কেন সেনাবাহিনীর চক্ষুশূল হয়েছিলেন মুরসি?
১৮ জুন ২০১৯ ২১:৪৭
মিসরে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হলেন মুহাম্মদ মুরসি। তার রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্য হলেও ছন্দপতন ঘটেছে খুব দ্রুত। ২০১৩ সালে তাহরির স্কয়ারে গণবিক্ষোভের জের ধরে মিসরের সেনাবাহিনী মুসলিম ব্রাদারহুডের এই জনপ্রিয় নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরপর রাষ্ট্রীয় কাজে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে তাকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন সাজা। সোমবার (১৭ জুন) মাত্র ৬৭ বছর বয়সে আদালতে তার মৃত্যু হয় বলে জানায় মিশর সরকার। মুরসির মৃত্যুর পর তার অনুগতরা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছের। কেউ কেউ জানতে চাইছেন কেন মিশরের এই প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন সেনাবাহিনীর চক্ষুশূল?
মুরসির জন্ম ১৯৫১ সালে মিশরের এল আদোয়াহ’র এক গ্রামে। ১৯৭০ সালে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল শাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে পিএইচডি করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেখানে কিছুসময় শিক্ষকতা শেষে তিনি ফিরে আসেন নিজ দেশ মিসরে, জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। মুরসি ২০০০ সালে মিসরের সংসদে সদস্যপদে নির্বাচিত হন। এরপর মেধা ও যোগ্যতায় মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন শীর্ষ নেতায় আসীন হন। ২০১২ সালে মিশরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক দল ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টি থেকে প্রার্থী মনোনীত হন তিনি। রেকর্ড পরিমাণ ২৫.৫% ভোট পেয়ে আহমদ শফিকের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুরসি ক্ষমতায় বসেন।
তবে সমালোচনা রয়েছে, ২০১২ সালের জুন থেকে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে মুরসি মিসরে ইসলামিকরণের চেষ্টা করেছেন। তার ইসলামপন্থী সংবিধান প্রণয়নের চেষ্টা অনেককে ক্ষুব্ধ করেছে। এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নেও তিনি সফলতা পাননি। মুরসি ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ নিতে চেয়েছেন যা পছন্দ হয়নি ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের। এছাড়া, হোসনি মোবারক আমলের সেনা অফিসারদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে চেষ্টা করেছেন তিনি। এতে সেনাবাহিনীও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে তার ওপর।
২০১৩ সালে মুরসির বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। তাহরির স্কয়ারেই জড়ো হয় লাখো আন্দোলনকারী। আর এই সুযোগে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। এরপর মুরসিকে আটক করে তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ, গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ক্ষমতায় বসেন মিশরের সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি।
মিশরের গণমাধ্যমে বলা হয়, মামলার শুনানি চলাকালীন ২০ মিনিটের দীর্ঘ বক্তব্য রাখতে রাখতে এজলাসেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মুরসি। পরবর্তীতে তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করলে ডাক্তার মুরসিকে মৃত ঘোষণা করে।
তার মৃত্যুর খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হিউমান রাইট ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) প্রধান নির্বাহী টুইটারে বলেন, সরকারি হেফাজতে মুরসির মৃত্যু অত্যন্ত ভয়ানক। মুরসি অসুস্থ ছিলেন তবে সরকারের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসার উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।
মুহাম্মদ মুরসির ছেলে আহমেদ মুরসি তার ফেসবুক পেইজে জানান, মুরসির লাশ তার জন্মশহর সারকানায় নিতে চাইলে সরকার অনুমতি দেয়নি। পরে কায়রোর নাসায় মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রাক্তন নেতাদের পাশে গোপনেই দাফন করা হয় মুরসিকে।
সারাবাংলা/এনএইচ
বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান ও উইকিপিডিয়া থেকে তথ্য সংগৃহীত