‘রোহিঙ্গা সংকট গোটা অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে’
১৫ জুন ২০১৯ ১৯:১০
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য সিআইসিএ অংশীদারদের স্বতস্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন।
শনিবার (১৫ জুন) তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবের নাভরুজ প্রাসাদে কনফারেন্স অন ইন্টারঅ্যাকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার্স ইন এশিয়ার (সিআইসিএ) পঞ্চম সম্মেলনের ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ সহযোগিতা আশা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। আমরা এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই, এজন্য তাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছি। তবে এতে যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে এই সংকট গোটা অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘ভয়ঙ্কর গণহত্যা ও ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লংঘনের শিকার রোহিঙ্গা জনগণের জন্য বাংলাদেশ তার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। জাতিগত নিধন ও সীমাহীন মানবিক বিপর্যয়ের এই ভয়াবহ ঘটনা পাঠ্যবই নজির হিসেবে স্থান পেয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিজ ভূমি থেকে পালিয়ে প্রতিবেশি দেশে আশ্রয় চাওয়ার পরে মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।’
এই অঞ্চলে বিভিন্ন ইস্যুতে একত্রে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা সহিংস চরমপন্থী, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, জোরপূর্বক উদ্বাস্তু অভিবাসীদের সীমান্ত অতিক্রম করার মতো অনেক গুরুতর সমস্যার মোকবেলা করছি। এজন্য এসব ইস্যুও মোকবেলায় সাড়া দিতে সমন্বিত সহযোগিতা প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনিয়মিত অভিবাসন, মাদক পাচার, আঞ্চলিক দাবি, জাতিগত সংঘাত, বিচ্ছিন্নতাবাদ, অর্থনৈতিক সমস্যা এবং দৃশ্যমান জলবায়ু পরিবর্তন এশিয়া অঞ্চলের নিরাপত্তা ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এশিয়ার শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উন্নয়নে সহযোগিতা জোরদারে বহুজাতিক সংস্থা সিআইসিএ গঠিত হয়েছে। এই জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’ এছাড়া তিনি এশিয়ার নিরাপত্তা ও সহযোগিতার ইস্যু সমাধানে সিআইসিএ সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এশিয়ায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এগুলো অর্জন করতে পারি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গৃহীত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ একথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি আশ্বস্ত করেন, বাংলাদেশ সিআইসিএ লক্ষ্য ও মূলনীতি সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
এই নীতি অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন গুরুত্ব দিয়ে সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সিআইসিএ আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।’
এছাড়া আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সিআইসিএ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপত বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক স্বক্ষমতা জোরদার, সম্পৃক্তকরণ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করছে। সিআইসিএ তৃতীয় দশকে পা রেখেছে। একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সহযোগিতামূলক নতুন এশিয়া বিনির্মাণে অংশীদার হতে বাংলাদেশ তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারবে।’
রিপাবলিক অব তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এমোমাইল রাহমন সম্মেলনের অধিবেশনটির সভাপতিত্ব করেন। ৩৯টি দেশের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ৯টি দেশের প্রেসিডেন্ট, ৩টি দেশের প্রধানমন্ত্রী ও কাতারের আমির এ সম্মেলনে যোগ দেন। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে পঞ্চম সিআইসিএ সম্মেলনের প্রধান আয়োজন শুরু হয়।
সম্মেলনের এবারের প্রতিবাদ্য ‘একটি নিরাপদ ও অধিকতর সমৃদ্ধ সিআইসিএ অঞ্চলের জন্য অভিন্ন লক্ষ্য’। সিআইসিএ হচ্ছে এশিয়ায় শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত বহুজাতিক ফোরাম। সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের হুমকি সমূলে উৎপাটন, অবৈধ মাদক উৎপাদন ও পাচার রোধ এবং এশিয়ার সমৃদ্ধি ও স্থিতিশলতার জন্য বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিও সিআইসিএর অন্যতম লক্ষ্য।
বর্তমানে সিআইসির ২৭টি সদস্য দেশ রয়েছে। এগুলো হলো- চীন, রাশিয়া, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, আজারবাইজান, বাহরাইন, কম্বোডিয়া, মিশর, ভারত, ইরান, ইরাক, ইসরাইল, জর্দান, কাজাখস্থান, কিরগিজস্থান, মঙ্গোলিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, রিপাবলিক অব কোরিয়া, শ্রীলংকা, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকস্তান ও ভিয়েতনাম।
এছাড়া আটটি পর্যবেক্ষক দেশও রয়েছে। এগুলো হল- বেলারুশ, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, লাওস, মালয়েমিয়া, ফিলিপাইন, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা- আইওএম, অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ, লিগ অব আরব স্টেটস এবং পার্লামেন্টারি অ্যাসেম্বলি অব দ্য টার্কিক স্পিকিং কান্ট্রিজসহ পাঁচটি আন্তর্জাতিক সংগঠনও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
এশিয়ার ভূখণ্ড ও জনগণের প্রায় ৯০ শতাংশ সিআইসিএর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অন্তর্ভূক্ত।
অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সচিব কামরুল আহসান ও রাষ্ট্রপতির সচিব সম্পদ বড়ুয়া। সূত্র: বাসস।
সারাবাংলা/এমআই