Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বায়ুদূষণ প্রতিরোধের এখনই সময়


২৪ জুন ২০১৯ ২০:০৮

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সমাজ ও সভ্যতাকে দ্রুত এগিয়েছে নিয়েছে। মানুষের জীবনধারাও পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত। উন্নত জীবন-জীবিকার টানে গ্রাম ছেড়ে ঢাকামুখী হচ্ছে মানুষ। ফলে ঢাকার জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। জনসংখ্যার চাপ কুলিয়ে উঠতে না পেরে ধীরে ধীরে ঢাকা হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম অনিরাপদ, অপরিচ্ছন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দূষিত নগরী। সাম্প্রতিক পত্র-পত্রিকায় এসেছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর বিশ্বের ভয়াবহ অপরিচ্ছন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দূষিত নগরীর মধ্যে চতুর্থ। ঢাকার মানুষ অনিরাপদ বায়ুদূষণের মধ্যে বসবাস করছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) এর বায়ুদূষণের মান বিচারে ঢাকা শহরের বায়ু স্কোর করেছে ১৬৫ তম। গত বছর ‘গ্লোবাল এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে’র প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের শহর হিসেবে এশিয়ায় ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। এবার একিউআই তাদের বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষা ঢাকায় সকাল ১০.৪৪ মিনিট সময়ে শেষ করে। ওই সময় ঢাকার বায়ূদূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ খারাপ পর্যায়ে পৌঁছায়।

বিজ্ঞাপন

এবার প্রতিবেশী তিন দেশের রাজধানী যথাক্রমে-ভারতের নয়াদিল্লি, পাকিস্তানের লাহোর এবং নেপালের কাঠমান্ডু বায়ুদূষণের মানবিচারে তুলনামূলক এশিয়ায় প্রথম সাড়িতে রয়েছে বলে ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে’র প্রতিবেদনে জানা যায়। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহর ও শহরতলীতে বাতাসের বিশুদ্ধতা পরিমাপ করার কাজ করে ‘একিউআই’। সময়ে সময়ে নির্দিষ্ট কোনো স্থানের বায়ুমণ্ডলে কিংবা নির্দিষ্ট কোনো শহরে বাতাসের বিশুদ্ধতা নিরুপণ করে। তারপর উক্ত এলাকার বাতাস কতটা স্বাস্থ্যকর বা ঝুঁকিপূর্ণ কী না তার গাণিতিক উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জনসাধারণকে সচেতন করতে প্রতিবেদন আকারে নিজস্ব কায়দায় প্রচার করে। তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের ব্যাখ্যায় জানা যায়, কোনো শহর বা অঞ্চলে বায়ুদূষণের গাণিতিক মান ১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে হওয়ার অর্থ হলো ওই এলাকার মানুষ, জীবজন্তু, উদ্ভিদ, তরুলতা, পানি এবং জলজ জীব মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে টিকে রয়েছে। এক্ষেত্রে বৃদ্ধ, শিশু, রোগী ও স্পর্শকাতর প্রাণীর স্বাস্থ্য ঝুঁকিটা তিনগুণ বেশি হয়ে থাকে। ঢাকার বাতাস যে ভয়ংকর মাত্রায় দূষিত হয়ে চলেছে তা এখন আর কেউ অস্বীকার করতে পারেন না।

বিজ্ঞাপন

পরিবেশবীদদের মতে, ঢাকা মহানগরীর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ভয়াবহ বায়ুদূষণের শিকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরের বায়ু খুব বেশি সুক্ষ্ম ঘনস্তর বিশিষ্ট এবং ধোঁয়াযুক্ত। ঢাকা ও আশপাশের এলাকার নদ-নদী, পুকুর, নালা, ডোবা-খালের পানি সাংঘাতিক ময়লায় দূষিত। এমনকি ঢাকা শহরের আশপাশের এলাকার নলকূপের পানিও দূষিত। এর কারণ যত্রতত্র বর্জ্য নিক্ষেপ। (বর্র্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন না হওয়ায় বর্জ্যে ভরাট করা হচ্ছে আশপাশের জলাভূমি।) যেসব বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলাও ক্ষতিকর, পুড়িয়ে ফেলা উচিত সেসব ক্ষতিকর বর্জ্য বাছবিচার না করে সড়কের ডাস্টবিনে এবং সবশেষে আশেপাশের পরিত্যক্ত জলাভূমি ও নর্দমায় ফেলা হচ্ছে। পরে যা মাটিতে চলে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক রাজধানীর বিভিন্ন অংশে উন্নয়নমূলক নির্মাণের অংশ হিসেবে ভবন ভাঙা, ভবন নির্মাণ, সড়ক ও জনপথের নির্মাণ কাজ, রাস্তা মেরামত, ফ্লাইওভার নির্মাণ ও মেট্রোরেলের কাজ চলমান রয়েছে।

পরিবেশবীদরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ না করায় তীব্র বায়ুদূষণে নাকাল রাজধানীবাসী। অন্যদিকে সড়কে মালামাল ও ময়লার স্তূপ আর যানবাহনের ছোটাছুটিতে বাতাসে ধূলোকণার আধিক্য হুমকির মুখে ফেলেছে জনস্বাস্থ্যকে। সেইসঙ্গে যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়ায় একাকার হয়ে ঢাকার স্নিগ্ধ বাতাসের বিশুদ্ধতার স্বাভাবিক মান ভয়াবহ জটিল করে তুলেছে। পরিবেশ অধিদফতরের গবেষণা মতে, ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা দায়ি ৫৮ শতাংশ, রোড ডাস্ট ও সয়েল ডাস্ট ১৮ শতাংশ, যানবাহন ১০ শতাংশ, বায়োমাস পোড়ানো ৮ শতাংশ এবং অন্যান্য উৎস ৬ শতাংশ।

পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা ও আশপাশের এলাকার নদী, পুকুর, জলাশয়ের পানি শিল্প-কারখানার বর্জ্যের কারণে দূষিত হচ্ছে ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ পানি দূষিত করছে ঢাকাবাসীর প্রাত্যহিক আবাসিক আবর্জনা বর্জ্য। এসব বর্জ্যে ভূগর্ভস্থ নিরাপদ পানিও দুষিত হচ্ছে। এই দূষণ ‘জীবনচক্রে’র মতো চক্রাকারে ঘুরে ফিরে এসে জীবজন্তু তথা মানুষের মারাত্বক ক্ষতি করছে। আর কৃষকের চাষাবাদে ব্যবহৃত কীটনাশক, রাসায়নিক সার ‘অ্যামোনিয়া’ চক্রাকারে পানি ও বায়ুদূষণ করে তৈরি করছে মানুষের মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকি। অন্যদিকে ঢাকা শহরে যানবাহন থেকে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড সার্বক্ষণিক নির্গত হচ্ছে। ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যায় শুকনো মৌসুমে। এ সময়ে বেশি পরিমাণ দূষিত পদার্থ বাতাসের ঘনত্বে ভরপুর থাকে, যা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সরাসরি শরীরে ঢুকে নীরবে ক্ষতি করছে ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গ। তবে ঢাকায় বর্ষাকালে বায়ুদূষণ থাকে না। ঢাকা এবং সমগ্র বাংলাদেশের বায়ুর গড় মান পুরোপুরি ভিন্ন। গ্রামাঞ্চল এবং অন্যান্য জেলার বায়ুর মান ঢাকার চেয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বায়ুদূষণের মূল কারণ ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’ বা পিএম ১০ ও পিএম ২.৫। অতিক্ষুদ্র ক্ষতিকর পদার্থ ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’ বা পিএম ঢাকার বায়ুতে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় রয়েছে। এছাড়া কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, পিএসসি, ধূলিকণাসহ দূষণের ছয় সাতটি উপাদান রয়েছে। একিউআই বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করেই বলেছেন, ঢাকার প্রতি ঘন মাইক্রোগ্রাম বাতাসে ২৪৭ মাইক্রোগ্রাম ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’ রয়েছে। অথচ ঢাকা শহরের বাতাসে থাকার কথা সর্বোচ্চ ৫০ পিএম। কারণ ন্যাশনাল এমবিয়েন্স এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড (এনএএকিউএস) বাংলাদেশে বাতাসের পিএম ৫০ এর মান রাখা বাধ্যতামূলক বলে নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ঢাকা শহরের বায়ুস্তর ভয়ানক দূষিত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারা বিশ্বে বায়ু বিশুদ্ধতার মান নির্ধারণ করে তাদের নির্দেশনায় জানায়, বায়ুদূষণের সর্বোচ্চ গ্রহণীয় মাত্রা হচ্ছে প্রতি ঘন মাইক্রোগ্রাম বাতাসে ২০ পিএম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৭০ পিএম মাত্রাকে নিকৃষ্ট ও দূষিত বলে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত মাত্রা ৫০ পিএম হলেও ঢাকায় বছরের মার্চ থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়টিতে দূষণের মাত্রা খুব বেড়ে যায়। এসময় বাতাসে ২৪৭ পিএম রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বৃষ্টিবাদল প্রায় হয় না বললেই চলে। ঢাকার বায়ুতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ইটের অতি ক্ষুদ্র কণা, বালি ও প্লাস্টিক কণা। এছাড়া ঢাকা ও আশপাশের রাস্তার বাতাসে সার্বক্ষণিক ঘুরপাক খায় অটোমোবাইলের ডিজেল ইঞ্জিনের জ্বালানির ধোঁয়া, কার্বন মনোক্সাইড, রিকশার টায়ারের ক্ষয়িত অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা ইত্যাদি। তবে ঢাকার আশপাশের শহরতলীর কিছু এলাকার বাতাসে বেশি পরিমাণে থাকে সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড এবং ১০ মাইক্রোমিটারের ছোট ধূলিকণা, জ্বালানি কাঠের ভস্ম, কয়লা, ও ধোঁয়া মিশ্রিত ছাইকণা।

বায়ুতে অতিমাত্রায় ক্ষতিকর পিএম থাকার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বায়ুবাহিত নতুন নতুন রোগ দেখা দিচ্ছে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অভিমত। সুনির্দিষ্টভাবে গবেষণা না হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণে ঢাকা শহরের প্রকৃতি ও পরিবেশ ভয়াবহ মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছে। এধরণের ব্যাপকতর বায়ুদূষণ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অকাল মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে। ঢাকার বাতাসে বেশি মাত্রায় পিএম থাকার কারণে ধমণীতন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্রের রোগী বেড়ে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ভিড় বাড়ছে শ্বাসতন্ত্র ও বায়ুদূষণ আক্রান্ত রোগীর। গবেষণায় প্রকাশ, ঢাকার বাতাস শিশুদের মানসিক বিকাশ দারুণভাবে ব্যহত করছে। বায়ুদূষণের কারণে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিমত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকা শহরের বায়ুতে বিপদজনক মাত্রায় ঘাতক পদার্থ ‘সীসা’ রয়েছে। ‘সীসা’ মানে বিষ কে না জানে? এই সীসা মানুষের নিঃশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে সরাসরি মস্তিষ্কে পৌঁছে যাচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত করে কেন্দ্রীয়  স্নায়ুতন্ত্র। এতে বেড়ে যায় হাইপারটেনশন। ফলস্বরূপ, বয়স্ক ও শিশু-কিশোররা অধিক হারে আক্রান্ত হচ্ছে মুত্রতন্ত্রের নানান জটিল রোগে।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে প্রকাশ, ঢাকা শহরের শিশুদের প্রতি ডেসিলিটার রক্তকণায় ২১.৬ মাইক্রোগ্রাম ‘সীসা’ রয়েছে। আর শহরের আশপাশে বসবাসকারী শিশুদের প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৯.৬ থেকে ৩৮.৯ মাইক্রোগ্রাম সীসার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত সীসার গ্রহণীয় মাত্রার চেয়ে যা তিনগুণ বেশি উচ্চমাত্রার বিষাক্ত। সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ১০ মাইক্রোগ্রামের বেশি ‘সীসা’ থাকা মানেই বিষে আক্রান্ত হওয়া। তাই বলা যায়, ঢাকা শহরের বর্তমানের বায়ুদূষণের চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে নগরের অধিকাংশ নাগরিক রোগাত্রান্ত হতে বাধ্য হবেন। অন্যদিকে স্থপতি-প্রকৌশলীদের ভাষ্য, ঢাকায় ব্যাপক হারে বায়ুদূষণের কারণে ভবন কাঠামোয় ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী টেকসই হয় না। স্থায়িত্ব নস্ট হয়। এতে বেড়ে যায় মেরামত খরচ।

