ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে একমত ঢাকা-ওয়াশিংটন
১২ জুন ২০১৯ ১৯:৪২
ঢাকা: অংশীদারিত্ব সংলাপে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং দেশগুলোর জনগণের পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করতে একমত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ। দুই দেশের মধ্যে গত ১০ জুন অনুষ্ঠিত ৭ম অংশীদারিত্ব সংলাপে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সভায় দুদেশের সরকার একটি অবাধ, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিষয়ে অভিন্ন লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চালাতে একমত হয়।
গত ১০ জুন ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ডেভিড হেইল। ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র মিশন থেকে বুধবার (১২ জুন) ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব সংলাপ বিষয়ক যৌথ বিবৃতি’ শীর্ষক এক বার্তায় এই তথ্য জানান হয়।
বার্তায় বলা হয়, সভায় দুই নেতা সন্ত্রাসবাদের অব্যাহত চ্যালেঞ্জ এবং নিরাপত্তাগত লক্ষ্য পূরণের প্রচেষ্টার পাশাপাশি মানবাধিকার বিষয়ক বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলার গুরুত্বের বিষয়ে একমত হন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দুদেশের মধ্যে বিনিময় হওয়া গোপনীয় সামরিক তথ্যের সুরক্ষার বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করে। বাংলাদেশ এ আলোচনার ধারা অব্যাহত রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
সভায় দুদেশের সরকার সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি পরস্পরকে অবহিত করে এবং এই বিষয়ে পারস্পরিক স্বার্থ এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তার ক্ষেত্র খতিয়ে দেখতে সম্মত হয়।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে সমুদ্রসীমা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, জলদস্যুতা প্রতিরোধ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে সমন্বয়ের জন্য বাংলাদেশকে নিরাপত্তা সহায়তা বৃদ্ধি করার অঙ্গীকার করে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা অভিযানে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ভূমিকার প্রশংসা করে। দুই প্রতিনিধি দল একটি অপারেশনাল-লেভেল আনম্যানড এয়ারক্র্যাফট সিস্টেম (ইউএএস) বিষয়ক যৌথ অঙ্গীকারও এসময় তুলে ধরে। জাতিসংঘ বাহিনীতে সেনা সরবরাহকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবং সক্ষমতা গঠনে সহায়তাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এতে যৌথভাবে ভূমিকা রাখবে। ২০১৯ সালের মার্চে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ওই অঙ্গীকার করা হয়েছিল।
রোহিঙ্গা সঙ্কট
মিয়ানমার থেকে আসা দশ লাখের বেশি শরণার্থীকে অব্যাহতভাবে আশ্রয় দিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আন্তরিকতার প্রশংসা করে। বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রকে তার অব্যাহত সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের এ সহায়তার মধ্যে রয়েছে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে মানবিক সহায়তা হিসেবে দেওয়া ৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা।
দুই সরকার সমস্যার মূল কারণ সমাধান করা এবং রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি করার অতীব প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। যুক্তরাষ্ট্র জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়ে সাময়িকভাবে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের জন্য আরও সহায়তার ব্যবস্থা করার প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্ত করার অঙ্গীকার করে। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকার শরণার্থী রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তাদান অব্যাহত রাখা ও এ সঙ্কট সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যেতে সম্মত হয়।
সুশাসন
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল মত প্রকাশ ও সভা-সমাবেশের অধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা করে। বাংলাদেশ পক্ষ আইনের শাসনের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে এবং বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার ও দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থার ওপর জোর দেবে- এ মর্মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ঘোষণা জোরালোভাবে তুলে ধরে। যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারের সুরক্ষাদান ও মানবপাচার প্রতিরোধ করায় প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য বাংলাদেশকে তাগিদ দেয় এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কতিপয় ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশে ২০১৮ সালের শেষদিকে মানবপাচার বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে এটি বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়।
অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রত্যাশিত উত্তরণের প্রশংসা করে। বাংলাদেশ অবকাঠামো ও জ্বালানি প্রকল্পে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ সহজ করার জন্য গৃহীত পরিকল্পনাগুলি যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করে। বাংলাদেশ আশা প্রকাশ করে, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) উৎসাহিত হবে। দেশটি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে এফডিআই এর বৃহত্তম উৎসগুলোর অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ট্রেড উইন্ডস বাণিজ্য মিশনের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে সেদেশের বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করে। উভয় দেশ ন্যায্য, পারস্পরিক এবং উভয়ের জন্য লাভজনক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে কাজ করবে। বাংলাদেশের উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ পূরণে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র এখানে সেদেশের ব্যবসায়িক কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া অব্যাহত রাখবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মানদণ্ড ও অনুশীলনের সাথে সঙ্গতি রেখে শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার বিষয়গুলোতে অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানায়।
সারাবাংলা/জেআইএল/এনএইচ
৭ম অংশীদারিত্ব সংলাপ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক রোহিঙ্গা সঙ্কট