রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘ম্যাঙ্গো ট্যুর’
২৬ জুন ২০১৯ ০৭:৪২
রাজশাহী: ঈদের ছুটি শেষ হবার পর থেকেই বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ আসতে শুরু করেছেন আমের শহরে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এই সফরের কারণ তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে সরাসরি বাগান থেকে কীটনাশকমুক্ত আম খাওয়া ও আম কেনা। এই কারণে এমন সফরের নাম দেওয়া হচ্ছে ম্যাঙ্গো ট্যুর। দাপ্তরিক কাজের অংশ হিসেবে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তারাও যাচ্ছেন আম বাগান পরিদর্শনে।
ম্যাঙ্গো ট্যুরে সাপ্তাহিক ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়েও আসছেন অনেকে। ফলে আবাসিক হোটেলগুলোতে জায়গা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে যাদের নানা বাড়ি, মামা বাড়ি বা কোনো স্বজন থাকেন রাজশাহী বা চাঁপাইনবাবগঞ্জে তারাও এই সুযোগে সেসব বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন। বেড়ানো বা কাজ শেষে ফেরার পথে সবাই এক ঝুড়ি হলেও আম নিয়ে যাচ্ছেন।
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত মাহাবুব জামান রিংকুর বাড়ি খুলনায়। বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে খালার বাড়ি বেড়াতে এসেছেন বাবাকে নিয়ে। তবে এই বেড়াতে আসার মূল উদ্দেশ্য আম কেনা। শনিবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজারে আম কেনার সময় কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলছিলেন, বছরের অন্যান্য সময় তেমনভাবে আসা না হলেও আমের মৌসুমে কখনও মাকে নিয়ে আবার কখনও বাবাকে নিয়ে বেড়াতে আসেন। থাকেন দু’তিন দিন। তারপর নিজের পরিবারের জন্য, স্বজনদের জন্য আম কিনে নিয়ে যান। এবারো চার মন আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
রিংকুর দাবি, গত বছরের তুলনায় এবারের আমের দাম কিছুটা হলেও বেশি। গত বছর এই সময় খিরসাপাত আম কিনেছেন ৩ হাজার ২শ টাকা মন। সেখানে এবার কিনতে হচ্ছে ৩ হাজার ৬শ টাকা মন। তাও প্রচুর দামাদামি করতে হচ্ছে।
রাজশাহী মহানগরীর শালবাগানে কথা হলো সিরাজগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে আসা শরিফ ও মাসুদের সাথে। তারা জানালেন রমজান মাসেই তারা দশ বন্ধু পরিকল্পনা করছিলেন মাইক্রোবাস ভাড়া করে এবার রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের সময় ট্যুর করবেন।
রাজশাহী বাজার ও বাগান, দুই জায়গাতেই চলছে সমান তালে আম বেচাকেনা। ক্রেতাদের মধ্যে যাদের নিজস্ব গাড়ি রয়েছে তাদের তেমন কোনো সমস্যা না হলেও অন্যান্যদের গাঁটের পয়সার একটা অংশ নিয়ে নিচ্ছে কুলি, ভ্যান বা রিকশাচালক, যাত্রীবাহী বাস, রেলগাড়ী। সব জায়গাতেই অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। আর এই আমের ঝুড়ি বা কার্টনের কারণে ট্রেনের বাঙ্কার, বিভিন্ন রুটের দুরপাল্লার গাড়ির বক্সগুলো থাকছে ভর্তি। সেই সঙ্গে জেলা শহরগুলোর কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসগুলোতেও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে আম বুকিং।
রাজশাহী মহানগরীর রেলগেট এলাকার আবাসিক হোটেল ডালাসের ম্যানেজার আলমগীর জানান, আমের মৌসুমের কারণের হোটেলে অতিথির কিছুটা হলেও বেশি। তবে তার দাবি, ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না। এসি সিঙ্গেল রুম ১৫০০ টাকা, ডাবল ২৫০০ টাকা, নন এসি সিঙ্গেল ৭০০ টাকা ও ডাবল ১৩০০ টাকা। বেশিরভাগ অতিথিই অনেকে আগে থেকে বুকিং দিয়ে তারপর আসছেন।
রাজশাহীর ঢাকা বাস টার্মিনালের আম ব্যবসায়ী মনির শেখ জানান, সপ্তাহের অন্যান্য দিন ভিড় যা থাকে ছুটির দিন থাকে তার চেয়ে বেশি। একেক জন কমপক্ষে ২০ কেজি ওজনের দু থেকে তিন ঝুড়ি করে আম কেনেন। বিশেষ করে ল্যাংড়া, আম্রপলির চাহিদা বেশি। এখন যত দিন যাচ্ছে আমের দাম ততই বাড়ছে। বর্তমানে ল্যাংড়া ২৮’শ থেকে ২৯’শ টাকা, আম্রপলি ৩০০০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এবার কুরিয়ার সার্ভিসে আম পাঠানোর ধরনও পাল্টেছে। করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ফিরোজ আহম্মেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এর আগের বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমের ঝুড়ি বা কার্টন পৌঁছে দেওয়া হতো। কিন্ত গত দুই বছর থেকে তা আর সম্ভব হচ্ছেনা। নির্দিষ্ট ঠিকানার কাছাকাছি কুরিয়ার সার্ভিসের অফিস থেকে গ্রাহকদের নিজেদেরই ফলের ঝুড়ি সংগ্রহ করতে যেতে হচ্ছে। মূলত ঝামেলা এড়ানো ও ঝুড়ি বা কার্টুন হারিয়ে যাবার ভয় থেকে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।
কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিস ঘুরে দেখা গেল, এ বছর ১০ কেজির একটি ঝুড়ির জন্য কুরিয়ার চার্য নেওয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা। যা গত বছরও ছিল ১৪০ থেকে ১৮০টাকা।
সারাবাংলা/জেএএম