বাজেটে নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষের ব্যয় বাড়বে: সিপিডি
২৩ জুন ২০১৯ ২০:২২
ঢাকা: ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে দেশের নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। সে তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন বিত্তশালীরা।
রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সিপিডি বাজেট সংলাপ ২০১৯’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞদের কথায় এসব উঠে এসেছে।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোহবানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন, আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম. হাফিজউদ্দিন খান, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইদুজ্জামান, বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, মোকাব্বির খান, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল আজিম, শিক্ষাবিদ ড. কুদরাত-ই-খুদা, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, সাবেক সংসদ সদস্য এসএম আকরাম, উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের আয়েশা খানম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়, এবারের বাজেটে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের জরুরি সংস্কারের বিষয়টি জোরালোভাবে উঠে আসেনি। আমরা প্রত্যাশিত কোনো সংস্কার দেখতে পাইনি। এছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার সংক্রান্ত সংস্কারের উদ্যোগও তেমন নেই। এসব সংস্কার ছাড়া বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন কঠিন হবে।
ড. রেহমান সোবহান বলেন, ‘বাজেটে শুধু বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়। বরাদ্দের অর্থ খরচ করার পর কী ফল পাওয়া গেল, তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। এদেশে ব্যাপক দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে, এটা প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচনের সাথে সাথে আয় বৈষম্যও বেড়েছে। বেড়েছে সামাজিক বৈষম্য। এটি নিয়ে আলোচনা কম হয়। ভর্তুকি দিচ্ছি, করে ছাড় দিচ্ছি, ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিচ্ছি। এই ধরনের সুবিধার কারণেই সমাজে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।’
বৈষম্যের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আপনারা প্রাথমিক বইয়েই পড়ান, প্রথমদিকে উন্নয়নের জোয়ারে বৈষম্য বাড়বে। পরে এটা কমবে। বৈষম্য কমানোর জন্য আমরা বড় বড় সামাজিক নিরাপত্তা প্রোগ্রাম করেছি। গ্রামাঞ্চলে স্কুল, ব্রিজ, কালভার্ট, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি। এগুলো অবকাঠামোর মধ্যদিয়ে আমরা বৈষম্য দূর করব। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য দরিদ্রতা দূর করা। অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে দরিদ্রতাকে আঘাত করব।’
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘এ বাজেট ব্যবসায়ী বান্ধব, ব্যবসা বান্ধব নয়- এটা আল্টিমেটলি তো একই কথা। ব্যবসায়ী বান্ধব যদি হয়, ব্যবসা বান্ধবও হয়ে যাবে। ব্যবসার ঘারে কে বসে আছে? ব্যবসা হর্স (ঘোড়া), আর ব্যবসায়ী রাইডার (চালক)।’
বাজেট ব্যবসা বান্ধব নয় উল্লেখ করে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান বলেন, ‘নতুন এই বাজেট ব্যবসায়ী বান্ধব, ব্যবসা বান্ধব নয়।’
অনুষ্ঠানে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ওনারা (সরকারের মন্ত্রী) যেখানেই যান, সেখানেই যদি জনগণের অংশগ্রহণ দেখতে পান, তাহলে তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার তো কোনো প্রয়োজনই নেই। ভোটের আগে রাতে ও ভোটের দিন কারচুপি করার দরকার কি? ভোট কারচুপির পর আবার রেজাল্ট দেওয়ার সময় আরেক কারচুপি। জনগণের সাথে যদি সেই সর্ম্পক থাকে তিনবার ভোট চুরি করার তো প্রয়োজনই হয় না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন। তাদের দায়িত্ব দিন, তারা যেন সিদ্ধান্ত নিতে পারে- কারা সংসদে যাবে, কারা সরকার গঠন করবে। বাজেটের সঙ্গে জনগণের সর্ম্পক কি হবে সেটা জনগণ যেন নির্ধারণ করতে পারে। এই জিনিসটা খুবই প্রয়োজন।’
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একটা বাজেট সরকারের চরিত্রকে খুব স্পষ্ট করে দেয়। বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, অতিধনী বৃদ্ধির হার বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। আর গরিব বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ। ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে দিনদিন। কিন্তু এই বৈষম্য কমানোর কোনো কথা প্রস্তাবিত বাজেটে নেই।’
সিপিডির অনুষ্ঠানে ফজলুল আজিম বলেন, ‘কোনো খাতেই স্বচ্ছতা নেই। নেই কোনো জবাবদিহিতা। সরকার প্রবৃদ্ধির যে অঙ্ক বলে তাতে তথ্যগত বিভ্রান্তি রয়েছে।’
মোকাব্বির খান বলেন, ‘দুর্নীতি আজ মহামারী রূপ নিয়েছে। এ থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন বিশেষ আদালতের ব্যবস্থা করা।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম