ইয়াবা সেবনের পর শাকিবকে খুন করে ছিনতাইকারীরা
১৯ জুন ২০১৯ ০৫:৪৫
ঢাকা: ‘ছিনতাইয়ের কাজে যাওয়ার আগে তারা ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করত। ওইদিনও তারা ইয়াবা সেবন করেছিল। কিন্তু সেদিন তারা তাদের হাতেই ছিনতাইয়ের শিকার এক ছেলের বাধার মুখে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে শাকিব (২০) নামের ছেলেটিকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই শাকিবের মৃত্যু হয়।’ বলছিলেন র্যাব-১-এর অধিনায়ক সারওয়ার বিন কাশেম।
ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে শাকিব নিহতের চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে সোমবার (১৭ জুন) গ্রেফতার করেছে র্যাব-১। গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসে শাকিবকে খুন করার আসল উদ্দেশ্য। মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সারওয়ার বিন কাশেম।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক সারওয়ার বলেন, ‘দুই ভাই-বোনের মধ্যে শাকিবই সবার বড়। ছোটবেলায় মা মারা গেছে। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় বাবাও এখন বেকার। তাই শাকিবের ওপরই ভরসা করত পুরো পরিবার। সে একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। তার উপার্জনেই চলত সবকিছু। তাই পরিবারের একমাত্র অবলম্বন শাকিবকে হারিয়ে তার বাবা রফিকুল ইসলাম শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘সোমবার (১৫ জুন) বিকেলে বন্ধু শিপনকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর উত্তরখান থানার নদীর পাড় বাটুলিয়া এলাকায় ঘুরতে যায় শাকিব। এই সময় কয়েকজন ছিনতাইকারী সাকিব এবং তার বন্ধুর কাছে থাকা মোবাইল এবং টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য ইচ্ছে করে ঝগড়া বাধায়। তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে শাকিব এবং তার বন্ধুর বুকে ও পিঠে ধারালো ছুরি দিয়ে গুরুতরভাবে জখম করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এতে ঘটনাস্থলেই শাকিবের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় উত্তরখান থানায় অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে শাকিবের পরিবার। এরপরেই এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্তে মাঠে নামে র্যাব-১।
তিনি আরও বলেন, শাকিব হত্যার এই মামলাটি ছিল ক্লু-লেস। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাই ভিন্ন পেশার আড়ালে মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা এবং ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। ঘটনার পরপরই তারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় মামলার কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু তদন্তের এক পর্যায়ে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের রাজধানীর উত্তরখান থানাধীন বাটুলিয়া এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করে। গ্রেফতার তিনজন হলেন- মো. শাহীন মিয়া ওরফে ব্ল্যাক শাহীন (২৪), মো. মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে মিজু (২৪) মো. ফরহাদ হোসেন (২৬)।
পরবর্তী সময়ে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে রাজধানীর উত্তরখান থানার আটিপাড়ার এলাকার কাঁঠালতলা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা ও ৩টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
র্যাব কর্মকর্তা সারওয়ার আরও জানান, টঙ্গীর সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যা নিকেতন থেকে ২০১৫ সালে এসএসসি পাশ করার পর পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে শাহীন মিয়া ওরফে ব্ল্যাক শাহীন। সে দীর্ঘ দিন ধরে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করে আসছে বলে স্বীকার করেছে। পাশাপাশি সে ইয়াবা ও গাঁজা ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। তার বিরুদ্ধে উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানায় ছিনতাই, মারামারি ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।
আসামিদের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের দিন তারা ৭/৮ জন ঘটনাস্থলেই ইয়াবা সেবন করছিল। এমন সময় তারা শাকিব এবং তার বন্ধু শিপনকে দেখে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাদের কাছে গিয়ে গায়ে পড়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তারা মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিতে চাইলে শাকিব বাধা দেয়। এসময় দুই পক্ষের হাতাহাতি শুরু হলে রুবেল তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে সাকিব ও শিপনকে উপর্যুপরি আঘাত করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই শাকিবের মৃত্যু হয়।
র্যব কর্মকর্তা আরও জানান, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্যদের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদেরকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সারাবাংলা/এসএইচ/পিটিএম