একতরফা নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত: মাহবুব তালুকদার
১৯ জুন ২০১৯ ১৭:২৫
ঢাকা: নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। একতরফা নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে ক্ষেত্র বিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠের অভিমত এবং তা বহুত্ববাদের ভেতর থেকে উৎসারিত হতে হয়। সব দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরিতে উপযুক্ত পরিবেশ অপরিহার্য। কিন্তু আমরা ক্রমাগত একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, যা গণতন্ত্রের জন্য অনভিপ্রেত।
বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে মাহবুব তালুকদার তার কার্যালয় কক্ষে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্য পড়ে তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত ছিল, সে সম্পর্কে আমার কিছু বলার আছে। সংবিধানে স্থানীয় শাসন শিরোনামে একটি সম্পূর্ণ পৃথক অনুচ্ছেদের ৫৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয় গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।’ এতে প্রতীয়মান হয় যে, স্থানীয় সরকারের প্রতিটি স্তরে নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যবর্গ প্রশাসনিক ও অন্যবিদ দায়িত্ব পালন করবেন। স্থানীয় সরকারের কোনো বহিরাগতের হস্তক্ষেপের অবকাশ নেই। অন্য কারও হস্তক্ষেপ হলে উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, স্বাভাবিক ও শুদ্ধ হবে না। এমতাবস্থায় স্থানীয় নির্বাচন বা উপজেলা নির্বাচন সংবিধান সম্মতভাবে হয়েছে কি না এ প্রশ্ন থেকে যায়।
গতকাল (১৮ জুন) উপজেলা নির্বাচনের পঞ্চম ধাপ শেষ হয়েছে। এই নির্বাচন সম্পর্কে সাংবাদিকরা আমার অভিমত জানতে চেয়েছেন। নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে সে প্রসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে আমি পূর্বে যা বলেছিলাম, এখনো তা-ই বলবো। আপনারা নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করলে এর উত্তর পেয়ে যাবেন। প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছে এ প্রশ্নের উত্তর রয়েছে, বলেন মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন সংসদ সদস্যদের আওতমুক্ত না হলে তা কখনো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাদের উপদেষ্টার ভূমিকা উপজেলা পরিষদের কোলিন্য বিনষ্ট করেছে। অনেক সংসদ সদস্য কেন আচরণবিধি লংঘন করে পছন্দের প্রার্থীকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বসাতে চান, কখনো নিজ দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষেও অবস্থান নেন। এ প্রশ্নের সমাধান না পেলে উপজেলা নির্বাচন তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবের কবলে পড়বেই। কোনো কোনো সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বা সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করতে হয়েছে।
ইসি কমিশনার বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনের সবচেয়ে আশঙ্কার দিক হচ্ছে, ভোটারদের নির্বাচন বিমুখতা। একটি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের নির্বাচন বিমুখতা অশনি সংকেত। যথোপযুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে হবে। আমি আগেও বলেছি, আমরা গণতন্ত্রের শোকযাত্রায় শামিল হতে চাই না। নির্বাচন বিমুখতা জাতিকে গভীর খাতের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের অনিশ্চিত গন্তব্য বাংলাদেশ। এই অবস্থা কখনো কাম্য হতে পারে না।
আমরা সংবিধান অনুযায়ী মুক্ত স্বাধীন উপজেলা পরিষদ কার্যকারিতা দেখতে চাই। কারো আজ্ঞাবহ হয়ে দায়িত্ব পালন করলে এবং উপজেলা পরিষদের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট বিসর্জিত হলে উপজেলা পরিষদ জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হবে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ প্রশ্ন নির্বাচনের ভালো মন্দ নিয়ে নয়, নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হলে আদৌ নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের প্রয়োজন আছে কি? এই নেতিবাচক প্রশ্নের উত্তর থেকে আমরা ইতিবাচক পথের সন্ধান পেতে চাই, যোগ করেন মাহবুব তালুকদার।
সারাবাংলা/জিএস/এটি