দূষণকারীরা পরিবেশ রক্ষাকারীদের চেয়ে শক্তিশালী
২২ জুন ২০১৯ ১৯:১২
ঢাকা: পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ বায়ুদূষণের জন্য যারা দায়ী তারা অনেক শক্তিশালী। আর বায়ুদূষণরোধে যারা কাজ করছেন তারা অনেক দুর্বল। এ অবস্থায় পরিবেশ অধিদফতর অর্থ ও জনবল বাড়াতে পারলেই কেবল এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
শনিবার (২২ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিবেশ অধিদফতরে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘বায়ু দূষণ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ড. এ কে এম রফিক আহমেদ এসব কথা বলেন।
পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য সবার আগে জনগণকে সচেতন হতে হবে। আর যারা স্টেক হোল্ডার রয়েছেন তাদেরকেও সঠিকভাবে কাজ করতে হবে।
রফিক আহমেদ বলেন, সমস্যা অনেক তবে আশার আলোও দেখছি। উন্নয়ন যেহেতু জাতীয় অঙ্গীকার তাই এর মধ্যে থেকেই এগিয়ে যেতে হবে। যারা নর্দমা পরিষ্কার করেন তারা ময়লা তুলে রাস্তার পাশে রাখেন। বৃষ্টি হলে সেই ময়লা আবার নর্দমাতেই যায়। আবার ওই ময়লার ওপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে যায় এবং ময়লা রাস্তায় চলে আসে। আর এ থেকেই ধূলার সৃষ্টি হয়।
ডিজি বলেন, উন্নয়ন হচ্ছে তবে আধুনিক পদ্ধতিতে নয়। যেখানে সেখানে মাটি খোড়া হচ্ছে, সেই মাটি সড়কের অন্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। শুকিয়ে গেলে তা থেকে ধূলার সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে ঢাকাসহ সব জায়গায় বায়ু দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে।
ডিজি আরও বলেন, অধিদফতরের জনবল সমস্যা রয়েছে। অর্থ সমস্যা তো রয়েছেই। এখানে আলাদাভাবে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয় না। দীর্ঘদিন পর ৬৪ জেলায় অফিসের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর আগে ২১ জেলায় অফিস ছিল। গতমাসে বাড়িয়ে তা ৩৩ জেলায় অফিস করা হয়েছে। আগামী বছর বাকি জেলাগুলোতে অফিস খোলা হবে।
এক হাজার ৮০ জনের জনবল কাঠামো থাকলেও বর্তমানে জনবল রয়েছে মাত্র ৪৭৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে মাত্র জনবল রয়েছে ২১ জনের মতো। এর মধ্যে গাড়িচালক ও পিয়ন রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জেলায় পরিবেশ আদালত রয়েছে। সামনে কাজ হবে। আশা করছি আগামীতে অধিদফতর ঘুরে দাঁড়াবেই।
সেমিনারে লেখক ও কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, কোনো সাধারণ মানুষ পরিবেশ নষ্ট করছে না। জনপ্রতিনিধিরা সব সমস্যা দেখার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ তারা কোনো দিন সেই কাজটা করেন না। কোনো দিন পরিবেশ নিয়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলেন না। যারা উন্নয়ন পরিকল্পনা করেন তাদের গুরুত্ব দিয়ে সবকিছু দেখার জন্য অনুরোধ করেন আবুল মকসুদ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল মতিন বলেন, পরিবেশ রক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সবাই অনেক বেশি দুর্বল। পরিবেশ অধিদফতর বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নৌ মন্ত্রণালয় এরা সবাই দুর্বল। কিন্তু এর বিপরীতে যারা পরিবেশ দূষণ করে, বনের গাছ কেটে নিয়ে যায়, নদীগুলো ধ্বংস করছে তারা অনেক বেশি শক্তিশালী। এদের রুখতে হলে আরও বেশি শক্তি অর্জন করতে হবে। তাহলেই কেবল এদেশে পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, স্টেক হোল্ডার ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ পরিবেশ রক্ষার উপায় সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরেন। সেমিনার শেষে পলিথিনের বদলে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহিত করতে সবার হাতে তা তুলে দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/ইউজে/জেডএফ/এমএইচ