ধর্ষণের অভিযোগ: কেরানীগঞ্জের ওসিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
১১ জুন ২০১৯ ১৭:৩২
ঢাকা: রাজধানীর কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এক নারীকে অপহরণের পরে ধর্ষণ করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী।
মঙ্গলবার(১১ জুন) বিকেলে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬ এর বিচারক শহিদুল ইসলামের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।
পরে বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ জাকির হোসেন হাওলাদ সারাবাংলাকে বলেন, ভুক্তভোগী ওই নারীর জবানবন্দী গ্রহণ করে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মোহাম্মদ জোবায়ের, ওসি অপারেশন গোলাম সরোয়ার, উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল আমিন বাশার, মোহাম্মদ ফারুক, হায়দার, মোহাম্মদ ইকবাল, মোহাম্মদ হানিফ মেম্বার, মোহাম্মদ রফিক ও মোহাম্মদ বাবুল মধু।
মামলার অভিযোগ বলা হয়, ভিকটিম একজন মানবাধিকার কর্মী। গত ২০ এপ্রিল কেরানীগঞ্জ তার সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আরশি নগর আমিন মাদবরের সিমেন্টের দোকানে সামনের পৌঁছালে ২০/ ৩০ জন মিলে সেখানে কর্মরত কিছূ মানুষকে ধাওয়া করে। এরপর বাদী জানতে পারেন ধাওয়া খাওয়া মানুষগুলো সোয়ারেজ লাইনের ঠিকাদার আমিন মাদবরের কাজের লোক। পাঁচ লাখ টাকার চাঁদার টাকা না দেওয়ায় তাদের মারধর ও ধাওয়া শুরু করে আসামিরা। এই ঘটনা দেখে বাদী পুলিশের হেল্প লাইন ৯৯৯ ফোন করে জানালে আসামিরা ওই সময় বাদীকে দেখে ফেলে। এরপর বাদীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে চড় থাপ্পার, কিল – ঘুষি,লাথি ও শরীরের জায়গায় আঘাত সহ শ্লীলতাহানি করে।
এসময় ভিকটিমের গলায় থাকা স্বর্ণের চেন নিয়ে যায় আসামি ইকবাল। এরপর গত ২৪ এপ্রিল বিকাল ৫টায় তার সংস্থার কাজের জন্য মতিঝিল যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে রাত ১১ টায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকায় ঘাটখরচর প্রাইমারি স্কুলের সামনে আসলে আসামি হায়দার, রফিক, শফিফকসহ আরও অজ্ঞাতনামা দুইজন বাদীকে রিকশা থেকে নামিয়ে স্কুলের পিছনের গলিতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের কথা প্রকাশ করিলে খুন করে গুম করার হুমকি দেয়।
ওই ঘটনায় সময় বাদী ১ মাস ৫ দিনের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গত ২০ এপ্রিল ঘটনার দিন বাদীকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ উদ্ধার করে ঢাকার মিডফোর্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। চিকিৎসা শেষে কেরানীগঞ্জ থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে মামলা না নিয়ে ওসি জোবারের, ওসি (ওপারেশন) গোলাম সারোয়ার ধমক দিয়ে বলে এলাকায় গিয়ে সালিশির মাধ্যমে আপোষ করতে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ২৪ এপ্রিল রাত ১১ টায় আবার বাদী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে পরীক্ষা -নিরিক্ষা না করে দুই দিন পর গত ২৭ এপ্রিল আসামিদের তদবিরে তাকে হাসপাতালে থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়। বাদী ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় যাওয়ার পর আবার প্রচণ্ড ব্যাথা হলে গত ৩ মে আবার মিডফোর্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এসময় চিকিৎসক তাকে জানান, তার পেটের সন্তান আঘাতের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে।
পরবর্তীতে বাদী পুলিশকে সব বিষয় জানালেও পুলিশ মামলা নিলেও আসামিকে গ্রেফতার করেননি। এরপর থানা বাদীকে থানায় আপোষ মিমাংসা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
পরে বাদী তার সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়া ও পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করছেন এমন অভিযোগ এনে নারী নির্যাতন দমন আইন ও পেনাল কোডের আরেক ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।
সারাবাংলা/এআই/জেডএফ