Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আ.লীগ হীরার মতো, যত আঘাত আসে তত শক্তিশালী হয়’


২৪ জুন ২০১৯ ১৬:৫৬

ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে হীরার সঙ্গে তুলনা করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, হীরা যত কাটা হয়, তত বেশি উজ্জ্বল হয়। একইভাবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগের ওপর অনেক আঘাত এসেছে। আওয়ামী লীগের ওপর যত বেশি আঘাত এসেছে, আওয়ামী লীগ তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে।

সোমবার (২৪ জুন) বিকেলে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলা স্বাধীনতা হারিয়েছিল। নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হয়েছিলেন মীরজাফরের ষড়যন্ত্রে। এই মীরজাফর তো গালিতেই পরিণত হয়েছে। এরপর দুইশ বছর ব্রিটিশ বেনিয়ারা শাসন করেছে এই ভূখণ্ড। দুইশ বছর পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই দুইশ বছর আগে হারিয়ে ফেলা স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতাকে আওয়ামী লীগই আবার ফিরিয়ে এনেছে।

আরও পড়ুন- দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংসদে স্মরণ মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছে উল্লেখ করে দলীয় সভাপতি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তানিরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে জানা যায়, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, তিনি অত্যাচার-নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় কোথায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘরবাড়ি আছে, তা খুঁজে খুঁজে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পরও অত্যাচার-নির্যাতন থেমে থাকেনি। ১৯৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর আবারও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন নেমে আসে।

বিজ্ঞাপন

তবে শত অত্যাচার-নির্যাতনেও আওয়ামী লীগ কখনো ভেঙে পড়েনি। শেখ হাসিনা বলেন, বরং আওয়ামী লীগের ওপর যত বেশি আঘাত এসেছে, আওয়ামী লীগ তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে। হীরা যেমন যত বেশি কাটা হয় তত বেশি উজ্জ্বল হয়, আওয়ামী লীগও তেমন। আর এর পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের মানুষের জন্য কর্তব্যবোধ, দায়িত্ববোধ, ভালোবাসা, ত্যাগ-তিতিক্ষা। এসব আছে জন্যই আওয়ামী লীগ ৭০ বছর ধরে টিকে আছে।

আরও পড়ুন- ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিজ্ঞা, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ব’

শেখ হাসিনা বলেন, কত আত্মত্যাগ! আওয়ামী লীগের ইতিহাস যদি দেখি, আমার মনে হয় না কোনো রাজনৈতিক দল দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এত আত্মত্যাগ করেছে। এরপরে ভাঙা-গড়ার খেলা তো আছেই।

এ বিষয়ে ওয়ান-ইলেভেনের সময়কার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বেশি দূরে যেতে হবে না। ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলো, তার আগে ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যারা ইমিডিয়েট পাস্ট ক্ষমতায় ছিল, তাদের ওপরই সাধারণত আঘাত আসে। কিন্তু সবার আগে আঘাত এলো আওয়ামী লীগের ওপর। আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি যখন জোর করে আসলাম, আমাকে আগে গ্রেফতার করা হলো, আমার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলো। তার অর্থটা কী, এখানেই বুঝা যায়।

তিনি বলেন, আমরা যেহেতু জনগণের কাজ করি, কাজেই জনগণের অধিকার যারা কেড়ে নেয়, তাদের একটা শ্যেন দৃষ্টি থাকে আওয়ামী লীগের ওপর, লক্ষ্য থাকে এই দলটিকে ধ্বংস করা। আর যতই তারা ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে, এই দলটা তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে। সেটার প্রমাণ ২০০৮ সালের নির্বাচন।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে আমাদের তো কোনো দোষ দিতে পারবেন না। সেই মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন, ইয়েস উদ্দিন সবই তো খালেদা জিয়ার তৈরি। তারাই ছিল ইমারজেন্সি সরকার। যখন তাদের অধীনে নির্বাচন হলো, ৮৪ শতাংশ ভোট পড়ল। খালেদা জিয়ার দল বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টি সিট। কারণ তারা জনগণের বিশ্বাস, আস্থা হারিয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়— জনগণ সেটা জানে বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে ১৯৫৫ সালের নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তোলার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শূন্য থেকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করার উদাহরণও তুলে ধরেন তিনি। এরপর ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর ২১ বছর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় না আসা এবং ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় আছি। ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের চিত্র বদলে গেছে। আজকের বাংলাদেশ সারাবিশ্বে সম্মান পাচ্ছে। কারণ দেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত আসছে, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, আর যাই হোক দেশের মানুষ তো কিছু পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।

সভামঞ্চে উঠে বঙ্গবন্ধুকন্যা দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরেন এবং সাজেদা চৌধুরীও আওয়ামী লীগ সভাপতির কপালে বাৎসল্যের চুমু এঁকে দেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত ও উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ। এছাড়াও সভা মঞ্চে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্যরা উপস্থিত আছেন।

যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর