ডিআইজি মিজানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
২০ জুন ২০১৯ ১৮:২৫
ঢাকা: পুলিশের ‘বিতর্কিত’ উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের স্থাবর ও অস্থাবর সব সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। অসাধু উপায়ে অর্জিত ডিআইজি মিজানের সম্পদ বেহাত হওয়ার আশঙ্কায় এ আদেশ দেওয়া হয়।
বুধবার (১৯ জুন) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ দুদকের আবেদনটি মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে আদালতের আদেশের একটি কপি সারাবাংলার হাতে পৌঁছেছে।
ডিআইজি মিজানের সম্পদ ক্রোক করতে দুদকের আবেদনে বলা হয়, পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদের নেতৃত্বে ডিআইজি মিজানের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুদক। তার সম্পদের অনুসন্ধান শুরুর পর থেকেই ডিআইজি মিজান তার বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ বিক্রি ও স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। এ পরিস্থিতিতে অসাধু উপায়ে অর্জিত তার এসব সম্পদ বা সম্পত্তির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে অবস্থায় তার এসব সম্পদ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করাও সম্ভব হবে না। সে কারণে তার সম্পদ ক্রোক করার আবেদন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- দুদক পরিচালক ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন, অভিযোগ ডিআইজি মিজানের
দুদকের এই আবেদন আমলে নিয়ে আদালত দুদকের পক্ষে উপস্থিত আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন এবং সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করেন। পরে আদালত আদেশে বলেন, দরখাস্তে উল্লেখ করা ডিআইজি মিজানের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এ মুহূর্তে ক্রোক করা না হলে সেগুলো হস্তান্তর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। ফলে ডিআইজি মিজানের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হলো।
ডিআইজি মিজানের ক্রোক করা সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে বেইলি রিটজ ভবনের চতুর্থ তলায় ৫৫ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট, কার পার্কিং স্পেসসহ ৫৫ দশমিক ৫১ অযুতাংশ জমি, কাকরাইলে ২ কোটি ২০ লাখ টাকার একটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট, দোকান ও জমি। এসব সম্পত্তির মূল্য মোট ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬০ টাকা। এছাড়া ধানমন্ডি সিটি ব্যাংকের হিসাবে রয়েছে ১০ লাখ টাকা।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, গতকাল (১৯ জুন) আদালতে এ আবেদনের শুনানি হয়েছে। আমরা আজ এ বিষয়ে আদালতের আদেশ হাতে পেয়েছি। আদালত ডিআইজি মিজানের সব সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তার ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ক্রোক করা সম্পত্তি যেন হস্তান্তর, বিক্রি বা মালিকানা স্বত্ব বদল করা না যায়, সে জন্য ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারের নিবন্ধন পরিদফতরের মহাপরিদর্শক, তেজগাঁও শিল্প এলাকার ঢাকা রেজিস্টার কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার এবং ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান, সাভার ও উত্তরার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশে বলা হয়েছে, ডিআইজি মিজানের অবরুদ্ধ করা অ্যাকাউন্টে তার নামে অর্থ জমা করা যাবে, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই অর্থ তোলা যাবে না। সিটি ব্যাংকের ধানমিন্ড শাখার ম্যানেজার এ আদেশ প্রতিপালন করবেন।
সম্প্রতি ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছিল দুদক। এজন্য দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু এই তদন্ত করতে গিয়ে এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ডিআইজি মিজান। এনামুল বাছিরের সঙ্গে এ বিষয়ে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড প্রমাণ হিসেবে হাজির করেন তিনি। অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক। পরে কমিশনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও তথ্য পাচারের অভিযোগে এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে কমিটি করেছে পুলিশ সদর দফতর।
আরও পড়ুন-
ডিআইজি মিজান অবশ্যই দণ্ডিত হবেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ডিআইজি মিজান কি দুদকের চেয়েও শক্তিশালী: আপিল বিভাগ
সারাবাংলা/ইউজে/এআই/টিআর
এনামুল বাছির ডিআইজি মিজান দুদক ব্যাংক হিসাব জব্দ সম্পত্তি ক্রোক