Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নেত্রকোনায় শক্তিশালী হচ্ছে আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক


১৮ জুন ২০১৯ ০৭:০০

ঢাকা: প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ হলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে নেত্রকোনার আহরিত কৃষি, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ বাজারজাত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া দর্শনীয় স্থান হিসেবে সুখ্যাতি থাকলেও কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেই পর্যটনের সম্ভাবনা পূর্ণ মাত্রায় কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণেই আঞ্চলিক সড়ক নেওয়ার্ক শক্তিশালীর করার যে পরিকল্পনা সরকার হাতে নিয়েছে, তার অংশ হিসেবে নেত্রকোনার আঞ্চলিক সড়ক কাঠামোও উন্নত ও শক্তিশালী করা হবে।

বিজ্ঞাপন

এ জন্য ‘নেত্রকোণা-কেন্দুয়া-আঠারবাড়ী-ঈশ্বরগঞ্জ জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ৭১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার (১৮ জুন) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পেতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সড়ক নেটওয়ার্কের মান উন্নয়নের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের সম্পদের পূর্ণ ব্যবহারের পাশাপাশি পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হবে। এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বেশকিছু সুপারিশ দিয়ে প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সুপারিশগুলো প্রতিপালন করা হয়। প্রক্রিয়াকরণ শেষ করায় একনেকের আগামী সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।

নেত্রকোনা- কেন্দুয়া-আঠারবাড়ী-ঈশ্বরগঞ্জ মহাসড়কের মধ্যে নেত্রকোনা-কেন্দুয়া সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা মহাসড়ক। এ সড়কটি ময়মনসিংহ-রঘুরামপুর হয়ে নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ-ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের ৪০তম কিলোমিটার নেত্রকোণা শহর থেকে কেন্দুয়া উপজেলা পর্যন্ত সংযুক্ত করেছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, নেত্রকোনা জেলাটি প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে স্থানীয়ভাবে আহরিত কৃষি, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ বাজারজাতকরণ কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ সীমাবদ্ধতা দূর হবে। এতে এ অঞ্চলের জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে। তাদের মাথাপিছু আয় বাড়বে, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে স্থানীয়দের উন্নত চিকিৎসাও নিশ্চিত হবে। এছাড়া, এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য প্রতিবছর প্রচুর পর্যটককের আগমন ঘটে। উন্নত সড়ক ব্যবস্থা তাই এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এ জেলা মহাসড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ২৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার সড়ক ৫ দশমিক ৫০ মিটার প্রশস্ত। বাকি ১৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সড়কের প্রস্থ ৩ দশমিক ৭০ মিটার। চাপা এসব সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত বালু, পাথর, কয়লা ও কাঠবাহী ভারী ট্রাক চলাচল করায় সড়কের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। এছাড়া এ সড়কে একটি পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ আরসিসি সেতু এবং পাঁচটি পাইপ কালভার্টসহ ২১টি ছোট-বড় কালভার্ট রয়েছে। ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে পাইপ কালভার্ট ভেঙে প্রায়ই সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় জনদুর্ভোগ দেখা দেয়। এই আরসিসি সেতু এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কালভার্টগুলো পরিবর্তন করে আরসিসি কালভার্ট পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, আঠারবাড়ি-সোহাগীবাজার-ঈশ্বরগঞ্জ সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার। এ সড়কটি অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত পথে নেত্রকোণা জেলার সঙ্গে কেন্দুয়া হয়ে ময়মনসিংহ জেলার যোগাযোগ স্থাপন করেছে। সড়কটির দুই পাশে অনেক কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। ওই অঞ্চলে উৎপাদিত এসব কৃষিপণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সড়কটির ঈশ্বরগঞ্জ অংশের ২ দশমিক ৬ কিলোমিটার অংশের প্রস্থ ১৮ ফুট, অবশিষ্ট অংশটুকু মাত্র ১২ ফুট চওড়া।

মন্ত্রণালয় বলছে, সড়কের ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল এবং প্রস্থ কম হওয়ায় যানবাহন চলাচলে যেমন অসুবিধা হয়, তেমনি সড়ক দুর্ঘটনার কারণে জানমালেরও ক্ষতি হচ্ছে। তাই সড়কটি জরুরিভিত্তিতে চওড়া করা প্রয়োজন।

এ জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে ৪৫৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ওপর গত বছরের ২৮ অক্টোবর প্রকল্প মুল্যায়ন কমিটি ( পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সুপারিশ অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত ডিপিপির প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে— ৭১ দশমিক ৪৯ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ, ৮ দশমিক ৪৭ লাখ ঘনমিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ, ২৭ দশমিক ৫২ কিলোমিটার মজবুতিকরণ ও প্রশস্তকরণ, ৯ দশমিক ১২ কিলোমিটার মজবুতিকরণ, ৩৬ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়কে হার্ডশোল্ডার নির্মাণ, ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ, ৮৬ দশমিক ৯৬ মিটার পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, ১০০টি সাইন পোস্ট, ১০০টি ট্রাফিক সাইন, ১২০০টি গাইড পোস্ট এবং ইউটিলিটি সিফটিং, জেনারেল অ্যান্ড সাইট ফ্যাসিলিটিজসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সুবীর কিশোর চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নেত্রকোনা জেলার দুইটি উপজেলা ও ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। এছাড়া প্রকল্প এলাকার জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর/এসবি

একনেক নেত্রকোনা নেত্রকোনা- কেন্দুয়া-আঠারবাড়ী-ঈশ্বরগঞ্জ সড়ক নেটওয়ার্ক

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর