Monday 07 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আ.লীগ এমপির ‘জামায়াতি’ শ্বশুরের জানাজায় ছাত্রলীগ-শিবির মারামারি


২২ জুন ২০১৯ ১৭:২৪ | আপডেট: ২২ জুন ২০১৯ ২০:২৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের মাঠে (প্যারেড গ্রাউন্ড) সদ্যপ্রয়াত জামায়াত নেতা মুমিমুল হক চৌধুরীর জানাজা নিয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে মারামারি হয়েছে। জানাজায় অংশ নিতে আসা শিবিরের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের ডাক দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হলে মারমুখী হয়ে এগিয়ে আসেন শিবিরের নেতাকর্মীরাও। এসময় উভয়পক্ষ সংঘাতে জড়ায়।

দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। পরে কলেজ মাঠে জামায়াত নেতার জানাজার অনুমতি দেওয়ায় অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগ। ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার (২২ জুন) দুপুর দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। পরে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২১ জুন) রাতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুমিনুল হক চৌধুরী বার্ধক্যজনিত কারণে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর শ্বশুর। মুমিনুল হকের মেয়ে অর্থাৎ নদভীর স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হাসান সারাবাংলাকে জানান, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সংসদ সদস্য নদভী তাকে টেলিফোন করে প্যারেড মাঠে তার শ্বশুরের জানাজার জন্য সিএমপি কমিশনারের অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান। তিনি কলেজের মাঠে জানাজায় সহযোগিতা করতেও অনুরোধ করেন। সেসময় কলেজের অডিটোরিয়ামে ঈদ পুর্নমিলনী অনুষ্ঠান চলছিল। সংসদ সদস্যের ফোন পেয়ে অধ্যক্ষ অনুষ্ঠানে সমবেত শিক্ষকদের প্যারেড মাঠের জানাজায় অংশ নিতে অনুরোধ করেন।

শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতারা জানিয়েছেন, অধ্যক্ষের ঘোষণার পরই মূলত কলেজে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি জানতে পারেন। এসময় তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। দুপুর ১টার দিকে ক্যাম্পাসের ভেতরে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধের ডাক দিয়ে কয়েক দফা মিছিল করে ছাত্রলীগ। প্যারেড মাঠে জানাজায় অংশ নিতে আসা লোকজনের মধ্যে ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতাকে দেখে আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জানাজার খবর পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি-লোহার রড নিয়ে প্যারেড মাঠের কাছে ছাত্রাবাসের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা জানাজার দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। অন্যদিকে জানাজাস্থল থেকে শিবিরের একদল নেতাকর্মীও মারমুখী হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিকে এগিয়ে আসে। পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও উভয়পক্ষ মারামারিতে জড়ায়। তবে পুলিশ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় অন্তত দু’জনের মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে দেখা যায়।

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘জানাজার নামে ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্যারেড মাঠে হাজির হয়েছিল। তিনজন শিবির ক্যাডার রায়হান, জোবায়ের ও হান্নান তাদের নেতৃত্বে ছিল। আমরা মিছিল নিয়ে যাবার সময় দেখি-জোবায়েরের সঙ্গে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হাসিমুখে কথা বলছেন। তখন ছেলেরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। আমরা এর প্রতিবাদ করলে একজন এসআই আমাদের এক নেতাকে ধাক্কা দেন। শিবিরের সন্ত্রাসীরাও এসে তাদের শক্তি দেখানোর চেষ্টা করে।’

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জানাজায় এক থেকে দেড় হাজার লোক হয়েছিল। যেহেতু উনি জামায়াত নেতা, শিবিরের ছেলেরাও এসেছিল। ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে মাঠের দিকে আসতে চাইলে উভয়পক্ষ মারমুখী হয়ে ওঠে। তবে আমরা মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।’

ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটকের তথ্য দিয়ে ওসি বলেন, ‘তার পরিচয় যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য সাংসদ নদভী প্যারেড মাঠ এলাকায় এলেও পরে যোগ দেননি। তিনি চট্টগ্রাম কলেজের ভেতরেও যাননি।

এদিকে জানাজা শেষে প্যারেড মাঠ থেকে অংশগ্রহণকারীরা চলে যাবার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে অধ্যক্ষ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে কক্ষে ডেকে নেন।

সুভাষ মল্লিক সবুজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অধ্যক্ষের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা বলেছি-একজন চিহ্নিত জামায়াত নেতা, যার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের অভিযোগ আছে, যিনি ফাঁসির পরে যুদ্ধারপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেছিলেন, তার জানাজার অনুমতি অধ্যক্ষ কিভাবে দিলেন ? অধ্যক্ষ আমাদের সরি বলেছেন।’

সাংসদ নদভীর বিরুদ্ধে শ্বশুরের পরিচয় গোপনের অভিযোগ

অন্যদিকে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হাসান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, কলেজ মাঠে জানাজার বিষয়টি জানানোর সময় সাংসদ নদভী শুধু মুমিনুল হক চৌধুরীকে তার শ্বশুর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মুমিনুল হক চৌধুরী যে জামায়াতের একজন শীর্ষ নেতা, সেই বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি।

‘প্রয়াত ব্যক্তি যে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সেটা আমি জানতাম না। আমি শিক্ষকদের উনার জানাজায় অংশ নিতে বলেছি। এমপি সাহেবই আমাকে এটা বলতে বলেছেন। অথচ আমি এর কিছুই জানতাম না। আমি যদি রাজনৈতিক পরিচয় জানতাম, তাহলে জানাজা নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে, সেটা তো আগেই আঁচ করতে পারতাম। এরপরও যা ঘটেছে সেটা একেবারেই অনাকাঙ্খিত’, বলেন অধ্যক্ষ।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মাহাবুবর রহমানও বলেছেন, মুমিনুল হক চৌধুরী যে জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত সেই বিষয়ে সাংসদ নদভী তাকে কোনো ধারণা দেননি। সংসদ সদস্যের শ্বশুর হিসেবেই প্যারেড মাঠে তার জানাজার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

সিএমপি কমিশনার সারাবাংলাকে বলেন, ‘নদভী সাহেব আমাকে সরাসরি ফোন করেননি। পরোক্ষভাবে জানিয়েছেন। যখন ঘটনা ঘটেছে, তখন জানতে পারলাম উনার শ্বশুর নাকি জামায়াত নেতা। অথচ উনার বিষয়টি আগেই জানানো দরকার ছিল। ঘটনার সময় আমি থানা পুলিশকে দ্রুত নির্দেশ দিই যেন, সংসদ সদস্যের উপর কোনো আঘাত না আসে।’

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সংসদ সদস্য ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করা হয় সারাবাংলার পক্ষ থেকে। তার মোবাইলে টেলিফোনে কয়েক দফা ফোন দিলেও সাড়া মেলেনি।

প্রায় তিন দশক ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রণে ছিল চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ। ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শিবিরকে বিতাড়িত করে ক্যাম্পাসের দখল নেয় ছাত্রলীগ। ৩৪ বছর পর ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হয়।

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হক মাহুমদের অভিযোগ, অধ্যক্ষসহ কলেজ প্রশাসন সবার অজ্ঞাতে একজন চিহ্নিত জামায়াত নেতার জানাজা প্যারেড মাঠে করার অনুমতি দিয়ে কার্যত ক্যাম্পাসে আবারও শিবিরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন।

মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুমিনুল হক যে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত ইসলামীর নেতা সেটা সবাই জানেন। অধ্যক্ষ সেটা জানতেন না বলে যে দাবি করেছেন, সেটা হাস্যকর। এটা আসলে শিবিরের হাতে আবারও চট্টগ্রাম কলেজকে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করছি। এই প্রশাসন শিবির তোষণকারী প্রশাসন। আমরা এদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব।’

সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন

জামায়াত নেতা মুমিমুল হক চৌধুরী টপ নিউজ ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর