Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাড়ি ছেড়ে সাইকেল চালাও নয়তো হাঁটো


১৯ জুন ২০১৯ ১৬:৪৮

ঢাকা: রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছে যানজটের নগরীতে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও যান্ত্রিক বাহনের কারণে অবর্ণনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা, যানবাহন থেকে নির্গত রাসায়নিকের কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। মূল্যবান জ্বালানি অপচয়ের পাশাপাশি গাড়ির হর্নের শব্দ ও বিষাক্ত ক্ষতিকর ধোঁয়ায় ঢাকাবাসী আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে।

এ সব সমস্যা মিটিয়ে ঢাকাকে পরিবেশবান্ধব ও বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে অনুষ্ঠিত হলো এক বর্ণাঢ্য রিকশা ও সাইকেল র‍্যালি। বুধবার (১৯ জুন) আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ’ এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু উপলক্ষে র‌্যালিটি অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে ঢাকা ছাড়াও ২০ জেলায় আন্তর্জাতিক কারফ্রি সিটিস এলায়েন্সের পক্ষ থেকে র‌্যালি, পথসভা, অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

মূলত ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে মানুষকে অনুৎসাহী করতে ও যান্ত্রিক যান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানুষকে পরিবেশবান্ধব যান ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে সংগঠনটি পৃথিবীব্যাপী কাজ করবে।

রাজধানীর আবাহনী মাঠের সামনে বাংলাদেশ শাখা সংগঠনটির উদ্বোধন করেন ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং এর নির্বাহী পরিচালক ও কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশের আহ্বায়ক দেবরা ইফরইমসন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং এর সহকারী নেটওয়ার্কিং অফিসার মোহাম্মদ মিথুন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা রেহেনা আক্তার এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী এবং অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

‘গাড়ি ছেড়ে সাইকেল চালাও, নয়ত হাঁটো’, ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নয়, প্রবেশগম্য গণপরিবহন চাই’, ‘ফিওয়ার কার, মোর লাইফ’ লেখা ফেস্টুন হাতে নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষ র‌্যালিতে অংশ নেয়। রিকশা ও সাইকেলের এই র‌্যালিটি ধানমন্ডির বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে আবাহনী মাঠের সামনে এসে শেষ হয়।

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ১২টির বেশি দেশে এরইমধ্যে সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। দেশগুলো হল ভারত, নেপাল, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, কানাডা, উগান্ডা, তানজানিয়া, ব্রাজিল, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র।

সংগঠনটি উদ্বোধনকালে দেবরা ইফরইমসন বলেন, ‘ঢাকার স্নিগ্ধতা দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। শহরটি ক্রমেই দূষণ আর জ্যামের শহরে রূপ নিচ্ছে। যানজটের কারণে থেমে যাচ্ছে জীবনের গতি। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকায় যানবাহনের গতি এসে দাঁড়াবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার। এই সাইকেলের গতি আমাদের হাঁটার গতির চেয়েও কম।’

সবাইকে পরিবেশবান্ধন যানবাহন ও স্বপ্নের শহর গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘যান্ত্রিক যানবাহন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে পারব। তাছাড়া সাইকেল, স্কেটিং ও হাঁটার মাধ্যমে নিরাপদ যাতায়াতের পাশাপাশি আমাদের কর্মঘণ্টা বাঁচাতে পারব।’

ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং এর সহকারী নেটওয়ার্কিং অফিসার মোহাম্মদ মিথুন বলেন, ‘যানজটের কারণে বাংলাদেশে বাৎসরিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাশপাশি প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। এসবের মূলে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত যান্ত্রিক যানবাহন। পাশাপাশি অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে নষ্ট হচ্ছে ঢাকার পরিবেশ। শিশুরা খেলার জন্য মাঠ পাচ্ছে না, মানসিকভাবে বিকশিত হতে পারছে না। আমাদের সংগঠনের লক্ষ্য হচ্ছে ঢাকাকে একটি বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলা।’

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, ‘ঢাকায় মাত্র ৯ ভাগ যাতায়াত হয় ব্যক্তিগত গাড়ির মাধ্যমে। কিন্তু শহরের মোট রাস্তার ৭০ ভাগ দখল করে নিয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি। যদিও বলা হয়ে থাকত যানজটের অন্যতম কারণ রিকশা। এটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ঢাকার যেসব রাস্তায় রিকশা বন্ধ করা হয়েছে সেসব রাস্তায় গাড়ির গতি আগে থেকে অনেক কমেছে। যেমন মিরপুর সড়কে রিকশা বন্ধের আগে গাড়ির গতি ছিল ঘন্টায় ১৭.৪ কি.মি.। এখন তা মাত্র ৫ কি.মি. থেকে ৭ কি.মি.। ঢাকার বাস্তবতায় ব্যক্তিগত গাড়ি আদর্শ বাহন নয়। ব্যক্তিগত গাড়ি যানজট বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ ও সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি করছে। সারা পৃথিবীতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে, গণপরিবহনের মান উন্নয়ন করা হচ্ছে। নিরাপদ শহর গড়তে আমাদেরও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

যানজটমুক্ত ঢাকা, নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটার পরিবেশ তৈরি ও গণপরিবহনের মান উন্নয়নে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সারাবাংলা/ওএম/একে

কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স যান্ত্রিক যানবাহন সাইকেল ও রিক্সা র‍্যালী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর