Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনেও বাজিমাত প্রধানমন্ত্রীর


১৪ জুন ২০১৯ ২৩:৪৫

ঢাকা: ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে বাজিমাত করলেন অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে দেশের ইতিহাসে প্রথমবার বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (১৪জুন) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ মোস্তফা কামালের অসুস্থতাজনিত কারণে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আগ্রহ প্রকাশ করে নিজেই অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ অন্যান্য সিনিয়র মন্ত্রীদের নিয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন। রীতি অনুযায়ী বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে মূল আয়োজক ও বক্তা থাকেন অর্থমন্ত্রী। তবে এবার তিনি ছিলেন না। বৃহস্পতিবারই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।

আজ সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে মঞ্চে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া মঞ্চে ছিলেন। অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জানান, অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উপস্থিত হতে পারেননি এবং তিনি অর্থমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

বিজ্ঞাপন

পরে অর্থসচিবও বলেন, অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রী গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাজেট বক্তৃতা শেষ করতে পারেননি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট বক্তৃতা শেষ করেন। এটি বাংলাদেশের সংসদে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেল তিনটার দিকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। মূল বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সংবাদকর্মীসহ মন্ত্রীপরিষদের সদস্য ও বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে আগ্রহ ও উৎসাহ তৈরি হয়। তাই সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেতা, মন্ত্রীপরিষদের সদস্য থেকে দলীয় সংসদ সদস্যরাও ব্যাপকভাবে উপস্থিতি ছিলেন। শুরুতে বাজেটের বিভিন্ন দিক এবং সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বাজেট নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

প্রধানমন্ত্রী বিগত সময়ে তার বিদেশ সফর নিয়ে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনগুলোর মতোই আজ স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় কাটকাট-মারমার বা তাৎক্ষণিকতা-চমকদারিত্ব বা কখনো পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে প্রশ্নের জবাব আবার কখনো বাচনিক কৌশলে বিভিন্ন দিক তুলে ধরে উত্তর দিয়ে বাজিমাত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রতিবেদক ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ গত ১০ বছরে ২৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য থাকলেও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সফল হচ্ছে না কেন বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেন। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী ওই সাংবাদিকের কাছে প্রথমে জানতে চান তিনি কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। প্রতিবেদক নিজের পত্রিকার নাম বলার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এখানে পত্রিকায় চাকরি করেন, তাদের আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করব, আপনারা কি একটা খবর নেবেন, যে আপনাদের মালিকরা কে কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছেন, আর ঋণগুলো শোধ দিয়েছে কি না?

এরপর তিনি বলেন, আপনারা দয়া করে সমস্ত ব্যাংকগুলি থেকে এ তথ্যটা আগে বের করেন, যত মিডিয়া এখানে আছেন প্রত্যেকেই বলবেন যে আমি অনুরোধ করেছি আপনাদের, যে কোন মালিক কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়ে কত টাকা শোধ দেয়নি বা খেলাপি হয়ে সেটাকে আবার পুনঃতফসিল করে গেছেন। এটার একটা হিসাব বের করলে আমাকে আর প্রশ্ন করা লাগবে না।

প্রধানমন্ত্রীর এমন উত্তরে উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিরা জোর হাততালি দিয়ে সাধুবাদ এবং সমর্থন জানান। এদিকে প্রশ্নোত্তর পর্বে সাউন্ড সিস্টেমের বিভ্রাটের কারণে প্রশ্নকারী সাংবাদিকদের প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভালভাবে পৌছাচ্ছিল না। তাই চিরকুটের মাধ্যমে কিছু প্রশ্ন গ্রহণ করা হয়। এসব চিরকুট হাতে নিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকার নাম উল্লেখসহ বলেন, ‘…এটি পত্রিকা না ইলেকট্রনিক মিডিয়া। …পত্রিকা নতুন। এমনিই পত্রিকা জর্জরিত।’

এর কিছুক্ষণ পর একটি অনলাইন পত্রিকার এক সাংবাদিকের প্রশ্নের চিরকুট হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘…অনলাইন। আচ্ছা অনলাইন যেগুলা হয়…এরা কি রেজিস্টার্ড? এগুলো তাহলে রেজিস্ট্রার্ড করা উচিত। উইদাউট রেজিস্ট্রেশনে এভাবে যত্রতত্র কারও তো খোলা উচিত না। যখন রেজিস্ট্রেশন হবে তখন প্রশ্ন করেন উত্তর দেবো, ধন্যবাদ।’

আঞ্চলিক উন্নয়ন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উত্তরাঞ্চল কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর এই দশ বছরে মঙ্গা শব্দটা শোনেননি। শুধু তাই না এমন কোন এলাকা নাই আমি না গিয়েছি। সেখানে ব্যাপক কাজ হচ্ছে।’

প্রস্তাবিত বাজেটে ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘শুধু কি চাকরির মধ্যদিয়ে কর্মসংস্থান হয়? কর্মসংস্থানের কথা আমরা বলেছি, চাকরি দেওয়ার কথা বলিনি। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে আমরা একশ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি। এখন ধান কাটার লোক পাওয়া যায় না। এত বেশি বেকার যদি থাকে, তাহলে তো ধান কাটলেও ৪/৫ শ টাকা পাওয়া যাবে। প্লাস দুই বেলা খাবার বাড়িতে। সেই লোক কেন পাওয়া যাচ্ছে না, বিবেচনা করেছেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে বলেই ধান কাটার লোক নেই।’

প্রস্তাবিত বাজেটি নিয়ে শুক্রবার রাজধানীতে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)র ‘বাজেট পর্যালোচনা’ অনুষ্ঠানের বক্তব্যের সূত্র ধরে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক থাকে, যাদের একটা মানসিক অসুস্থতা থাকে, তাদের কিছুই ভালো লাগে না। আপনি যত ভালো কাজই করেন, তারা কোনো কিছু ভালো খুঁজে পায় না। যখন দেশে একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকে, যখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, সাধারণ মানুষের উন্নতি হয়, তখন তারা কোনোকিছুই ভালো দেখে না। সব কিছুতেই কিন্তু খোঁজে। আমরা যা করছি, তার সুফলটা কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। আর এই ভালো না লাগা পার্টি যারা, তাদের কোনো কিছুতেই ভালো লাগবে না।

সারাবাংলা/এনআর/টিএস

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বাজেট ২০১৯-২০

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর