নাকে আসে গাছপাকা আমের ঘ্রাণ
১৬ জুন ২০১৯ ২০:২৭
ঢাকা: নানা জাতের ফল সাজিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রকাণ্ড তোরণ। আরেকটু এগুলেই চোখে পড়বে দেশি ফলের সমাহার। আর মেলা চত্বরে দাঁড়ালে গাছপাকা ফলের ম-ম ঘ্রাণ আপনাকে ব্যস্ত ঢাকা থেকে সোজা নিয়ে যাবে গ্রীষ্মের ছুটিতে সেই ছোটবেলার নানাবাড়িতে।
রাজধানীর খামারবাড়িতে শুরু হয়েছে ‘ফলদ বৃক্ষ রোপন ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী ২০১৯’। রোববার (১৬ জুন) খামারবাড়ির আ. ক. ম. গিয়াস উদ্দীন অডিটোরিয়ামে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৮ জুন পর্যন্ত।
এদিন কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
দেশি ফলের সমাহার বলা হলেও, স্টলগুলোতে আমের আধিক্যই বেশি। জিভে জল আনা রাজশাহীর আম আর দিনাজপুরের লিচুতেই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি দেখা যায়। আরও রয়েছে কাঁঠাল, জাম, পেঁপে, আতা, আমড়া, উইতে, কাজী পেয়ারা, জারা লেবু, ডালিম, জামরুল, আমলকী, লটকন, তাল, দেশি খেজুর, লেবু, জাম্বুরা, আঁশফল, দেশে চাষ করা ড্রাগন ফল ও মাল্টা।
আয়োজকরা জানান, এসব ফল ফরমালিন ও কীটনাশকমুক্ত। চাষে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব সার।
মেলা প্রাঙ্গণে পাওয়া যাচ্ছে ফলদ গাছও। আমরুপালি, বারি-৬, বারি-১১ ও বীণা আম রাখা হয়েছে কেবল প্রদর্শনীর জন্য। বিক্রি করা হচ্ছে অন্য জাতের আম। দাম নেওয়া হচ্ছে বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই। স্টলভেদে প্রতিকেজি গোপালভোগ, হিমসাগর, ফজলি আম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। দিনাজপুরের লিচু ৪০০ টাকা শ’। আকার ভেদে ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
এবারের ফল প্রদর্শনীর প্রতিপাদ্য হলো ‘পরিকল্পিত ফল চাষ যোগাবে পুষ্টি সম্মত খাবার’। তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ফ্রেশ ফ্রুটস কর্ণারের বিক্রেতা মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা স্টলে বিভিন্ন জাতের ফল তুলেছি। এসব ফল সম্পূর্ণ কেমিকেল মুক্ত। ক্রেতারা নিশ্চিন্তে এসব ফল কিনতে পারবেন।’
কেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে জানতে চাইলে কাদেরিয়া এগ্রোর বিক্রেতা বলেন, ‘সাধারণত মেলার প্রথমদিকে আমরা তেমন ফল বিক্রি করতে পারি না। এখন যারা আসছেন তারা মূলত ঘুরে ঘুরে স্টল যাচাই করছেন। আশা করছি, সময় যতো যাবে আমাদের বিক্রিও ততো বাড়বে।’
মেলায় এসেছেন জহুরা বেগম। তিনি বলেন, ‘আজ এসেছি ঘুরে দেখতে, কী কী ফল পাওয়া যাচ্ছে, কেমন দাম এসব যাচাই করতে। আগামীকাল বা পরশু এসে কিছু ফল কিনবো।’
উদ্বোধনী বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশীয় ফলের জাত সংরক্ষণ এবং বৃক্ষ রোপনে উৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ। আমরা কোনো দেশি ফলই বিলুপ্ত হতে দেবো না। দেশি ফল বিদেশে রফতানি করা যায় কি না সেটাও ভাবছি আমরা। তাছাড়া গবেষণার মাধ্যমে নতুন জাত উদ্ভাবন ও সেগুলো চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করাও চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি আমরা।’
এর আগে মেলা উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে আ. ক. ম. গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটোরিয়াম চত্বর পর্যন্ত বর্ণাঢ্য এক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশ নেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সনৎ কুমার সাহা, হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক চণ্ডী দাস কুণ্ডু, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবীর ইকরামুল হক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মীর নূরুল আলমসহ অনেকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন মজুমদার সারাবাংলাকে জানান, মেলায় সরকারি ও বেসরকারি মোট ৮৩টি স্টল অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি বিপণন অধিদফতরের স্টলও রয়েছে। অনেক বিদেশি ফল এখন আমাদের দেশে চাষ হচ্ছে, সেসব ফল আমরা প্রদর্শনীতে এনেছি। পাশপাশি স্বল্প পরিচিত বিভিন্ন জাতের ফলও প্রদর্শন করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/ওএম/এটি