সংসদে বাজেট আলোচনায় বিএনপির কঠোর সমালোচনা
২৪ জুন ২০১৯ ২২:২৪
জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিএনপিকে জঙ্গির দোসর ও সাম্প্রদায়িক শক্তি আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘এ ধরনের রাজনৈতিক শক্তিকে ক্রেণ দিয়ে তুলে বিরোধী দলে বসানো, এটা দেশের জন্য ও গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
সোমবার (২৪ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়।
ইনু বলেন, ‘উন্নয়ন ও অগ্রগতির অর্থনীতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে বিএনপির মতো সাম্প্রদায়িক জঙ্গির দোসর রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দান থেকে মাইনাস করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন রাজনীতির স্পেস নেই বলে কথা বলা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। শান্তির শত্রুদের জন্য কোনো রাজনৈতিক স্পেস দেওয়া যায় না। গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে যারা গণতন্ত্রের পিঠে ছোবল মারে, তাদের জন্য মায়া কান্না গণতন্ত্রকে ধ্বংসই করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য রাজনীতির শান্তি দরকার। শেখ হাসিনা সরকারকে অনেক মূল্য দিয়ে সেই শান্তি অর্জন করতে হয়েছে। তাই শান্তির শক্তিতে অশান্তির হোতাদের কোনো ছাড় নাই। দমন ওদের করতেই হবে। আগুণ সন্ত্রাস, জঙ্গি, আন্তর্ঘাত, খুনি, যুদ্ধাপরাধী ও দুর্নীতির বিচার প্রতিহিংসা না। এসব ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত না।’ এমনও রাজনৈতিক শক্তি বিদ্যমান যারা সামরিক শাসনের আমলে রাজনৈতিক বিষবৃক্ষ হিসেবে কাজ করছে—বলেন তিনি।
হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি হচ্ছে সেই দল যে দলে খুনি, জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক চক্রমহলের রাজনৈতিক ছায়া। এটি সাম্প্রদায়িক দল। সংসদে বা বাইরে যেখানেই থাকুক না কেন বিএনপি এখনো যুদ্ধাপরাধের বিচার মানে না, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মানে না। সংবিধানের চার নীতি মানে না। স্বাধীনতার ঘোষণা মানে না। সুতরাং এরকম একটি অবস্থায় সংবিধান এবং দেশবিরোধী রাজনৈতিক দল। ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন তত্ত্ব হিসেবে পালন করেন। জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বলার চেষ্টা করে।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, লুটপাট, অগ্নিসন্ত্রাস, শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা দেশবাসী কখনো ভুলে যাবে না। যাদের আমলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধ করেছিল, বিচারপতির দরজায় লাথি মারে, হাজার হাজার সেনা কর্মর্তাদের হত্যা করেছে, তাদের মুখে আইনের শাসনের কথা মানায় না। এখন বাজেটের টাকা তারেক রহমানের হাওয়া ভবন ও খোয়াব ভবনের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয় না বলেই দেশের সবক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর পদে থেকে খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করেছেন। বিএনপির আমলে সালসা ও আজিজ মার্কা নির্বাচনও দেশবাসী কখনো ভুলবে না।’
এমপিওভুক্তকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সকল যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। কাউকে বঞ্চিত করা সরকারের লক্ষ্য নয়। যারা অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে তাদের প্রতি আমাদের লক্ষ্য রয়েছে যাতে তারা আগামিতে যোগ্য হয়ে ওঠে।’
বিএনপির উকিল আবদুস সাত্তার কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে, তা জামিনযোগ্য। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত নানা উছিলায় তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।’
এছাড়া বিএনপি নেতাদের নামে দায়ের করা গায়েবী মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট ধনীকে আরও ধনী করবে, গরীবকে আরও গরীব করবে। বাজেট প্রতিবছর বাড়লেও বাস্তবায়ন কমছে। ঘাটতি মেটাতে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে বিনিয়োগ বাড়ছে না। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না, কর্মসংস্থান না হলে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে না। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক থেকে লুট হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ঋণখেলাপীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে কোনো দিক-নির্দেশনা নেই বাজেটে।’
বিকল্প ধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বলেন, ‘সারাদেশে নারীর ক্ষমতায় চোখে দেখার মতো। তবে দুর্নীতিতে নারীরা পিছিয়ে আছে, এটা একটা শুভ সংবাদ। বিশাল একটি তরুণ প্রজন্ম উচ্চাভিলাষী হয়ে পড়েছে। উন্নত দেশে এটা পজেটিভ হিসেবে দেখলেও আমাদের দেশে তা নেগেটিভ হিসেবে দেখা হয়।’
সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল। বাজেট শুধু বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়; দেশের কল্যাণে সরকারের দর্শন ফুটে উঠে বাজেটে। তবে করের আওতা অবশ্যই সহনীয় মাত্রায় বাড়াতে হবে। অনেক মন্ত্রণালয় বাজেট বরাদ্দ কেন বাস্তবায়ন করতে পারছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। কে কী সমালোচনা করলো সেটি দেখলে হবে না।’
এছাড়া বিএনপি নেতারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গোটা জাতিকে নিয়ে বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আর বিচার বিভাগের জন্য বাজেট আরও বাড়াতে হবে। বিচারকের বেতন-ভাতা বাড়াতে হবে। মামলাজট নিরসনে বিচারকের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হবে। হাইকোর্টে আরও একশ জন বিচারপতি নিয়োগ করা প্রয়োজন।’
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ‘বিএনপিসহ কিছু কথিত সুশিল সমাজের ব্যক্তিরা প্রস্তাবিত বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বাজেট বলেন। কিন্তু টানা ১০ বছর ধরে এমন উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়ে তা বাস্তবায়ন করে বর্তমান সরকার দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে স্থাপন করেছে। দেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে।’
জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, ‘ঋণখেলাপীর কারণে আর্থিকখাতে তারল্য সংকটের সৃষ্টি করেছে। এ সংকট নিরসনে বাজেটে কোনো নির্দেশনা নেই। বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। বাজেটের ঘাটতি মোকাবেলায় প্রতিবারই ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। এটা অর্থনীতির জন্য শুভকর নয়।’ এছাড়া তিনি মোবাইলের ওপর কর আরোপ না করারও দাবি জানান।
সারাবাংলা/এএইচএএইচ/এমআই