Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাসপাতাল নাকি ভাগাড়?


২২ জুন ২০১৯ ০৯:০১

রোগীর বেডের পাশের জানালায় ময়লার স্তূপ

ঠাকুরগাঁও: হাসপাতালে ঢুকতেই প্রধান ফটকে পানি। ছাদের পানি চুয়ে পড়ছে এদিক সেদিক। আবর্জনার স্তূপ রোগীর বেডের পাশে। নোংরা জিনিসপত্র ফেলা হচ্ছে ওয়ার্ডের ভেতরেই। টয়লেটের পানি চুয়ে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে রুমের মেঝে। কুকুর চলাফেরা করছে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের পরিবেশ এমনই অস্বাস্থ্যকর।

২০১৮ সালের ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁও সফরে এসে একশ শয্যার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালটি আড়াইশ শয্যায় উন্নীত করে সাত তলা ভবন উদ্বোধন করেন। দরপত্র চুক্তি অনুয়ায়ী ২০১৬ সালের জুনে কাজ শেষ করে ভবনটি হস্তান্তরের কথা থাকলেও এখনও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নির্মাণ কাজ। নতুন ভবনের কাজ শেষ হলে কবে নাগাদ সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হবে, কেউ বলতে পারছেন না। ফলে পুরাতন ভবনেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে চিকিৎসা সেবা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুখানপুকুরী ডি-হাট থেকে আসা কফিল উদ্দীন অভিযোগ করে জানান, তার স্ত্রীকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু যে বেডে থাকতে দেওয়া হয়েছে, সেখানে ময়লার স্তূপ পড়ে আছে। চারপাশে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

সদর উপজেলার রাজাগাঁও গ্রামের ডালিম চন্দ্র রায়ের স্ত্রী মেডিসিন ওর্য়াডে ভর্তি রয়েছেন। তারও একই অভিযোগ। শহরের কলেজপাড়ার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। ’

এদিকে হাসপাতালের পরিবেশের পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে ওষুধপত্র নিয়েও। সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তিন দিন হলো শুধু একটি ট্যাবলেট পেয়েছি। আর কোনো ওষুধ পাইনি। টেপ, সিরিঞ্জ, ক্যানোলাসহ সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। ’

একই অভিযোগ শহরের মাদ্রাসাপাড়া মহল্লার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির। তিনি বলেন, ‘স্যালাইন স্ট্যান্ডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে রোগীদের আনা বাঁশ ও গাছের মরা ডাল। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র এক নার্স বলেন, ‘অনেক সময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় রোগীদের সামাল দিতে নিজের টাকায় প্রতিমাসে ৪-৫শ টাকার ওষুধ রিজার্ভে রাখতে হয়। ’

এরই মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করার তাগাদা দিয়ে গণপূর্ত বিভাগকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, পুরাতন ভবন অপসরাণে দেরি হওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করতে তাদের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওকে অ্যান্ড কেএ জয়েন্ট ভেঞ্চারের প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন, গণপূর্ত বিভাগ ভবন বুঝে নিতে চাইলে আমরা এ মাসের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে পারব।

ঠাকুরগাঁও গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জান সরকার বলেন, ‘আমাদের টার্গেট ছিল জুন মাসের মধ্যে ভবনের কাজ শেষ করা। কিন্তু বিদ্যুৎসংযোগ সম্পন্ন না হওয়া সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎসংযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি জুলাই মাসের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।’

 এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. এইচ নোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ হাসপাতালে যোগ দিয়েছি এ মাসেই। এখনও প্রশিক্ষণে আছি। তবে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। ’

সারাবাংলা/পিটিএম

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ঠাকুরগাঁও ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল পুরাতন ভবন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর