সরকারি চাকরিতে বেতন বাড়লেও দুর্নীতি কমেনি: টিআইবি
২৩ জুন ২০১৯ ১৯:২৬
ঢাকা: সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বাড়লে দুর্নীতি হ্রাসে দৃশ্যমান কোনো অগ্রহতি হয়নি বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার: নীতি ও চর্চা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে টিআইবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিভিন্ন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নিজেদের লোককে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদোন্নতি দিতে গিয়ে প্রায়ই জ্যেষ্ঠতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, মেধাকে অগ্রাহ্য করেন, আবার কর্মকর্তারা পদোন্নতির আশায় রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শনের দিকে ঝুঁকে পড়েন।’
টিআইবির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মহুয়া রউফ প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ও অন্যান্য প্রভাবের কারণে জাতীয় শুদ্ধাচারের কোনো কোনো কৌশলের চর্চা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। প্রশাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
তিনি বলেন, ‘শুদ্ধাচার কৌশলে জনপ্রশাসন সম্পর্কিত ১১টি কৌশলের মধ্যে পাঁচটি কৌশলের চর্চা সন্তোষজনক। তিনটি কৌশলের চর্চা এখনো শুরুই হয়নি।’ এছাড়া বিভিন্ন উপাত্ত তুলে ধরে মহুয়া রউফ বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জনপ্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রবণতা বেড়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে যোগ্যতা নয়, ক্ষমতাসীনদের পছন্দ প্রাধান্য পাচ্ছে।’
পদোন্নতি ও পদায়নের অসংগতি তুলে ধরে মহুয়া রউফ বলেন, ‘রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রশাসনের উপসচিব বা এর ওপরের পদে শূন্য পদের অতিরিক্ত কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার লঙ্ঘনও হয়। অন্যদিকে, পদোন্নতি বিধিমালায় উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের পদোন্নতিতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে অধিকতর প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কোন গোয়েন্দা সংস্থা কী বিষয়ে কখন কী প্রতিবেদন দিচ্ছে, তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানার সুযোগ নেই। এমনকি গত নির্বাচনের আগে ৫৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ। ডিসি পদায়নে গোয়েন্দা রিপোর্ট একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব প্রতিবেদনে কর্মকর্তারা ক্ষমতাসীন দলবিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন কি না, তা বিবেচনায় আনা হচ্ছে।
তবে প্রতিবেদনে শুদ্ধাচার কৌশলের কিছু কিছু অগ্রগতির চিত্রও তুলে ধরা হয় গবেষণায়।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে যেগুলোতে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা বৃদ্ধিমূলক ইতিবাচক প্রণোদনা দেওয়ার অঙ্গীকার ছিল, সেক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অভূতপূর্ব। কিন্তু সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত উৎকর্ষ বৃদ্ধি, অনিয়ম-দুর্নীতির ক্ষেত্রে বা দায়িত্ব পালনের ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনা জবাবদিহিতা নিশ্চিতে যেসব আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আছে সেগুলো শক্তিশালী করতে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে যেসব দিকনির্দেশনা বা কৌশল ছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি বা কোনো ধরনের অগ্রগতি হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাজেই আমরা একদিক থেকে যেমন সার্বিকভাবে অগ্রগতি হচ্ছে বিবেচনায় সন্তোষ প্রকাশ করতে পারি, অন্যদিকে বাস্তবে শুদ্ধাচার কৌশলের প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া এখনো সুদূর পরাহত রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের মহাসচিব অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রণয়ন ও উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মহুয়া রউফ এবং গবেষণাটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম।
সারাবাংলা/এমআই