নদীর গভীরতা জয় করে উঠে আসবে পদ্মাসেতুর ৪২ খুঁটি
১৬ জুন ২০১৯ ০৮:১১
ঢাকা: প্রমত্তা পদ্মার গভীরতার খোঁজ পেতেই সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হয়েছে পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলীদের। তলদেশের খোঁজ পেয়ে সেখানে খুঁটি গড়ে তোলাটাই ছিল সেতুর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যা জুলাই মাসে শেষ করে শতভাগ সফল হবেন সেতুর প্রকৌশলী ও নির্মাণকারীরা। আগামী মাসেই নদীর গভীরতা জয় করা ৪২টি খুঁটি উপরে উঠে আসবে। তখন নদীর তলদেশে থাকবে একেকটি খুঁটি ঘিরে থাকা ছয়টি পাইলসহ ২৯৪টি পাইল। যার ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মাসেতু।
পদ্মাসেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, নদী তলদেশে পিলার নিয়ে যেতে সবেচেয়ে বেশি জটিলতায় পড়েছিল সেতুর নির্মাণ কাজ। প্রায় ছয় মাস কাজ আটকে ছিল কয়েকটি পিলারে গভীরতা কত হবে তা নির্ণয় করতে। তখন প্রয়োজন হয় নকশা পরিবর্তনের। শেষে সংশোধিত নকশা হাতে পেয়ে আবার শুরু হয় কাজ। এই কাজটি জুলাই মাসে শেষ হবে।
সেতু প্রকৌশলীদের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, নদীর পানির প্রায় ৪০ মিটার গভীরে গেলে পাওয়া যায় তলদেশ। ১৩১ ফুটে হয় ৪০ মিটার। সাধারণত ১০ ফুট একতলা ভবনের উচ্চতা। সে হিসেবে পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে পানি পযন্ত উচ্চতা ১৩ তলা ভবনের সমান। আর নদী তলদেশে হঠাৎ খরস্রোতে মাটি আরও ৬০ থেকে ৬৫ মিটার সরে গিয়ে খাদ তৈরি হয়। ২১৩ ফুটে হয় ৬৫ মিটার। অর্থাৎ প্রায় ২১ তলা সমান ভবন মাটি পদ্মার নিচে যে কোনো সময় ধস নেমে সরে পড়ে। যে কারণে ১৩ তলা সমান ভবন ও ২১ তলা ভবন মিলিয়ে ৩৪ তলা গভীরে নিয়ে যেতে হবে পাইল্। এসব প্রকৌশল অংক কষে ১২০ মিটার গভীরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পদ্মা সেতুর একেকটি পাইল। যার ফলে নদীগর্ভে ৪০ তলা ভবনের একটি অবকাঠামো গড়তে হয়েছে।
পদ্মা সেতুর পিলারের (৬ পাইলে হয় ১ পিলার) একেকটি পাইল লোড ৮ হাজার ২০০ টন আর প্রতিটি পিলার (পিয়ার) লোড ৫০ হাজার টনের। পৃথিবীর অন্য কোনো সেতুর পিলারে এত লোড দেওয়া হয়নি জানিয়েছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ।
পদ্মা মূল সেতুর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের জানান, জুলাই মাসে সেতুর সব পিয়ার পাইলিং শেষ হচ্ছে। তখন বাকি থাকবে শুধু সুপারস্ট্রাকচার অংশের কাজ। এ কাজের মধ্যে রয়েছে স্প্যান বসানো আর রোডস্লাব বসিয়ে সড়ক পথ নির্মাণ।
পদ্মাসেতু নির্মাণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর বিজ্র ইঞ্জিনিয়ারিং সূত্র জানায়, সেতুর ৪২টি খুঁটির ২৯৪ পাইলের মধ্যে ২৩৬টি পুরো এবং ১৬টির অর্ধেক নদীর তলদেশের গেঁথে দেওয়া হয়েছে। বাকি খুঁটিগুলোর কাজ জুলাই মাসে পুরোপুরি শেষ হবে।
পদ্মাসেতুর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান ড জামিলুর রেজা চৌধুরী দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, পদ্মানদীর শুধু মাওয়া পয়েন্টে মাত্র ২০ সেকেন্ডে যে পানি প্রবাহিত হয় তা রাজধানী ঢাকার দেড় কোটি মানুষের সারাদিনের যত পানি লাগে তার সমান। হিসাব মতে, পদ্মা নদীতে প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহ রয়েছে। পানি প্রবাহের দিক বিবেচনায় বিশ্বে আমাজান নদীর পরেই এই প্রমত্তা পদ্মা।
এমন প্রমত্তার মধ্যেই বসে গেছে বেশিরভাগ পিলার। জুলাই মাসে পিলারযজ্ঞ শেষ হবে।
সেতু প্রকৌশলীরা জানান, পদ্মা সেতুর প্রতিটি পাইল লোড ৮ হাজার ২০০ টন আর প্রতিটি পিলার (পিয়ার) লোড ৫০ হাজার টনের। পৃথিবীর অন্য কোন সেতুর পিলারে এত লোড দেওয়া হয়নি।
এখন পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ ৭৮ ভাগ, নদী শাসনের কাজ ৫৭ ভাগ এবং সব মিলিয়ে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৬৯ শতভাগ।
পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল চার বছর আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর আগামী বছর চালু করবে সরকার। দীর্ঘ এ সেতুনির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর দেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামো নির্মাণের সব খরচ বহন করছে বাংলাদেশ সরকার নিজে।
সারাবাংলা/এসএ/একে