প্রস্তুতি পর্বেই ‘ধরা’ বিএনপি
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৮:১২
আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি পর্বেই ‘ধরা’ খেয়েছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার রায়কে ইস্যু করে নির্বাচনের বছর মাঠ গরমের যে প্রস্তুতি শুরু করেছিল সেটির প্রথম ধাপেই প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছে দলটি। পুলিশের ওপর হামলা করে প্রিজন ভ্যান থেকে আটক কর্মী ছিনিয়ে নেওয়ার পর সাঁড়াশি অভিযান শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বিএনপি নেতারা।
সূত্র মতে, দীর্ঘ দিন আন্দোলন-সংগ্রামের বাইরে থাকা বিএনপি আরেকটু দেখে-শুনে আন্দোলনে নামার চিন্তা-ভাবনা করছিল। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার পথ খোলা রাখতে চলতি বছরের জুন-জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছিল দলটি।
কিন্তু হঠাৎ খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ হওয়ায় নড়ে-চড়ে বসতে হয় বিএনপিকে। রায়ের সম্ভব্য ‘ফল’ নেতিবাচক ধরে নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে দ্রুত কর্মকৌশল ঠিক করেন খালেদা জিয়া।
জোট শরিকদের ডেকে তাদের মতামত গ্রহণ করেন। বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে রায় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্রিফ করেন শীর্ষ নেতারা। তৃণমূলে পাঠানো হয় বিশেষ বার্তা। ডাকা হয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা। গুলশান কার্যালয়ে চলতে থাকে শীর্ষ নেতাদের দফায় দফায় বৈঠক। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিদেশ সফরসহ ব্যক্তিগত সব কাজ বন্ধ করে দিয়ে খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।
পরিকল্পনা মাফিক সব কিছু ঠিক-ঠাক মতোই এগোচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ বাঁধ সাধল হাইকোর্টের সামনে প্রিজন ভ্যান থেকে আটক কর্মী ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা। ৩০ জানুয়ারি আদালতে হাজিরা শেষে খালেদা জিয়া বাসায় ফেরার সময় এ ঘটনা ঘটায় ছাত্রদলের অতি উৎসাহী কিছু কর্মী। বিপদে ফেলে দেয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা হয়ে থাকা বিএনপিকে।
কয়েকজন অপরিণামদর্শী কর্মীর হঠকারী কর্মকাণ্ডের ফলে দলের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ হোসেনসহ প্রায় পৌনে ৩ শ’ নেতা-কর্মী।
সূত্র মতে, ছাত্রদলের যে কর্মীগুলো পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের ওপর প্রচণ্ড রকম খেপেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। কখন কী করতে হবে, সেটা না বুঝিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে পুরো দলকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ায় বিএনপির শীর্ষ নেতারা এখন বিব্রত! সাজানো-গোছানো পরিকল্পনা হঠাৎ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কোনো কুল-কিনারা পাচ্ছে না তারা।
ঘটনার পরের দিন সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘ছেলেদেরকে আমরা নিজেরাই চিনতে পারছি না বলে’ দায় এড়াবার চেষ্টা করলেও পুলিশের ওপর হামলাকারী ছাত্রদল নেতাদের নাম ঠিকানা জোগার করে ফেলেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রিজন ভ্যানের তালা ভাঙ্গার সঙ্গে জড়িত মাহমুদ হাসান ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) ছাত্রদলের নেতা, মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল ছাত্রদলের নেতা আর শফিকুল ইসলাম এসএম হলের ছাত্রদল নেতা। এদের মধ্যে মামুনের গ্রামের বাড়ি বরিশাল। ঢাকায় আজীমপুরে থাকেন। শফিকুলের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ। ঢাকায় থাকেন মালিবাগ এলাকায়।
এই তিন ছাত্রদল নেতা এবং হাফিজ নামে এক যুবদল নেতার সহিংস কর্মকাণ্ড আন্দোলনের সূচনা পর্বেই বিএনপিকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সে দিনের ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায়। এরই মধ্যে সভায় যোগ দিতে তৃণমূল থেকে ঢাকায় আসা নেতাদেরমধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
ফলে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার সফলতা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বিএনপির হাইকমান্ড। সভা সফল করার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও শেষ পর্যন্ত কী হবে, সেটি বলতে পারছেন না বিএনপির নেতারা।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখনো জানিনা নির্বাহী কমিটির সভার ভাগ্যে কী রয়েছে। সরকারের যে আচরণ,তাতে সভাটাকে ভালমতো শেষ না করা পর্যন্ত আমরা স্বস্তি পাচ্ছি না।
সারাবাংলা/এজেড/টিএম