কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্বিখণ্ডিত না করতে আইনি নোটিশ
২৫ জুন ২০১৯ ২০:৩২
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: দূরে কোথাও নয় বরং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস সংলগ্ন ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণে ব্যবস্থা নিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
গত ৩০ মে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মো. কামাল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ১৩ ভূমি মালিকের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর এই নোটিশ পাঠান। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এতোদিন বিষয়টি জানাজানি হয়নি। সম্প্রতি গণমাধ্যমকর্মীরা এই নোটিশের বিষয়টি জানতে পারেন।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) আইনজীবী কামাল হোসেন নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
আইনি নোটিশে বলা হয়, গত ২৩ অক্টোবর ২০১৮ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। উক্ত প্রকল্পের জন্য ব্যয়িত অর্থের অধিকাংশই ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় হবে বলে জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভূমি অধিগ্রহনে কুমিল্লা সদর উপেজেলার লালমাই মৌজার অন্তর্ভূক্ত ৭, ৯, ১২ ও ১৩ নম্বর সিটের জমি নির্ধারণ করা হয়। বিষয়টি জানার পর একটি প্রভাবশালী মহল ওই এলাকার বেশিরভাগ জমি সিন্ডিকেট করে কিনে নেয়। এসব জমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এদিকে তিন কিলোমিটার দূরে জমি অধিগ্রহণ করার খবর জানতে পেরে সেসময় আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্বিখণ্ডিত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন অভিযোগে সেসময় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েক দিন আন্দোলন করেন। তখন শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান ক্যাম্পাসের সাথে নতুন ক্যম্পাসের মধ্যে একটি প্রশস্ত নিজস্ব রাস্তা করে দেওয়া হবে এমন আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে ক্লাসে ফিরে যান।
সেসময় অভিযোগ ওঠে যে, স্বার্থান্বেষী একটি মহল মেগা প্রকল্পের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করছে।
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয় যে, বর্তমান ক্যাম্পাসটি যেখানে অবস্থিত সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দরা যে কোনো শর্তে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণে ভূমি দিতে প্রস্তুত। তবুও একটি মহল ষড়যন্ত্র করে দূরে জমি কেনার পাঁয়তারা করছে।
নোটিশ পাওয়ার দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে নোটিশ দাতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। তা না হলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলে জানানো হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইউজিসির চেয়ারম্যান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক, কুমিল্লার পুলিশ সুপার, কোটবাড়ী পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।
নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বলেন, ‘কোর্ট থেকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তার জবাব আমি কোর্টকে দেব। এ বিষয়ে সাংবাদিকের কাছে কোন বক্তব্য দিতে আমি রাজি নই।’
আইনি নোটিশটি হাতে পাননি জানিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘লিগ্যাল নোটিশ আমি পাইনি তাই এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। তবে আমি এটুকু বলতে পারি যদি বর্তমান ক্যাম্পাস সংলগ্ন পর্যাপ্ত জায়গা থাকে তাহলে দূরে কেন জায়গা নেবে? তাছাড়া এখানে সরকারের কোটি কোটি ব্যয় হয়েছে। আমার সুযোগ থাকলে এ বিষয়ে আমি অবশ্যই কথা বলবো।’
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীকে কয়েকবার টেলিফোন করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী নোটিশের জবাব দেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এসএমএন