‘রোহিঙ্গারা ফিরে না গেলে স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’
২৬ জুন ২০১৯ ১৯:৫৪
সংসদ ভবন থেকে: মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে না পারলে দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কারণে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকার স্থায়ী সমাধানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২৬ জুন) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ আশঙ্কার কথা জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উপস্থাপন করেন স্পিকার।
আরও পড়ুন- ‘৫ বছরে দেড় কোটি কর্মসংস্থান তৈরি করবে সরকার’
সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ অব্যহত থাকলেও মিয়ানমার তাদের ফেরত নিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে তিনটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তিগুলোর একটিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখও আছে— দুই বছরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। তবু মিয়ানমার সরকার বিভিন্ন ধরনের তালবাহানার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করছে।
সংসদ নেতা বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত না পাঠাতে পারলে আমাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে প্রথম থেকেই একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারে তৈরি ঘরবাড়ি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছর আগস্টে মিয়ানমার সফর করেন। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করার জন্য এরই মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে দুই দেশের সম্মতিতে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে গত বছর ২৫ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মিয়ানমারে সহায়ক পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকরা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে রাজি হয়নি। ফলে ২৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়নি।
‘চুক্তিতে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, এসব বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার অধিবাসীদের নিরাপত্তা, সম্মান ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। চুক্তির এ আদর্শ ও মূলবাণী বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সরকারকেই উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। কারণ মিয়ানমার সরকার নিজেরাই এ সমস্যা তৈরি করেছে।
বিশ্ব জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনে একটি প্রতিবেদনও পাঠিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাদেরকে এ বিষয়ে কাজ করতে দিচ্ছে না। মিয়ানমারের অসহযোগিতা সত্ত্বেও আমরা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক দুইটি পথই খোলা রেখেছি। বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পররাষ্ট্র নীতি অনুযায়ী সব বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ফাইল ছবি
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনআর/টিআর