অহমিকায় নয়, মাটি-মানুষের সঙ্গে মিশে চলব:প্রধানমন্ত্রী
২৪ জুন ২০১৯ ২০:০৯
ঢাকা: আওয়ামী লীগের ৭০বছরের অর্জনের ইতিহাস উজ্জল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আমরা অহমিকায় নয়, মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে চলব।
আওয়ামী লীগ এই উপমহাদেশে প্রাচীন দলগুলোর মধ্যে অন্যতম সুসংগঠিত একটি দল। এই দলকে শত আঘাতেও কেউ ছিন্ন-ভিন্ন করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
সোমবার (২৪জুন) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি। বক্তব্যের শুরুতে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের শ্রদ্ধায় স্মরণ করে ৭০বছরের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন- ‘আ.লীগ হীরার মতো, যত আঘাত আসে তত শক্তিশালী হয়’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বাংলাদেশে হতদরিদ্র বলে কিছু থাকবে না। জাতির পিতা মানুষকে ভালবাসতেন। দেশের মানুষকে ভালবাসতেন। কাজেই দেশের মানুষের কল্যাণ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও এটাই মনে রাখতে হবে। প্রত্যেক নেতাকর্মীকে জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। বঙ্গবন্ধু আমাদের বলেছেন, সিম্পল লিভিং হাই থিঙ্ককিং অর্থ্যাৎ উচ্চমানের চিন্তা-ভাবনা করবে সাধারণ জীবন যাপন করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কথা হলো, মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন। সেই নীতি মেনে চলেছি বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের উচ্চশিখরে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ভাগে উন্নীত করতে পেরেছি। সামনে আমাদের টার্গেট ৮ দশমিক ২ভাগে উন্নীত করা। আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত করতে পেরেছি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন একটা অর্জন হয়, তখন আমার মনে এটাই আসে যে, নিশ্চয়ই বাবা বেহেশত থেকে দেখেন- তার দেশের মানুষ আর কেউ না খেয়ে থাকে না। তার বাংলাদেশের মানুষের এখন আর ছিন্ন বস্ত্র পরে না। আমাদের প্রতিজ্ঞা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ ঘর পাবে। ’
এছাড়াও নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতায় বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, একটি মানুষ যদি কষ্ট পায়, আমার আব্বার আত্মা কষ্ট পাবে। কাজেই আমাকে এমনভাবে কাজ করতে হবে, যাতে এদেশের প্রতিটি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। অন্তত তার জীবনের নূন্যতম চাহিদা যেন পূরণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। খাদ্যের ব্যবস্থা করছি। দেশের মানুষের কল্যাণ হচ্ছে। জীবন মান উন্নত হচ্ছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। ’
আওয়ামী লীগের ৭০বছরের মধ্যে ৩৮বছর ধরে দলের সভাপতি হিসাবে দায়িত্বপালনকারী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যেন আন্তর্জাতিকভাবে মাথা উঁচু করে মর্যাদা নিয়ে সস্মানের সাথে চলতে পারে, আমরা সেইভাবে কাজ করব। আমি এটুকুই চাইব, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এদেশের মানুষ সুন্দর জীবন পায়। উন্নত জীবন পায়। ’
এবিষয়ে শতবর্ষী ব-দ্বীপ তৈরির পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে জন্যই আমি একেবারে শত বছরের পরিকল্পনা নিয়েছি। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করব। ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। ২০৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন হবে। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তো বাঁচব না। কিন্তু আজকের যারা নতুন প্রজন্ম, তারা থাকবে। তারা উদযাপন করবে শতবর্ষ।’
ডেল্টা প্ল্যানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এই প্ল্যান করে দিয়েছি। এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। আর আওয়ামী লীগ দিনের পর দিন যে শক্তি অর্জন করেছে, তা যেন আরও শক্তিশালী হয়। আওয়ামী লীগের শিকড় বাংলার মাটির সাথে এমনভাবে প্রোথিত শত চেষ্টা করেও কেউ এটাকে উপড়ে ফেলতে পারেনি। কোনোদিন পারবেও না। ’
‘ইনশাল্লাহ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব’ বলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই অঙ্গীকার করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এছাড়াও দলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশের জনগণসহ বিদেশে যারা অবস্থান করছে তাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি। পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতিও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও বক্তৃতা করেন, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, উপদেষ্টাপরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত ও উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম