কালো সোনা সাদা: হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রত্যাশা
২৪ জুন ২০১৯ ২১:৫৭
ঢাকা: আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সারাদেশের সোনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সাধারণ সোনা ব্যবসায়ীরাও এমনটাই মনে করছেন। সংগঠনের একাধিক নেতা ও সাধারণ সোনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, সরকার যে রাজস্বের বিনিময়ে অপ্রদর্শিত (কালো) সোনা প্রদর্শন (সাদা) করার সুযোগ দিয়েছে, তাতে সাড়া দিয়ে বিপুলসংখ্যক সোনা ব্যবসায়ী এগিয়ে আসবে। আর তাতে এক হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আয় হতে পারে।
বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় সাতশ ব্যবসায়ীসহ সারাদেশে ১০ হাজার সোনা ব্যবসায়ী রয়েছেন।
এ বিষয়ে স্বর্ণমেলা-২০১৯ কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি এনামুল হক খান সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত স্বর্ণমেলায় ৪০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু যেভাবে সারাদেশে সোনা ব্যবসায়ীদের মাঝে এই মেলা সাড়া ফেলেছে, তাতে আমরা আশা করছি রাজস্ব আদায় এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
আরও পড়ুন- সোনা আমদানিতে বন্ড সুবিধা দেওয়া হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান
যারা তিন দিনের স্বর্ণমেলায় রাজস্ব দিয়ে কালো সোনা সাদা করতে পারছেন না, তারা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব রোর্ডের বিভিন্ন কর অফিসে গিয়ে এই সুযোগ নিতে পারবেন বলেও জানান এই বাজুস নেতা।
এনামুল হক খান বলেন, ঢাকা শহরে মধ্যে সাতশ জনসহ সারাদেশে ১০ হাজার সোনা ব্যসায়ী রয়েছেন। এই ব্যবসায়ীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সুযোগ করে দিয়েছেন, সেটি যুগান্তকারী সুযোগ। আমরা আশা করছি, এই সুযোগ নিয়ে সারাদেশের ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে থাকা অপ্রদর্শিত সোনা প্রদর্শিত করে নিতে পারবেন।
‘এই সুযোগ যারা কাজে লাগাবেন না, তারা পরে আর এই সুযোগের আওতায় আসবেন না। তাদের কাছে থাকা সোনা অবৈধ হয়ে যাবে। আর অবৈধ সোনার বিরুদ্ধে অভিযান চালালে আমাদের কিছু করার থাকবে না। উল্টো বাজুসের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সহায়তা করা হবে,’— বলেন এনামুল হক।
যেসব ব্যবসায়ী এই সুযোগ নেবেন না, তাদের মতো অভাগা ব্যবসায়ী বাংলাদেশে আর হবে না বলে মনে করছেন এই বাজুস নেতা।
সোনা চোরচালান বন্ধ প্রসঙ্গে এনামুল হক খান বলেন, চোলাচালান একটি আলাদা জগত। কোনো সোনা ব্যবসায়ী চোরাকারবারীর সঙ্গে জড়িত নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
দেশে কী পরিমাণ সোনা আছে, তার কোনো জরিপ নেই উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আগামী ৩০ জুনের পর এর একটি হিসাব পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) আরেক সহসভাপতি ডা. দিলীপ রায় সারাবাংলাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ নীতিমালার দাবি ছিল আমাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে স্বর্ণ নীতিমালা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
দিলীপ রায় বলেন, এর পাশাপাশি দেশে যে অপ্রদর্শিত সোনা ছিল, সেটা বৈধ করার একটা সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগ দেওয়ায় দেশে সোনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এবারের স্বর্ণমেলার পাশাপাশি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও গ্রামীণ জুয়েলার্সের চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার আগরওয়ালা সারাবাংলাকে বলেন, আজ (২৪ জুন) সান্দনা জুয়েলার্স, নিকেতন জুয়েলার্স, অলঙ্কার জুয়েলার্স এবং গ্রামীণ জুয়েলার্স বড় অঙ্কের রাজস্ব জমা দিয়েছে। তার নিজের জুয়েলার্সের পক্ষ থেকে সোমবার ১০ লাখ টাকার রাজস্ব জমা দিয়েছেন বলে জানান এই স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া সোনা বৈধ করা সুযোগ পেয়ে ব্যবসায়ীরা খুশি।
সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীদের অনুরোধে গত ২৮ মে এনবিআর একটি পরিপত্র জারির মাধ্যমে দেশে মজুত করা কাগজপত্রবিহীন সোনা বৈধ করা সুযোগ দেয়। একবারের জন্যই কেবল ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ পাবেন।
রাজস্ব আদায়ে আয়কর মেলার মতো এই স্বর্ণমেলার আয়োজন করা হয়েছে। গত ২৩ জুন থেকে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তিন দিনব্যাপী চলছে এই স্বর্ণমেলা। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৫ জুন) শেষ হচ্ছে এই মেলা। এছাড়াও ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশের সব বিভাগীয় শহরে ২৪ ও ২৫ জুন দুই দিনব্যাপী চলছে স্বর্ণমেলা। এসব মেলায় ব্যাংকের বুথসহ কর পরিশোধে অনুষাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে।
কালো সোনা যেভাবে সাদা হচ্ছে
দেশে প্রথমবারের মতো ব্যবসায়ীদের কাগজপত্রবিহীন ও অঘোষিত সোনা নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রতি ভরি সোনা ও সোনার অলংকার এক হাজার টাকা, হীরা ছয় হাজার টাকা এবং রুপা ৫০ টাকা কর দিয়ে বৈধ করা যাচ্ছে।
২ দিনে ঢাকায় রাজস্ব আয় ৫০ কোটি টাকার বেশি
স্বর্ণমেলার প্রথম দিন ২৩ জুন কালো সোনা সাদা করার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে আপন জুয়েলার্স, ভেনাস ও ডায়মন্ড— এই তিন জুয়েলার্স রাজস্ব দিয়েছে সাড়ে ২২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দিন গ্রামীণ ও মেঘনা জুয়েলার্সসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান রাজস্ব দিয়েছে। দ্বিতীয় দিনের বিকেল পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকার মতো। আয়োজকদের ধারণা, আগামীকাল মঙ্গলবার মেলার শেষ দিনে রাজস্ব আদায় হবে সবচেয়ে বেশি।
তারা বলছেন, এটা শুধু ঢাকা শহরের চিত্র। সারাদেশের তথ্য পাওয়া গেলে গত দুই দিনের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ অনেক বেশি হবে।
সারাবাংলা/জিএস/এমএম
এনবিআর কালো সোনা কালো সোনা সাদা বাজুস বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি রাজস্ব স্বর্ণমেলা ২০১৯