বাজেট নিয়ে মতিয়া চৌধুরীর তোপের মুখে অর্থমন্ত্রী
২০ জুন ২০১৯ ২১:৫১
সংসদ ভবন থেকে: প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের উৎস কর বাড়ানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী।
অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, এটা তো প্রধানমন্ত্রীর স্কিম, এতে হাত দিলেন কেন? এটা তো অবৈধ নয়, বৈধ টাকা। এসব সঞ্চয়পত্র কেনেন গ্রামের বিধবা, দুঃস্থ ও অসহায় নারীরা। বড় ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেন, ঋণ মওকুফ করেন, গাড়ি-বাড়ি কেনার সুযোগ দিচ্ছেন; অথচ পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের ওপর হাত দিলেন, এটা মানতে পারব না।
সরকার দলীয় এই এমপিসহ প্রস্তাবিত বাজেটের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলের সংসদ সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা অর্থমন্ত্রীর সমালোচনায় মুখর হন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী শুরুতেই প্রস্তাবিত বাজেটে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের উপর উৎস কর বাড়ানোর সমালোচনা করেন। তিনি বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নায়ক ছিলেন জিয়াউর রহমান— এমন দাবি জানিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, তিনি (জিয়াউর রহমান) ইনডেমনিটি আইন করে ঘাতকদের দায়মুক্ত করেছিলেন। এ দেশে ১৬০টি মদের লাইসেন্স দেওয়া হয় জিয়ার আমলে। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষের মানুষদের নির্যাতন ও হত্যা করেন। তার আমলে ‘মানি ইন নো প্রবেলম’ নীতি চালু হয়ে দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। কারফিউ চালু করে নির্যাতন-নিপীড়ন বাড়ান।
সাবেক এই কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করলেন, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল করে স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর-রাজাকারদের বিচার শুরু করেন। কিন্তু খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী হয়েও তার স্বামীকে হত্যার বিচার করেননি। সেই বিচারের ফাইল এখনো চট্টগ্রাম কোর্টে পড়ে আছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, একদিন যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার ঠেকাতে ইনডেমনিটি জারি করেছিলেন, সময়ের ব্যবধানে তাদের (বিএনপি) এখন সংসদে ছয়-সাত জন সংসদ সদস্যও নেই। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবার জড়িত ছিল। এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়ে এখন কারাগারে। অনেক জ্ঞানপাপী এসব দণ্ডিত দুর্নীতিবাজদের মুক্তি চান! কিন্তু অপরাধী অপরাধীই, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ভুল রাজনীতির কারণে বিএনপিকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভুল রাজনীতি থেকে ফেরত না আসলে মাইক্রোস্কোপ দিয়েও বিএনপিকে একদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজমুদারও বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, তারা বর্তমান সরকারকে অবৈধ বলে এই সংসদে বক্তব্য দেন। আবার শপথ নিয়ে সংসদে এসে নিজের জন্য প্লট চান, নিজের এলাকার উন্নয়ন চান। আবার এই সংসদকে অবৈধ বলেন, বাজে কথা বলেন। কিন্তু দেশের মানুষ বুঝে গেছে, আপনারা চোর ছিলেন, যার জন্য দৌড়ে (নির্বাচন থেকে) পালিয়েছেন। যার জন্য আন্দোলন করতে পারেন না, মাঠে নামতে পারেন না। মাঠে নামার শক্তি নেই।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় থাকতে যারা কৃষককে বীজ দেয়নি, তেল দেয়নি, সার দেয়নি— তারা আবার বলে, এই সরকার অবৈধ। আড়াই লাখ মেট্রিক টন ধান প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই কাজগুলো অব্যহত থাকলে কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবে। তবে এটা স্থায়ী সমাধন নয়। স্থায়ী সমাধান করতে হলে উৎপাদন ব্যায় কমাতে হবে, ধান কাটার জন্য যান্ত্রিক পদ্ধতিতে যেতে হবে। বিদ্যুতে ভর্তুকি কৃষকরা পায় না। সেটা সেচ যন্ত্রের মালিকরা পায়। কাজেই নতুন করে ভাবতে হবে।
ওয়াকার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমাদের কৃষকরা বছরে মাত্র ৪০ দিন কাজ পায়, তার সঙ্গে অন্য কাজ যুক্ত করে ১৫০ দিনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে কৃষকরা বাঁচতে পারবে। দেশে যারা অতি ধনী হচ্ছেন, তাদের সুবিধা ও সম্মান দেওয়া হয়েছে। এ বাজেটে গরিব ও আদিবাসী, সেইসঙ্গে চরে যে এক কোটি কোটি মানুষ বাস করে, তাদের কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাদের জন্য কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাজেটে নেই। এ বাজেটে বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
বাদশা আরও বলেন, ২০৩০ সালে আরও তিন কোটি যুবক বেকার হবে। সেজন্য বাজেটে প্রতিবছর কত জনের কর্মসংস্থান করা হবে, তা সুনির্দিষ্ট করতে হবে।
জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম বলেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করে না, বিদেশে পাচার করে কিংবা পালিয়ে যায়, তারা যেন ভবিষ্যতে কোনো ঋণ না পায়— সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একবছর ধরে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকের সুদের হার সিংগেল ডিজিটে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিলেও বেশিরভাগ ব্যাংক সেটি মানছে না। তিনি ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের মুখোশ উন্মোচনেরও দাবি জানান।
বাজেট আলোচনায় আরও অংশ নেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সরকারি দলের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, আনোয়ারুল আবেদীন খান, আবদুস সোবহান মিয়া, বেনজীর আহমদ, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, শামীম হায়দার পাটোয়ারি, সালমা ইসলামসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট মতিয়া চৌধুরী সঞ্চয়পত্র