‘সরকারি কৌশলীদের সুবিধার্থে অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনে সক্রিয় সরকার’

সংসদ ভবন থেকে: আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সরকারি কৌশলীদের মামলা পরিচালনার সুবিধার্থে অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় আছে। এ বিষয়ে কার্যক্রম চলমান থাকলেও সুনিদিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত হয়নি।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহর টেবিলে উপস্থাপিত প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী সংসদকে এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেলে এ অধিবেশন শুরু হয়।

মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত গণহত্যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য সরকার ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২’ নামে দুটি ট্রাইবুনাল গঠন করেছে। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে ট্রাইবুনাল-১ পুনঃর্গঠন করে বিচারাধীন কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে। তবে, ট্রাইব্যুনাল-২-এর কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দুটি ট্রাইব্যুনালের সহায়তায় ৩০ জনকে সাজা প্রদান করা হয়েছে।’’

সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিচারাধীন মোট মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৩টি। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বিভিন্নমূখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন আদালত সৃষ্টি, আদালতের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারকদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণসহ মামলা নিষ্পত্তিতে তদারকি বৃদ্ধিসহ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।’

‘সারাদেশের বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে বিচার কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এজলাস সংকট নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আইন ও বিচার বিভাগ। বিচার কাজে গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনকে গতিশীল করা হয়েছে যাতে শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া যায়,—বলেন আইনমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘এ লক্ষ্যে ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ছয় ও হাইকোর্ট বিভাগে ২৮ জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনকে গতিশীল করা হয়েছে যাতে অধস্তন আদালতে শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া যায়। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত অধস্তন আদালতে মোট ৫৭১ জন সহকারী জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

‘এছাড়া ৯৯ জন সহকারী জজ নিয়োগের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আরও ১০০ জন সহকারী জজ নিয়োগের জন্য জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন বরাবর চাহিদাপত্রও প্রেরণ করা হয়েছে। সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সারাদেশে আরও ৪১টি ট্রাইব্যুনাল তৈরি করেছে। নতুন তৈরি এ ট্রাইব্যুনালসহ মোট ৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন দম ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর অধীন দায়ের করা মামলাসগুলো নিষ্পত্তি করা হচ্ছে, বলেও জানান তিনি।

সাতটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যার মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ এর অধীনে দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এই ট্রাইব্যুনালের জন্য ২৪০টি সহায়ক কর্মচারীর পদও সৃষ্টি করা হয়েছে।’

শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘সারাদেশে নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজিদের জাতীয়করণ করার কোনো পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের নেই। মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা-২০০৯ অনুযায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রারদের সরকার শুধুমাত্র লাইসেন্স প্রদান করে থাকেন। তাই তাদের জাতীয়করণের আওতায় আনার আইনগত সুযোগ নেই।’

নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘নিবন্ধন অধিদফতরে কর্মরত সাব-রেজিস্ট্রারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে, বিগত ১০ বছরে এ অপরাধে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। কারণ অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চাকরি বহাল রাখা হয়েছে।’

মোহাম্মদ শহিদ ইসলামের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাণঘাতী মাদকের অপব্যবহার রোধ ও মাদক প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮-এর আওতায় মাদকবিরোধী আদালত, ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।’

বিএনপির এমপি মো. হারুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বার কাউন্সিলে সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে কুশলী নির্মাতা লিমিটেড।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমআই

আইনমন্ত্রী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সরকারি কৌশলী সংসদ