৪০ মিনিটের বৃষ্টিতেই ‘হাঁটু থেকে কোমর’ পানি
১৫ জুন ২০১৯ ১৭:০৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মাত্র ৪০ মিনিটের বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার বাসা-দোকানেও ঢুকে পড়েছে পানি। নালা আটকে থাকায় বিভিন্ন উঁচু এলাকার সড়কেও পানি জমতে দেখা গেছে। ফলে জলাবদ্ধতায় মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
আষাঢ়ের প্রথমদিন শনিবার (১৫ জুন) সকাল থেকেই চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকায় আকাশ ছিল মেঘলা। দুপুর দেড়টার পর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। আর পৌনে ২টার দিকে শুরু হয় ভারী বাতাসসহ বৃষ্টিপাত।
নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ সারাবাংলাকে জানান, দুপুর পৌনে ২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ঘন্টায় ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যায়। এসময় মাঝারি বৃষ্টিপাতও হয়, যা প্রায় ৪০ মিনিট স্থায়ী ছিল।
আর এই ৪০ মিনিটের বৃষ্টিতেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। ছোট-বড় নালাগুলোর আবর্জনা অপসারণ না করায় সামান্য বৃষ্টিতেও এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
বৃষ্টিতে নগরীর দুই নম্বর গেইট থেকে মুরাদপুরের দিকে সড়কের দুইপাশ এবং জিইসি মোড়ের দিকে সড়কের বড় অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া নগরীর ওয়ারল্যাস গেইট এলাকায়ও নালা উপচে হাঁটু পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এমনকি আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের উপরেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর প্রবর্তক মোড় এলাকা। শুলকবহর, কাতালগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন অলিগলিতেও হাঁটু পানি মাড়িয়ে পথ চলতে দেখা গেছে সেখানকার বাসিন্দাদের। এছাড়া বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, চকবাজার, কাপাসগোলা, পশ্চিম বাকলিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতার পাশাপাশি নগরীর জামালখান, বাগমনিরাম, আন্দরকিল্লা, শুলকবহর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায়ও জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রবর্তক মোড়ে প্রতিবারের মত এবারও বেশি পানি হয়েছে। কি করব, খাল-নালা সব জ্যাম তো। পানি আটকে আছে, বের হতে পারছে না।’
নগরীর প্রবর্তক মোড়ে পানিতে আটকা পড়া অটোরিকশার যাত্রী সাইফুদ্দিন মিঠু বলেন, ‘মাত্র বর্ষা শুরু হয়েছে। এই বৃষ্টিতেই যদি এত জলাবদ্ধতা হয়, তাহলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের কপালে যে কি আছে, সেটা আল্লাহ ভালো বলতে পারবেন। এবার যে গরম পড়েছে, মনে হচ্ছে বৃষ্টি তো আরও হবে।’
মুরাদপুর এলাকায় হাঁটুপানি মাড়িয়ে পাঁচলাইশে আসা সিইপিজেডের পোশাক কারখানার এক কর্মকর্তা সামশুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছর বর্ষা এলে সিডিএ ও সিটি করপোরেশন সুন্দর সুন্দর আশ্বাস দেয়। কিন্তু বাস্তবে আমাদের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ‘
নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকটি এলাকার নালায় পানি জমে গেছে। সেগুলো গড়িয়ে আবার রাস্তায় আসছে। মুরাদপুর-প্রবর্তকের মতো নিচু এলাকাগুলোতে যথেষ্ঠ পানি আছে। ’
কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আরও বলেন, ‘এবার আমরা শুধু ছোট ছোট নালা সংস্কার ও ময়লা অপসারণ করেছি। বড় নালাগুলো জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় পরিস্কার করা হবে। বাস্তবে যেটা হয়েছে- বড় নালা এবং খালে আবর্জনা আটকে আছে। সুতরাং বৃষ্টি হলেই কিন্তু জলাবদ্ধতা ঠেকানো যাবে না।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২০ মে মাত্র ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম