ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পাঠানো ‘মধ্যরাত’-এর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্তি এবং প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাবর্ষ বেঁধে দেওয়ায়-ই ছাত্রদলের আপত্তির মূল কারণ।
সংগঠনটির নেতারা বলছেন, ছাত্রদলের অভিভাবক হিসেবে কমিটি বিলুপ্ত করার এখতিয়ার কেবল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অথবা দলের সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। কিন্তু তাদের দুইজনের স্বাক্ষর এবং সম্মতির বিষয়টি উল্লেখ করা ছাড়াই মধ্যরাতে নিজের স্বাক্ষরে প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে কমিটি বিলুপ্তি করেছেন রুহুল কবির রিজভী— যা বিধিসম্মত নয়।
অন্যদিকে বয়সসীমা বেঁধে না দিয়ে শিক্ষাবর্ষ বেঁধে দেওয়ার বিষয়টিতে ঘোর আপত্তি ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের। তারা বলছেন, ১৯৯৯ সালে পাস করা ছাত্রের বয়স অনেক সময় ২০০১ সালে পাস করা ছাত্রের বয়সের চেয়ে কম। সুতরাং বয়সসীমা না বেঁধে শিক্ষাবর্ষ বেঁধে দেওয়ায় আগের কমিটির অনেকেই প্রার্থী হওয়ার সুযোগে থেকে বঞ্চিত হবেন।
তাছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন কমিটি না হওয়ায় ছাত্রদলের অনেক নিবেদিত কর্মী কমিটিতে স্থান পাওয়ার আগেই ছাত্রত্ব হারায় অথবা বয়সসীমা পার হয়ে যায়। এসব কারণে নিয়মিত কমিটি করারও দাবি নয়াপল্টনে বিক্ষোভরত ছাত্রনেতাদের।
মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভরত ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে সকাল ১১ টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা।
তাদেরকে শান্ত করতে সাবেক ছাত্রনেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বরকত উল্যা বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী নয়াপল্টনে আসেন। কিন্তু তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে ছাত্রদল নেতারা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন।
এর আগে গত ৩ জুন রাত ৯ টা ৫৭ মিনিটে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘আজ ০৩ জুন ২০১৯ সোমবার, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এর মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় সংসদ বাতিল করা হয়েছে। আগামী ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) দিনের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হবে। জাতীয়তবাদী ছাত্রদলের অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা নিন্মরূপঃ-
১। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে।
২। অবশ্যই বাংলাদেশে অবস্থিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে।
৩। কেবলমাত্র ২০০০ ইং সাল থেকে পরবর্তীতে যেকোন বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।’’
বিক্ষোভরত ছাত্রদল নেতারা বলছেন, মধ্যরাতে রহুল কবির রিজভীর পাঠানো ওই প্রেস রিলিজের কোথাও বলা নেই, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বা মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। বরং কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণায় নিজে স্বাক্ষর করেছেন রুহুল কবির রিজভী— যা তার এখতিয়ার বহির্ভূত।
মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায় ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, নাজমুল হাসান, ইফতিয়ার রহমান কবির, যুগ্ম সম্পাদক আবুল হাসান, মফিজুর রমান আশিক, যোগাযোগ সম্পাদক গাজী সুলতান আহমেদ জুয়েলের নেতৃত্বে কয়েক শ’ নেতাকর্মী বিক্ষোভ করছেন।
তারা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘রিজভীর মধ্যরাতের প্রেস রিলিজ মানি না, মানব না। রিজভীর সিন্ডিকেট ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও। রিজভীর দুই গালে…! আলালের (সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল) সিন্ডিকেট ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও।’
রিজভীর প্রতি এই ক্ষোভের কারণ জানতে চাইলে ছাত্রদেলের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রদলের মেওয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তি নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় তিনি (রিজভী) কমিটি বিলুপ্তি করেছেন, সেখানে আমাদের আপত্তি আছে। কার নির্দেশে তিনি কমিটি বিলুপ্ত করেছেন, মধ্যরাতে পাঠানো প্রেস রিলিজে সেটি উল্লেখ নেই।’
বিলুপ্ত কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রকীবুল হাসান হাওলাদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষোভ নয়। আমাদের ক্ষোভ সিস্টেমের বিরুদ্ধে। নিয়মিত কমিটি গঠন করা হলে তো আমরা এতো দিনে ছাত্ররাজনীতি ছেড়ে মূল দলে ঢুকতে পারতাম। সর্বশেষ দুইটি কমিটি ৯ বছর খেয়ে দিয়েছে। যখন আমাদের পদ পাওয়ার সময়, তখন নতুন কমিটি করা হয়নি। এখন কমিটি গঠন করা হচ্ছে শিক্ষাবর্ষ বেঁধে দিয়ে। এতে আমরা অনেকেই প্রার্থী হতে পারব না।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম