‘জনসেবার চিন্তা থেকে কাজ করলেই দেশকে এগিয়ে নিতে পারবেন’
২৩ জুন ২০১৯ ১৫:৪২
ঢাকা: চাকরি করার জন্য চাকরি নয়, দেশের মানুষকে ভালোবেসে জনসেবার চিন্তা নিয়ে কাজ করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কথা আত্মবিশ্বাস। পারব কি পারব না— এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগলে চলবে না। আর শুধু চাকরির জন্য চাকরি করা নয়, দেশের মানুষকে ভালোবেসে জনগণের সেবা করার চিন্তা থেকে কাজ করতে হবে। তবেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন— এই বিশ্বাস করি।
রোববার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে আইন ও প্রশাসন কোর্সের ১১০, ১১১ ও ১১২তম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তাদের মধ্যে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এসময় ১১০তম কোর্স থেকে মোহাম্মদ মাহবুল্লাহ মজুমদার, ১১১তম কোর্স থেকে রঞ্জন চন্দ্র দে ও ১১২ত কোর্স থেকে মাতলুব আহমেদ অনিক রেক্টর আওয়ার্ড মেডেল ও সনদ লাভ করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশটা তিনি স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আর সে কারণেই আজ সব ক্ষেত্রে বাঙালিরা স্থান করে নিতে পারছে। এবার যখন আমি ওআইসির সম্মেলনে যাই, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও ঘরোয়াভাবে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, তারা ছোটবেলায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় অনেককেই বলতে শুনেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কিছুই করতে পারবে না। এরপর তিনি জানতে চান, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কত, রিজার্ভ কত, বাজেট কত ইত্যাদি। উত্তর শুনে খুব অবাক হয়ে বললেন, বাংলাদেশ তো পাকিস্তানের চেয়েও অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। এ কথা কিন্তু এখন পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে সবাই বলে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কী হবে, তা নিয়ে আমাদের কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে। আমার বয়স এখন ৭২ বছর। ২০৪১ তো আমি দেখতে পারব না। কিন্তু আজকের এই প্রজন্ম (প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে), এরাই তো আমার ওই ২০৪১-এর দেশ গড়ার কারিগর। ঠিক কি না? সবাই রাজি তো? সেভাবেই কিন্তু সবাইকে কাজ করতে হবে।
প্রশিক্ষণার্থীসহ সরকারি কর্মজীবীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো কাজ করতে গেলে দুশ্চিন্তা না করে কিভাবে কাজটা আরও ভালো করা যায়, সেই ভাবনা ভাবতে হবে। নিজের ভেতরে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা থাকতে হবে, আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। এটা পারব কি পারব না— এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগলে চলবে না। সবকিছুই যে সফল হবে, হয়তো সেটা নাও হতে পারে। তারপরও আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে নিজের মধ্যে, সেটাই আমি মনে করি।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রবৃদ্ধি অর্জন ও মাথাপিছু আয়ের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। পঁচাত্তরের পর সেটা থাকেনি। কারণ নীতি। স্বাধীনতাবিরোধীরা তখন ক্ষমতায় এসেছিল। তারা চায়নি বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াক। আর আমরা স্বাধীনতা অর্জনকারী সংগঠন। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। আমরা যদি আর বেশি নাও এগোই, এখন যেভাবে আছি সেভাবেই যদি থাকি, তবু কিন্তু ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাব। কিন্তু আমাদের আরও বেশি সামনে যেতে হবে।
প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের উন্নয়ন শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক না, আমাদের উন্নয়ন হবে দেশব্যাপী। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। তবেই এটা আমরা অর্জন করতে পারব। প্রতিটি অঞ্চলের উন্নয়ন হবে। কাজেই অনুরোধ করব, যে যেখানে যাবেন, শুধু চাকরির জন্য চাকরি নয়, জনসেবা এবং দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসার কথা মাথায় রাখতে হবে। এই চিন্তা থেকেই আপনারা পারবেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে— এইটুকু বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে চাই। সেটা মাথায় রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তুলব। ২০৪১ সালের অর্জনটা গড়ে তোলার জন্য আজকের এই প্রজন্মই কিন্তু তখন আরও উঁচু আসনে অধিষ্ঠিত হবে। অনেক দায়িত্ব থাকবে তাদের। সেই দায়িত্ব এখন থেকেই পালন করতে হবে এবং প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডেল্টা প্ল্যান তৈরি করে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। আগামীতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দর ও উন্নত জীবন পায়, স্বাধীনতা অর্থবহ হয়, স্বাধীনতার সুফল দেশের প্রতিটি মানুষ যেন ভোগ করতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের পথচলা। সেখানে মাঠ পর্যায়ে বিরাট দায়িত্ব আপনাদের নিজেদেরও আছে বলে মনে করি।
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান, বিসিএস প্রশাসন রেক্টর কাজী রওশন আক্তার, মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ফাইল ছবি
সারাবাংলা/এনআর/টিআর