ইফা ডিজি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে
১৯ জুন ২০১৯ ২৩:২৯
ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজাল পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
বুধবার (১৯ জুন) সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের নিচে প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ কর্মকর্তা-কর্মচারী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এসময় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ইফা মহাপরিচালককে ‘আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ’ বলে অভিহিত করেন। তারা বলেন, বহুদিন ধরে তার দুর্নীতির কথা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হলেও কাজ হয়নি। সেন কারণে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
ইফা’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, ঈদের ছুটির পর থেকেই তারা মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তবে মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন তারা।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন সামীম আফজালের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন, তখন সামীম নিজে ছুটি চেয়ে অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন। মঙ্গলবার এক ফ্যাক্স বার্তায় তিনি কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণে ১৮ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত তিন দিন কর্মস্থলে উপস্থিত থাকবেন না তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক আনিসুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের পদত্যাগের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। অন্যদিকে, ডিজি নিজে অনুপস্থিতি। সব মিলিয়ে ইফার প্রধান কার্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৬ জুন সামীম আফজালের পদত্যাগ করার কথা ছিল। কিন্ত তার আগে বন্ধের দিন শনিবার তিনি অফিসে এসে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ৪০ থেকে ৫০টি ফাইল গোপনে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান। এ সময় ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তা আটকে দেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে জানানো হয়। তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কঠোরভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনোভাবেই যেন তিনি (সামীম আফজাল) ফাইল সরাতে না পারেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফাউন্ডেশনের সবাই তার কর্মকাণ্ডে বিরক্ত। ফাউন্ডেশনের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসা খুবই দুঃখজনক। এছাড়া তিনি গুরুতর অসুস্থ। তারপরও পদ ছাড়তে রাজি নন। তবে এই মুহূর্তে ইফা ডিজি’র পদ থেকে সরে দাঁড়ানো ছাড়া তার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।
জানা যায়, ২০০৯ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ শামীম আফজাল। পরে দুই দফা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নবায়ন করা হয়। সর্বশেষ মন্ত্রণালয় ও ইফার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরোধিতার মুখেও ‘অদৃশ্য ক্ষমতাবলে’ ২০১৭ সালে দুই বছরের জন্য চুক্তিতে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পান।
শামীম আফজালের বিরুদ্ধে ওআইসি মহাসচিবের ঢাকায় সফর, ছাপাখানা ও নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত চলছে। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন চেয়ে গত ৭ মে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় দুদক। গত সোমবার মহাপরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ডিজির আত্মীয়-স্বজনে ভরা ইফা
ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ডিজি সামীম আফজালের আত্মীয়-স্বজনদের অনেককেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। নিয়োগপ্রাপ্ত এসব ব্যক্তিরা অন্যদের বিরক্ত করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আন্দোলনরত ইফা’র একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ডিজির আপন বোনের মেয়ে ফাহমিদা বেগম (সহকারী পরিচালক) কক্সবাজার জেলায় উপপরিচালক পদে কর্মরত। আরেক বোনের মেয়ে সিরাজুম মুনীরা বায়তুল মুকাররমের মহিলা কো-অর্ডিনেটর। তারই বোনের ছেলে মাওলানা এহসানুল হক জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের পেশ ইমাম। আপন ভাইয়ের ছেলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির সহকারী পরিচালক, ভাইয়ের ছেলে মো. শাহ আলম চট্টগ্রামের উৎপাদন ব্যবস্থাপক। আরেক ভাইয়ের ছেলে মো. রেজোয়ানুল হক প্রকাশনা কর্মকর্তা। আরেক ভাইয়ের ছেলে মো. মিসবাহ উদ্দিন ৫৬০ মডেল মসজিদ প্রকল্পের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। শ্যালিকা ফারজিমা মিজান শরমীন প্রেসের আর্টিস্ট, শ্যালিকার ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান সহকারী পরিচালক (প্রসাশন), বন্ধুর মেয়ে সৈয়দ সাবিহা ইসলাম সহকারী পরিচালক (প্রসাশন)।
এছাড়া, সহকারী পরিচালক (উৎপাদন) পদে আত্মীয় আবদুল্লাহ আল মামুন, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের সহকারী পরিচালক হিসবে আত্মীয় ইলিয়াস পারভেজ এবং ডিজির ছেলে অনিকের গৃহশিক্ষক আতিয়ার রহমানকে প্রোগাম অফিসার (ইসলামি মিশন) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই পদগুলো সবই প্রথম শ্রেণির পদ বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এখানেই শেষ নয়, সামীম আফজালের আপন ভাইয়ের ছেলে মো. রাসেল মিয়াকে ইসলামিক মিশনের ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান পদে, আরেক ভাইয়ের ছেলে মুনিম ও মাহমুদকে এলডিএ পদে, মাহমুদের স্ত্রীকে ল্যাব টেকনিশিয়ান, আত্মীয় রতনকে ফিল্ড সুপারভাইজার, হিসাবরক্ষক পদে ফরসালকে, ইউডিএ হিসেবে আনোয়ারুল আজিম এবং গবেষণা সহকারী পদে আনোয়ারুল হককে নিয়োগ দিয়েছেন ডিজি আফজাল।
অভিযোগ রয়েছে, শুধু নিকটাত্মীয়দের নিয়োগ দিয়েই ক্ষান্ত হননি সামীম আফজাল, বন্ধু, এমনকি বান্ধবীদের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রীরাও বাদ যাননি আত্মীয়করণ থেকে। সামীম আফজালের ঘনিষ্ঠ ইফা পরিচালক মু. হারুনুর রশিদের ছেলে নাজমুস সাকিবকে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে, পরিচালক তাহের হোসেনের স্ত্রীর বোনের মেয়ে সাহিনা আক্তারকে সহকারী পরিচালক পদে, পীরভাই জালাল আহমদের স্ত্রী মাহমুদা বেগমকে প্রোগ্রাম অফিসার পদে, ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পরিচালক এ বি এম শফিকুল ইসলামের আত্মীয় হোমায়রা আক্তারকে পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর