হাওর ও চর উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগের তাগিদ
১৬ জুন ২০১৯ ১৫:৪৮
ঢাকা: দেশে প্রায় ৮ হাজার বর্গকিলোমিটার হাওর এবং ৮ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি এলাকাজুড়ে চর রয়েছে। দেশের বিশাল এই এলাকার মধ্যে হাওর অঞ্চল বছরের ছয়মাস থাকে পানির নিচে। প্রায় ১৭ ধরনের উন্নয়ন বাধা রয়েছে এসব হাওর এলাকায়। এসব বাধা পেরিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন সহজ নয়। এজন্য সরকারকে হাওর ও চর উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
রোববার (১৬ জুন) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘হাওর ও চর উন্নয়ন, আপনার জানা- আপনার ভাবনা’শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরা হয়ে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয, ময়মনসিংহ এবং হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এই কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান এমপি, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলমসহ সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমি হাওর অঞ্চলের সন্তান। সুতরাং সমস্যাগুলো আমার জানা। আমি মনে করি, এই অঞ্চলে প্রধান সমস্যা হচ্ছে- বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ। আমার দুই ভাই মারা গেছেন পানির কারণে। সুতরাং আমার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে হাওর অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা। সে লক্ষ্যেই আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
ড. শামসুল আলম বলেন, ‘শতবছর মেয়াদী ডেল্টা প্লানে ৬টি হট স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওর ও চর এলাকাও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। সেই সঙ্গে বন্যা ঝুঁকি মোকাবেলা, নদী ব্যবস্থাপনা, পানির নিরাপত্তা, হাওর ও জলাভূমির জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো উঠে এসেছে। ’
কর্মশালায় বলা হয়, হাওর অঞ্চল বছরের প্রায় ছয় মাস পানির নিচে থাকে। দেশের পূর্ব-উত্তরাংশ কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলোট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার,হবিগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার ৫৭টি উপজেলা নিয়ে হাওয়া এলাকা গঠিত। প্রায় ৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৯৩৭ মিলিয়ন লোক বাস করে। অন্যদিকে নদীর বুকে জেগে ওঠে চর। চর সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- অস্থায়ী চর, স্বল্পস্থায়ী চর ও স্থায়ী চর। দেশের যেসব অঞ্চলে চর বেশি রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- রাজশাহী, ময়মনসিংহ, রংপুর, ঢাকা, বরিশাল চাঁদপুর এবং চট্টগ্রামের দক্ষিণ-পূর্বাংশ। এসব এলাকায় ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৮ হেক্টর চর রয়েছে।
কর্মশালায় আরও বলা হয়, হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে প্রধান বাধা হচ্ছে- আকস্মিক ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, ভারী বৃষ্টিপাত, দুর্বল পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা, অনুন্নত হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার অভাব, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সামাজিক অবক্ষয়। এছাড়াও রয়েছে কর্দমাক্ত মাটি, খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থা, শুকনো মৌসুমে অধিকাংশ ভূমিহীন কৃষকের ছয়মাস বেকারত্ব, মৎস্য আহরণ ও কৃষিজমির ওপর প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ, বসত ভিটায় ভাঙ্গন, অপ্রতুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের বিরূপ যাতায়াত ব্যবস্থা, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী, অপ্রতুল স্বাস্থ্য সেবা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুলনামূলক অনুপস্থিতি।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম