Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আপত্তি ওঠা রোহিঙ্গা ইস্যুতে জুনের শেষে বৈঠক চায় ঢাকা


১৯ জুন ২০১৯ ০৮:৫৬

ঢাকা: প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারকে কয়েক দফায় রোহিঙ্গাদের তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের জন্য ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমার প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছে। মিয়ানমারের যাচাই-বাছাইয়ে আপত্তি ওঠা সেই রোহিঙ্গাদের বিষয় সমাধানে চলতি জুন মাসের শেষ দিকে কক্সবাজারে নেপিডো’র সঙ্গে বৈঠক করতে চায় ঢাকা।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম সোমবার (১৭ জুন) সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ৩ মে (শুক্রবার) রোহিঙ্গা সংকট কাটাতে ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ বৈঠক নেপিডোতে অনুষ্ঠিত হয়।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ঢাকার প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি নেপিডো

ওই বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে নেপিডোকে প্রস্তাব দেয়া হয়, প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার যেসব রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আপত্তি তুলেছে, সে বিষয়ে দুই পক্ষ বৈঠক করে সমাধানে আসতে পারে। ঢাকার এই প্রস্তাবে সম্মতি জানায় নেপিডো।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, মিয়ানমারের যাচাই-বাছাইয়ে আপত্তি ওঠা রোহিঙ্গাদের বিষয় সমাধানের জন্য দুই পক্ষের সম্মতিতে বৈঠকটি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হবে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম মূলত এই বৈঠকের বিষয়টি সমন্বয় করবেন। কমিশনার বৈঠকের সময় জানালেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তা মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিকে জানানো হবে।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এর মধ্যেই বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়েছি। চলতি জুন মাসের শেষ দিকে বৈঠকটি করতে চাই। আজকালের মধ্যে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে চিঠি দেবো।’

বিজ্ঞাপন

কমিশনার আবুল কালাম আরও বলেন, ‘চলতি মাসের শেষ দিকে বৈঠকটি করতে আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু মিয়ানমারের সম্মতি জানা প্রয়োজন বা তাদের সুবিধাজনক সময় কখন, সেটাও জানা প্রয়োজন। তাই আমাদের বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেবো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে চূড়ান্ত তারিখ ঠিক করবে।’

এদিকে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে গত ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়।

ঢাকা-নেপিডোর মধ্যে সই হওয়া ওই চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তবে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, চুক্তি সই হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্টো একাধিক অজুহাতে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বারবার এড়িয়ে গেছে মিয়ানমার।

আপত্তি ওঠা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে শিগগিরই ঢাকায় বৈঠক

শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করার কথা ছিল মিয়ানমারের। কিন্তু সেই পরিবেশও তৈরি করতে পারেনি দেশটি। জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরাও এ কথা বলেছেন। তারা বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেনি মিয়ানমার। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমার সরকার আন্তরিক নয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা সোমবার সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আজও (সোমবার) মিয়ানমারের কাছে জানতে চেয়েছি। কিন্তু মিয়ানমার প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য কোনো তারিখ বলতে পারেনি।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে মিয়ানমারের নাগরিক প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এ ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। রাখাইন সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তুমুল সমালোচনা করছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, কুয়েত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ গোটা বিশ্ব।

সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর

নেপিডো রোহিঙ্গা ইস্যু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর