সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে সচিবের ’না’
১৫ জুন ২০১৯ ১৯:২৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি নাকচ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রাইসুল আলম মণ্ডল। বছরের মাত্র ৬৫ দিন সময় মাছকে দেওয়ার জন্য মৎস্যজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (১৫ জুন) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মৎস্য বিভাগ আয়োজিত আঞ্চলিক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
সচিব রাইসুল আলম বলেন, ‘গত পরশুও (বৃহস্পতিবার) ৬৫ দিন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছিল একটি পক্ষ। মহামান্য হাইকোর্ট সেটা খারিজ করে দিয়েছেন। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য যদি ফিরিয়ে আনতে না পারি, তাহলে তো প্রাণির অস্তিত্বই বিপন্ন হবে। অনেকেই পোনা তৈরি করে সমুদ্রে ঢেলে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু বিষয়গুলো বিজ্ঞানভিত্তিক। এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। আমাদের বিজ্ঞানীরা তো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেন।’
মৎস্যজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা প্রকৃতিকে একটু সময় দিই। আমরা ৩৬৫ দিনের মধ্যে সমুদ্রে মাত্র ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। ৩০০ দিন তো খোলা আছে। এছাড়া সমুদ্র বন্ধ থাকলেও নদী-নালা তো খোলা। মোহনার আগ পর্যন্ত তো আমরা কাউকে মাছ ধরতে নিষেধ করছি না। এখানে তো কোনো অসুবিধা নেই। মাছকে তো প্রজননের সময়টুকু দিতে হবে- ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে হবে; তাদের বড় হওয়ার সময় দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সরকারের দায়িত্বশীল কর্মচারী হিসেবে বলছি- সরকার যদি কোনো একটি সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করেই নেয়। আমাদের একটু সময় দেন। কারও দুঃখ-দুর্দশা বাড়ানো, ইচ্ছাকৃত কাউকে কষ্ট দেওয়া সরকারের কাজ নয়। সরকারের সবচেয়ে বড় আপনজন তার ভূখণ্ডের মানুষ।’
ইলিশের উৎপাদন বাড়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সাগরে ইলিশ বেড়েছে। কেন বেড়েছে? নির্দিষ্ট সময় চিহ্নিত করে আমরা মৎসজীবীদের ইলিশ ধরা থেকে বিরত রেখেছিলাম। সময়টা বদলানো যায় কি-না, কমানো যায় কি-না- তখনও এটা নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপ দাবি তুলেছিল। কিন্তু আমরা এটা করতে পেরেছিলাম বলে ইলিশ বেড়েছে।’
সচিব জানান, ২০১৫ সাল থেকে মাছ ধরা নির্দিষ্ট সময় বন্ধ রাখার নিয়ম চালু হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জেলেদের সংসার চালাতে অসুবিধায় পড়তে হয়। এ বিবেচনায় চলতি বছর থেকে সরকার ওই সময়টাতে জেলেদের চাউল দিয়ে সহযোগিতা করছে। দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত ১৬ লাখ জেলে আছেন। এর মধ্যে ১২টি জেলার ৪২টি উপজেলায় ৪ লাখ ১২ হাজার ৫০০ জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, সাগরে ছোট নৌকায় মাছ ধরাকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার প্রতিবাদে গত ৯ জুন সীতাকুণ্ড উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে কয়েক হাজার জেলে। ওইদিন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো.ইলিয়াস হোসেন তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ পরদিন ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীর শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বরে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মাছ বিক্রেতা ও নৌযান মালিকরা।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম