গলদায় লোকসান, বাগদা চিংড়ি চাষে ঝুঁকছে চাষি
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৮:৫২
জামাল হোসেন বাপ্পা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
বাগেরহাট: বাগেরহাটের সাদা সোনাখ্যাত গলদা চিংড়ির দাম কেজিতে ৩০০ টাকার বেশি কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। জেলার প্রায় ৪৩ হাজার চাষি ২০ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করেন। হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে স্থানীয় চাষিদের।
সরেজমিনে জানা গেছে, সাধারণত ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে চিংড়ি চাষিরা নতুন ঘের প্রস্তুত করেন। এ সময় তারা সব চিংড়ি বাজারে বিক্রি করে দেন। কিন্তু মন্দার কারণে অনেক চাষি চিংড়ি ধরা বন্ধ রেখেছেন। কেউ আবার লোকসানে চিংড়ি বিক্রি করেছেন। গলদা চাষের জন্য অধিকাংশ চাষি এখনও ঘের প্রস্তুত করেনি। তবে চাষিরা এবার গলদার পরিবর্তে বাগদা চিংড়ি চাষে ঝুঁকছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার চিংড়ি চাষি আব্দুল হালিম মহুরী জানান, গলদা চাষে ঝুঁকি বেশি। এবার দাম পড়ে গেছে তাই গলদার পরিবর্তে বাগদার চাষ শুরু করেছি। ঘেরে রেনু পোনা ছাড়া শুরু হয়েছে। আর গলদার রেনু ছাড়ার সময় এখনও ২/৩ মাস বাকি আছে।
বাগেরহাট চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত। বাজারে গলদা চিংড়ির দাম কেজিতে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ছে চাষি। এর আগে অতিবৃষ্টিতে প্রায় ১১ হাজার ঘের ভেসে গেছে। একই সঙ্গে বাগদা চিংড়িতে ভাইরাস সংক্রমণেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য অনেক চাষি ব্যাংক, এনজিও ও মহাজনের সুদের টাকা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের শ্রীঘাট গ্রামের শেখ লিয়াকত আলী জানান, রফতানির জন্য চিংড়িগুলোকে বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করা হয়। প্রথম গ্রেডের বর্তমান দর ৭৫০ টাকা। মাস তিনেক আগে দাম ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। ১০ম গ্রেডের দাম ৯৫০ টাকা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৬৫০ টাকায়।
চিংড়ি চাষি আব্দুল বারেক পাইক বলেন, ‘১২ বিঘা জমিতে ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঝণ নিয়ে গলদা চাষ করছি। সব মিলিয়ে খরচ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। মৌসুম শুরু হলেও দাম পড়ে যাওয়ায় মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। বাজার এ রকম থাকলে ঝণের টাকা কিভাবে শোধ করব আর সংসার কিভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’
বারাকপুর মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন জানান, এজেন্টরা আমাদের যেভাবে বুঝান সেভাবেই চিংড়ির বাজারটা চলছে। দাম বাড়া-কমায় সরকারের মৎস্য বিভাগের তদারকি না থাকায় তারা এ সুযোগ নিয়ে যাচ্ছে। চিংড়িশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিয়া হায়দার বলেন, যুক্তরাজ্যসহ আমদানিকারক দেশগুলোয় অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চিংড়ির দাম পড়ে গেছে। তবে শিগগিরই দাম আবার আগের জায়গায় ফিরবে।
সারাবাংলা/ জেএইচ/এমএইচ