বর্তমানে ঢাকা শহরের রাস্তায় প্রতিদিন ০.৩৫ মিলিয়ন মোটরগাড়ি চলাচল করছে। প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এমনকি ভারতের শহরগুলোতে মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো গাড়ি চলাচল করে না। অবাক হলেও সত্যি, ডিজিটাল এই যুগেও ঢাকায় এখনও চলছে মান্ধাত্বা আমলের হাজার হাজার মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন। ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের বড় কারণ পুরনো যানবাহনও। পুরনো বাস, ট্রাক থেকে বেশি পরিমাণে ধোঁয়া নির্গত হয়। দ্রুত পরিবেশ দূষণ ঘটায়। ঢাকা শহরের ৮০ শতাংশ বায়ুদূষিত করছে ডিজেল চালিত পুরনো যানবাহন। পুরনো ডিজেল ইঞ্জিনের গাড়ি ৫ গুণ বেশিমাত্রায় বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে।

বায়ুদূষণের মাত্রা কমানোর জন্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদ্যোগ লক্ষ্য করার মত। ১৯৯০ সালে প্রথমপর্বে ২০ বছরের পুরনো যানবাহন দিল্লির রাস্তায় চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেয় ভারত। ১৯৯৮ সালে নিষিদ্ধ করা হয় ১৭ বছরের পুরনো গাড়ি। ১৯৯৯ সাল থেকে একদম নিষিদ্ধ করা হয় ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি। আমাদের মতো কাগজে কলমে নিষিদ্ধ নয়। বাস্তবে আইন প্রয়োগ করে দেখিয়ে দিয়েছে তারা। ঢাকা শহরে পুরনো যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, বায়ুদূষণকারীদের শাস্তি ইত্যাদি সবই রয়েছে আইনের মোটা বইতে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আইন কার্যকর হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি তাদের শহরের বাতাসের দূষণমাত্রা কমানোর জন্যে পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে পারে। ক্ষতিকর মাত্রায় বায়ুদূষণকারী শিল্প কারখানা শহরের বাইরে নিরাপদে স্থানান্তর করে যদি সফল হতে পারে, বাংলাদেশ কেন পারবে না? শুধুমাত্র সুশাসনের সহায়তায় পরিবেশ দূষণ রোধ করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিবেশী সিঙ্গাপুর, দিল্লি, কাঠমান্ডু, লাহোর। আর সুশাসনের অভাবে ঢাকা ও করাচি শহর ক্রমাগত দূষিত হয়েই চলেছে।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে ৫৫ লাখের বেশি মানুষ মারা যায় বায়ুদূষণের কারণে। ২০১৩ সালে শুধু চীনে ১৬ লাখ এবং ভারতে ১৩ লাখ মানুষ মারা গেছে বাষুদূষণের কারণে। সময় এসেছে বায়ুদূষণকারী পুরনো গাড়ি ঢাকা শহরের সড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কাজ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার। কারণ সুস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাঁচার অধিকার, নাগরিক অধিকার। আর সুস্থ্যভাবে বাঁচা নির্ভর করে সুস্থ্য পরিবেশের ওপর। বায়ুদূষণের ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ ক্ষতি মোকাবিলার উপায় খুঁজতে হবে সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, এবং পরিবেশবিদদের। যদিও নগরীর বায়ুদূষণ রাতারাতি একেবারে রোধ করা সম্ভব নয়। তবে দূষণের হার বা মাত্রা কমানো সম্ভব। এজন্য অল্পমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ করে এমন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। পরিবেশ সুশাসনের মাধ্যমে ঢাকা শহরের টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ নিজস্ব সম্পদ ব্যয় করে ৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে অঙ্গীকার করেছে, সময়ের প্রয়োজনে তার বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। নগরীর বায়ুদূষণ রোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ব্যাপক সম্পদের অপচয় হবে। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য। আসন্ন ভয়াবহ সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের উঁচু মহল তথা রাজনৈতিক মহলের প্রাত্যহিক আলোচ্যসূচিতে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকার বায়ুদূষণ বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত হওয়া প্রয়োজন। বায়ুদূষণ ও পরিবেশের বৈরিতা মোকাবিলাকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং বাস্তবমুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার এখনই সময়।

সারাবাংলা/পিটিএম

বায়ুদূষণ রাজধানী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর