স্মার্টফোন, কলরেট, অপটিক্যাল ফাইবারে কর: নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা
১৪ জুন ২০১৯ ১৪:৩২
ঢাকা: বিদেশ থেকে আমদানি করা স্মার্টফোনের ওপর শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। বাড়ছে মোবাইল ফোনে কথা বলার খরচ। অপটিক্যাল ফাইবারে শুল্ক বাড়াতে খরচ বাড়বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের। তথ্য প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। প্রয়োজনীয় এসব উপকরণে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবে তথ্য প্রযুক্তি খাতে বিরুপ প্রভাব পরবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সারাবাংলাকে বলেন, এটি একটি চমৎকার বাজেট। বাংলাদেশেই প্রথমবারের মতো বাজেট বক্তৃতায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, এবারের বাজেটে দেশীয় উৎপাদনকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। আমদানি নির্ভর দেশ থেকে আমরা এখন উৎপাদনমুখী দেশের দিকে যাচ্ছি। বাজেটে আমদানি নির্ভর জাতি থেকে উৎপাদনমুখী জাতিতে প্রবেশ করার দিকনির্দেশনা রয়েছে। সেটা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ক্ষেত্রেই বলেন, মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রেই বলেন, রেফ্রিজারেটরের ক্ষেত্রেই বলেন।
কল রেট বাড়া বিষয়ে সারাবাংলার এক প্রশ্নের জবাবে এই মন্ত্রী বলেন, সাধারণভাবে মনে হবে কলরেটে খরচ বেড়েছে। কিন্তু এতে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ বর্তমানে মানুষ ভয়েস কল কমিয়ে দিয়েছে। ডাটা বেশি ব্যবহার করছে। আমার সঙ্গে যতোবারই টেলিফোন অপারেটরগুলোর সঙ্গে কথা হয় ততোবারই তাদের বলেছি ডাটার ব্যবহার বাড়াতে। তাই এটি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তথ্য প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর সারাবাংলাকে বলেন, তথ্য প্রযুক্তি খাতে গত বছরের চেয়ে ২১৭ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ বেশি। যদিও এটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে কম। তবে, সবমিলিয়ে বরাদ্দ বাড়ার বিষয়টি ইতিবাচক। তবে মনে রাখতে প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই অর্থ কিভাবে ব্যয় হচ্ছে। এখন সবচেয়ে বেশি হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে এবং ভালো অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। এছাড়া আমাদের অন্যান্য যে দাবিগুলো ছিল সেগুলো অপরিবর্তিত আছে।
বেসিস সভাপতি আরও বলেন, ভার্চুয়াল বিজনেস বলে একটা ক্যাটাগরি হয়েছে। ই-কর্মাস অর্থাৎ যাদের কোনো রকম দোকান নেই, যারা অনলাইনে ব্যবসা করছে, তাদেরকে ভার্চুয়াল বিজনেস বলা হচ্ছে, তাদের উপরে ৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়া হয়েছে। এতে অনেক মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন এর উপর ৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়া মোটেই ঠিক হয়নি। ১০০ কোটি টাকা স্টার্ট আপের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা খুবই ইতিবাচক। কিন্তু এটি কিভাবে ব্যয় হবে, কাকে বরাদ্দ দেয়া হবে, সেটি মাথায় রাখতে হবে। আরও বড় বিষয় সবকিছুতেই কিন্তু মোবাইল থাকতে হবে আমার হাতে। সেক্ষেত্রে মোবাইলের দাম বাড়া কিন্তু নেতিবাচক।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক সমিতি (বিএমপিআইএ)’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আইটেল ও টেকনোর সিইও রেজওয়ানুল হক সারাবাংলাকে বলেন, শুল্ক বাড়িয়ে স্মার্টফোনে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশীয় বাজারে ২৫ শতাংশের মতো ফোন উৎপাদন হয়। এতে বাজারে অন্তত ৬০ শতাংশ ফোনের দাম বেড়ে যাবে। তবে সাময়িক ক্ষতি হলেও দীর্ঘমেয়াদে দেশ উপকৃত হবে। কারণ অনেক বিদেশী কোম্পানি এতে দেশে উৎপাদন শুরু করবে।
এছাড়াও, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বলা হয়েছে, সরকারি দফতরে শক্তিশালী তথ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (এমআইএস) গড়ে তোলা হবে। এর ফলে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও সেবাসমূহের হালনাগাদ তথ্যসংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ সহজ হবে। ‘তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর মানবসম্পদ সৃষ্টি ও আমাদের সামনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব’ শীর্ষক একটি ক্যাটাগরিও ছিল অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়, যেখানে দেশে চতুর্থ বিপ্লব সম্পর্কে দিকনির্দেশনা রয়েছে। দেশে প্রথমবারে মতো ব্লকচেইন চালুর ঘোষণা ছিল এবারের বাজেট বক্তৃতায়। যেখানে বলা হয়েছে, নতুন অর্থবছরে দেশে ব্লকচেইন প্রযুক্তি প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। তথ্য প্রযুক্তিতে উদ্ভাবনেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। আর তথ্যপ্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে অতিরিক্ত ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দও দেয়া হয়েছে এবারে বাজেটে। জোর দেয়া হয়েছে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনাতেও।
সারাবাংলা/ইএইচটি/জেএএম
অপটিক্যাল ফাইবার কলরেট তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাজেট ২০১৯-২০ স্মার্ট ফোন