ভরা মৌসুমেও লোকসানে আম ব্যবসায়ী
২৩ জুন ২০১৯ ১১:০১
রাজশাহী: গাছে গাছে পাকা আম, বাজারে ঘ্রাণ। চলছে পুরোদস্তুর কেনা-বেচা। প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই রাজশাহীতে আমপাড়া শুরু হয়, এখন চলছে ভরা মৌসুম। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমেও লোকসানের মুখে আম ব্যবসায়ী।
তারা জানান, গত রমজান মাস থেকে বাজারে আম উঠলেও তেমন কেনা-বেচা ছিলো না। তবে ঈদের টানা ৯ দিন ছুটির পর বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে দামও কিছুটা বাড়ছে। শুরুতে আমের মন ১ হাজার ৫০ টাকা থাকলেও বর্তমানে তা ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এতেও লাভের মুখ দেখতে পারছেন না তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, মাঝখানে টানা ৯ দিনের ছুটির কারণে বাইরের জেলায় আম পাঠানো যায়নি। তখন পাকা আম নষ্ট হয়েছে। তবে এখন সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বর হাট। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশেই থাকা পুরনো কাচারি মাঠকে ঘিরে ধুলোবালি ও প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে এখন আমের হাট জমতে শুরু করেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় এই আমের হাট। বাজারে এখন মিলছে গোপালভোগ, খিরসাপাত, ল্যাংড়ার পাশাপাশি আম্রপালি, ফজলি ও সুরমা ফজলি।
আমচাষিরা জানান, গোপালভোগ, খিরসাপাত শেষের পথে। বাগানে বেশি আম্রপালি, ল্যাংড়া আছে। যদি এখন ঝড়ের মুখে পড়ে তবে আম পড়ে সব নষ্ট হওয়ার শঙ্কাও মাথায় রাখতে হচ্ছে তাদের। তারা বলছেন, মাছি পোকার বেশি আক্রমণ হচ্ছে হিমসাগর ও ল্যাংড়ায়। গত ২৮ মে হিমসাগর এবং ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া আম নামানো শুরু হয়েছে গাছ থেকে। ফলে এই দুই জাতের আমে মাছি পোকা দমনে কীটনাশক প্রয়োগের উপায় নেই।
এবছর জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুদিন পর গাছ থেকে দেশীয় জাতের গুটি আম পাড়তে শুরু করেন বাগান মালিকরা। কিন্তু এরমধ্যে এসে যায় রমজান মাস। এতে আমের বাজারে ধস নামে। রমজানের কারণে গাছে আম পাকলেও ব্যবসায়ী ও চাষিরা লোকসানের ভয়ে গাছ থেকে নামাতে পারেননি। যারা রমজানেও গাছ থেকে আম নামিয়েছেন তারা লোকসানই দিয়েছেন।
পবার দারুসা গ্রামের আমচাষি আজিজার রহমান বলেন, ‘ঈদের কারণে বাজার ভালো ছিল না খিরসাপাতের। এখন দাম বাড়ছে। মণপ্রতি ২ হাজার ৬০০ থেকে টাকা থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খিরসা শেষ হয়েছে এখন ল্যাংড়া নামানো শুরু হয়েছে।’
বাঘার আম ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান জানান, রমজান মাসে গুটি জাতের আমে অনেকটাই লোকসান হয়েছে। ২০ মণ আম ঈদের আগে গাছ থেকে নামানো হয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ আম বাইরে পাঠাতে না পেরে নষ্ট হয়ে গেছে।
রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার এলাকার আম ব্যবসায়ী আসাদুল হক বলেন, ‘এবার শুরু থেকেই ঘন কুয়াশা, ঝড় ও শিলাবৃষ্টি এবং তাপদাহের কবলে পড়ে রাজশাহীর আম। এ কারণে আমের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক এলাকায় ফলন কমেছে। যে কারণে লোকসান বেড়েছে, সরবরাহও অন্যান্য বছরের তুলনায় কম।’
বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী হোসেন আলী বলেন, ‘বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা ময়মনসিংহ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা রাজশাহী থেকে আম নিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম দিকে হাটে গোপালভোগ, গুটি, রাণীপছন্দ এই তিন জাতের আম বিক্রি শুরু হয়। শুরুতে গোপালভোগ প্রতি মণ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়, এবং গুটি জাতের ও রাণীপছন্দ আম বিক্রি ৯০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ৬০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হয়েছে। তবে ঈদের পর থেকে দাম বাড়তি রয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছর রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। মৌসুম শেষ হওয়ার পরই পুরো উৎপাদন বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল আলীম বলেন, ‘মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাসের শেষ নাগাদ প্রায় তিন মাস চলে আমের ব্যবসা। বিশাল এই কর্মযজ্ঞের কারণে এ অঞ্চলে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য থাকে মানুষের মধ্যে। এবার খরার কারণে আমে হপার পোকার আক্রমণ তেমন একটা দেখা যায়নি। এ কারণে আমের চেহারা ভাল হয়েছে। তবে তীব্র তাপপ্রবাহে আমের আকার কিছুটা ছোট হয়েছে।’
রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, ‘আম উৎপাদন এবার ভালো হয়েছে। এ বছর গাছে গুটি আসার পরপরই ঝড় হওয়ার কারণে অনেক আম নষ্ট হয়েছে। এরপরও ফলন সন্তোষজনক।’ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সারাবাংলা/এমও