ভাগনেকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন সোহেল তাজ
১৮ জুন ২০১৯ ০০:৩৮
ঢাকা: আট দিন ধরে নিখোঁজ সৈয়দ ইফতেখার আলম সৌরভকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সৌরভের মামা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ। এর জন্য প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
সোমবার (১৭ জুন) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর–রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সোহেল তাজ এ আর্জি জানান। এসময় তিনি আরও বলেন, আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। কার কী পরিচয়, তা মুখ্য নয়; কিন্তু স্বাধীন দেশে কোনো গুম কিংবা অপহৃত হোক— এটা আমাদের কারওই কাম্য নয়।
গত ৯ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে সোহেল তাজের ভাগনে সৈয়দ ইফতেখার আলম সৌরভ অপহরণের শিকার হন। এর আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ বিষয়ে পোস্ট দিয়ে ভাগনেকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধও করেছিলেন তিনি অপহরণকারীদের প্রতি। তবে সৌরভকে ফিরে পাওয়া যায়নি। সে কারণে এদিন সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সোহেল তাজের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান ও বাবা মো. ইদ্রিস আলম। মা ইয়াসমিন আরজুমান তিনি বলেন, আমি একজন মা হিসেবে আমার হারানো ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
সংবাদ সম্মেলনে সৌরভের মা বলেন, ২০১৭ সালে সৌরভ ‘বেঙ্গল বিউটি’ নামে একটি সিনেমা তৈরি করে। ওই সময় ‘সওদা’ নামে এক মেয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সৌরভকে সওদা মোবাইলেই বিয়ে করার প্রস্তাব ও রাজি না হলে নিজের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তবে সওদার পরিবার তার অমতে তাকে অন্য এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেয়। ২০১৮ সালে সে বিয়ে ভেঙে গেলে সওদার বাবা এর জন্য সৌরভকে দায়ী করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
সৌরভের মা বলেন, এর জের ধরে এ বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি সৌরভকে উত্তরায় র্যাব সদর দফতরে ডেকে নিয়ে সওদা’কে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ও ভয়-ভীতি দেখানো হয়। তার মোবাইলের সব ডাটাও ডিলিট করে দেওয়া হয়। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি সৌরভকে বনানী থানায় ডেকে নিয়েও বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়।
সৌরভের মায়ের অভিযোগ, একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সৌরভের কর্মস্থলে গিয়ে তার সন্ধান করেন। ওই সময় তিনি কর্মস্থলে না থাকায় সৌরভের ঊর্ধ্বতনদের বলেন, সৌরভ যেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেই সূত্র ধরে সৌরভকে একটি রেস্টুরেন্টে ডেকে নেন ওই গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। সেখানে সওদা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতে সৌরভ গিয়েছেন কি না। সৌরভ সম্পর্কে তাদের যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো সাজানো এবং জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য ঊর্ধ্বতনদের জানাবেন বলে ওই গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সৌরভকে ছেড়ে দেন।
সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, ১৬ মে বনানীতে তাদের এক পারিবারিক বন্ধুর বাসা থেকেও আরেক গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে একদল লোক সৌরভকে তুলে নিয়ে যান। পরদিন রাত পৌনে ১২টার দিকে ওই একই বাসায় তারা সৌরভকে ফেরতও দিয়ে যায়। পরে সৌরভের কাছে জানা যায়, তারাও সওদা’র বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। পরে তারা সৌরভের সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সৌরভকে সওদা’র কাছ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। সৌরভকে চাকরি দেওয়ার কথাও বলা হয়।
আরজুমান বলেন, গত ৮ জুন দুপুরে সৌরভের কাছে র্যাব পরিচয়ে ফোন দিয়ে চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেডি করতে বলা হয়। পরদিন ৯ জুন বিকেল ৩টায় ফের সৌরভকে ফোন দিয়ে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মিমি সুপার মার্কেটের আগোরার সামনে থাকতে বলা হয়। সৌরভ সেখানে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি।
এ ঘটনায় পরদিন ৯ জুন রাতে সৌরভের বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ ইদ্রিস আলম পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ভাগনে সৌরভের সন্ধান চেয়ে সোহেল তাজ বলেন, সৌরভের মামা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। ওরই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে সাধারণ নাগরিকদের অবস্থা কী হতে পারে? আজ আমার ভাগনে, কাল হয়তো আপনার ভাইও এমন ঘটনার শিকার হতে পারে। আরেকদিন হয়তো আপনার সন্তান। তাই কার কী পরিচয়, সেটা মুখ্য বিষয় নয়, কারও জন্যই এমন পরিণতির শিকার হওয়া আমাদের কাম্য নয়।
এ সময় সোহেল তাজ আরও বলেন, আমাদের আজকের সংবাদ সম্মেলনের মূল বিষয় সৌরভকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় ফেরত পাওয়া। আমি বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজির সঙ্গে কথা বলেছি। আমি আশা করব, আইন বহির্ভূত ও ক্ষমতার অপব্যবহার যদি কেউ করে থাকে, এ বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর