেক কৃষককে ৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেয়া হোক। এটা করা হলে ৯ হাজার ১০০ কোটি লাগবে। অথচ রপ্তানিখাতে ঢালাওভাবে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দাবি করা হচ্ছে এতে লাগবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। ফলে, কৃষকদের সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বেশি না।

তিনি বলেন, প্রতিবছরই রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে, চলতি অর্থবছরে প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৫০ হাজার কোটি টাকা বলা হলেও বছর শেষে এই ঘাটতির পরিমাণ ৮৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখন চাপের মুখে আছে। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এক সময় অর্থনীতির শক্তি ছিল। সেই শক্তিতে চিড় ধরেছে। সেখানে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। এর অনুসঙ্গগুলো হলো কর আহরণে অপারগতা। বাংলাদেশের উন্নয়নে একটা অমোচনীয় প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়েছে। এটাকে যদি অতিক্রম করা না যায় তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে অভিলাস তার জন্য বিনিয়োগের সুযোগ কমে যাবে। এছাড়া, অন্য উৎস থেকে বিনিয়োগের চেষ্টা করা হয় তাহলে সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।

তিনি বলেন, কর আরোহন করতে না পারার কারণে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় ভালো হলেও উচ্চ আমদানির কারণে লেনদেনের ঘাটতি বাড়ছে। এতে করে দেশের বৈদেশিক মজুদ দ্রুত নেমে আসছে। এটা কিছুদিন আগে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতায় থাকলেও এখন পাঁচ মাসে নেমে এসেছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের টাকার মান অবনমন করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে ভারত ও চীন তা করেছে। আমাদের টাকার ৩ শতাংশ অবনমন করা উচিত। কারণ বর্তমানে মূলস্ফীতির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থায় টাকার অবনমন করা হলে মানুষের পক্ষ সহ্য করা সহজ হবে।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ব্যাংকিং সেক্টর সিপিডি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর